Bangla




"সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম"___ আমাদের নাবি ও রসুল সালামুন আলা মুহামমাদের নামের পরে পাঠ করা প্রচলিত দুরুদ ( সালাম অর্থাত দুআ করা ) নামক এই বাক্যটি,
সললুর সাথে 'আল্লাহ' নামটি যোগ করে,
পারা ২২, সুরহ আহযাব, সুরহ নমবর ৩৩, আ-ইয়াত নম্বর ৫৬র শেষ অংশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
আমাদের জানা থাকা উচিত যে দুরুদ, নামায ও রোযা এই তিনটি শব্দ আরবি ভাষা নয়। দুরুদ, নামায, রোযা এই তিনটিই ফারসি ভাষার শব্দ। দুরুদের আরবি অর্থ সালাম জানানো অর্থাত কল্যানের জন্য দুআ করা, নামাযের আরবি অর্থ সলাহ এবং রোযার আরবি অর্থ সি-ইয়াম এবং ফারদ সিইয়ামের মাসের নাম রমাদন। সিইয়ামের শাব্দিক অর্থ খাদ্য গ্রহন ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থাকা।
প্রচলিত সালামের বিপরিতে সহজ উচ্চারন ও ছোট হওয়ায় পারা ১৯, সুরহ নামাল, সুরহ নম্বর ২৭, পাঁচ নম্বর রুকুর ৫৯ নম্বর আইয়াত এবং পারা ২৩, সুরহ সফফাত, সুরহ নমবর ৩৭, তিন, চার ও পাঁচ নমবর আইন বা রুকুর ৭৯, ১০৯, ১২০, ১৩০ ও ১৮১ নমবর আইয়াত সমুহের নিয়মে সালামুন আলা পাঠ করা যায়।
সালামুন অর্থ আল্লাহ র শান্তি এবং আলা অর্থ তাঁর প্রতি।
সল্লাল্লাহু অর্থ আল্লাহ র ভালোবাসা, ক্ষমা, দয়া, করুনা,
আলায়হি অর্থ তাঁর বা নাবির প্রতি,
ওয়া অর্থ এবং,
সালাম বা সাল্লাম অর্থ আল্লাহ র শান্তি।
সুরহ নম্বর ৬৪, সুরহ তা-গ-বুনের  ১৩ নমবর আইয়াহতের ব্যাকরন রিতিতে (পরিভাষা) "আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া" অথবা সুরহ নম্বর ৪৭, সুরহ মুহামমাদের ১৯ নম্বর বাক্যের ব্যাকরন রিতিতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন স্রষ্ঠা নেই। লা অর্থ নাই, ইলাহা অর্থ স্রষ্ঠা বা সৃষ্ঠিকর্তা, ইল্লাল্লাহ বাক্যের মধ্যে দুইটি শব্দ আছে, ইল্লা+আল্লাহ, ইল্লা অর্থ ছাড়া বা ব্যতিত। হুওয়া ( হা দামমাহ+ওয়া ফাতাহ= হুওয়া। ) অর্থ আপনি বা তিনি। অর্থাত "আল্লাহ! নেই স্রষ্ঠা ব্যতিত আপনি" এবং "নেই স্রষ্ঠা ব্যতিত আল্লাহ"। এই সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র বাক্যটি উভয় আরবি ব্যাকরন পদ্ধতিতেই পাঠ করা যায়। আরবিতে 'লা' শব্দটির বিপরিতে 'হ্যা' শব্দটিকে 'নাআম' বলে। ( নাআম শব্দটি সুরহ أَعْرَافِ আ-রফ, সুরহ নম্বর সাতের ৪৪ নমবর আইয়াতে আছে। ) নামায শব্দটিকে কুরআনে ও আরবি ভাষায় সলাহ বলে। সলাহ অর্থ আল্লাহ কে স্মরন করা বা আল্লাহ র ইবাদাহ করা। সলাহ চব্বিশ ঘন্টায় করতে হবে। তবে পাঁচ সময়ের আনুষ্ঠানিক সলাহ ফারদ বা আবশ্যক। আমি যতটুকু বুঝি তা হলো সলাহ শব্দটি থেকেই সললু ও 'সল্লাল্লাহু' বাক্যদ্বয় এসেছে। লক্ষ্য করবেন সাধারন মুসলিম তো বটেই অনেক আলিমগনও 'সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম' বাক্যটি সঠিক উচ্চারনে বলেন না এবং তাড়াহুড়ো করে পড়ে থাকেন। যা মোটেই উচিত নয় কারন তাতে সাওয়াব না হয়ে বিপরিত হয়। এই বিবেচনায় 'সালামুন আলা' পড়া উত্তম কারন এই বাক্যে ভুল করার সুযোগ কম। সিন+লাম+মিম+আইন+লাম=সালামুন আলা। আমরা পাঁচ সময়ের সলাহতে প্রতি রকাআহতে সুরহ ফাতিহা পাঠ করার পর 'আমিন' أَمِيْنٌ বলে থাকি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, আরবি ভাষায় আমিন শব্দের দুই রকম অর্থ আছে। যদিও আমি নিশ্চিত নই এই দুই 'আমিন' প্রতিশব্দ নাকি বিপরিত শব্দ। কারন মানুষ তার বিশ্বাসের জায়গাটিতে অন্ধই হয়ে থাকে। তাই আমার ধারনা এটি প্রতিশব্দ। প্রথমটি হলো যেটি আমরা সুরহ ফাতিহাতে পড়ি, হামজা (আলিফ অক্ষরটিই হলো হামজা) অক্ষর দিয়ে শব্দ গঠন করি, যার অর্থ হয় বিশ্বস্ত অর্থাত যাকে বিশ্বাস করা যায়। ( দেখুন সুরহ আরফের ৬৮ নমবর আইয়াতের শেষ শব্দটি ) আর আইন অক্ষর দিয়ে আমিন শব্দটি গঠন করা হলে তার অর্থ হলো অন্ধ ব্যক্তি আর এই আইয়াতে কুরআনের ভাষায় এই আমিনের অর্থ হলো, যে ব্যক্তি তার বিশ্বাসের জায়গা অর্থাত মন থেকে কুরআনের আলো বা কল্যান দেখতে চায় না বা দেখতে পায় না। ( দেখুন সুরহ আরফের ৬৪ নমবর আইয়াতের শেষ শব্দটি। ) আল আযান অর্থ  হলো নির্দিষ্ঠ কিছু বাক্য দিয়ে সলাহতের সময় আরম্ভ হবার ঘোষনা দেওয়া এবং আল ই-ক-মাহ অর্থ হলো জোটবদ্ধ সলাহ আরম্ভ হওয়ার ঘোষনা করা।  আল্লাহ আমাদের ইসলামি আলোচনার অনিচ্ছাকৃত ভুলসমুহ মাফ করুন।
أَلْحَمْدُلِلَّهْ

আল্লাহ র নিকট শায়তনের অনিষ্ঠ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
দয়াময় আল্লাহ র নামে।

إِنَّ أ للَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ

উচ্চারনঃ ইন্নাল্লাহা বিন্নাসি লা-র-উু-ফুর রহিম।
অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশিল ও দয়াময়।
সুরহ বাকারহ-২, আইয়াত ১৪৩ এবং সুরহ আল হাজ-২২, আইয়াহ নমবর ৬৫, উভয় বাক্যের শেষ অংশ।

আবার কেউ বলে, আমার রব আল্লাহ! আপনি আমাকে দুনইয়াতে কল্যান দিন, আখিরতে কল্যান দিন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
সুরহ বাকারহ, আইয়াত নম্বর ২০১।

 মানুষ কুরআন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে না কেন? যদি এই কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সম্পাদন করতো বা লিখতো তাহলে মানুষ এই কুরআনের মধ্যে অনেক অসংগতি দেখতে পেতো।
সুরহ নিসা-৪, আইয়াত নমবর ৮২।

নিশ্চিত জেনে রাখো যে, আল্লাহ শাস্তি দানের ব্যাপারে যেমন কঠোর তেমনই আল্লাহ ক্ষমাশিল ও করুনাময়।
সুরহ মা-ইদাহ-৫, আইয়াত নম্বর ৯৮।

( সালামুন আলা ইবরহিম বলেন ) আমি আন্তরিক ৰিশ্বাসের সাথে সেই মহান সত্তা এক আল্লাহ র দিকে মুখ করেছি যিনি সকল আসমান ও পৃথিবি সৃষ্ঠি করেছেন এবং আমি কখনই মুশরিকদের অন্তরভুক্ত নই।
সুরহ আনআম-৬, আইয়াহ নমবর ৭৯।

একমাত্র একক আল্লাহ কে ডাকাই তো সঠিক। কারন আল্লাহ কে বাদ দিয়ে মানুষ ও জ্বিন অন্য যেসকল সত্তাকে ডাকে তারা তাদের ডাকে সাড়া দিতে অক্ষম। তাদেরকে ডাকার উপমা এমন যে, যদি কোন পিপাসা কাতর ব্যক্তি (হাত,পা ব্যবহার না করে) পানিকে বলে যে, 'হে পানি, তুমি আমার মুখে প্রবেশ করো।' অথচ পানি কখনই তার মুখে পৌছাতে সক্ষম নয়। ঠিক এইভাবেই কাফিরের দুআ একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট তির ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুরহ  ألرَّعْدُ সুরহ নম্বর ১৩, আইয়াহ ১৪, পারা ১৩।

(সালামুন আলা ইবরহিম বলেন) সত্যিই আমার রব আল্লাহ দুআ শুনে থাকেন। আমার রব আল্লাহ! আমাকে এবং আমার বংশধর ও অনুসারিদেরকে সলাহ প্রতিষ্ঠাকারি করুন। রব! আমার দুআ সত্য করে দিন। ( বা কবুল করুন। কবুল আরবি শব্দ। এই আইয়াতের আরবি কববাল শব্দটি থেকেই কবুল শব্দটি এসেছে। ) রব! যেদিন আপনি হিসাব নিবেন সেই দিন আমাকে, আমার মাতাপিতাকে এবং সকল মুমিনদেরকে মাফ করে দিন।
সুরহ ইবরহিম, সুরহ নম্বর ১৪, পারা ১৩, আইয়াহ নম্বর ৩৯ এর শেষ অংশ এবং ৪০-৪১।

দয়া ও কোমলতা সহকারে পিতা মাতার সামনে বিনম্র থাকো আর আল্লাহ র নিকট দুআ করতে থাকো এই বলে যেঃ আমার রব আল্লাহ! আমার পিতা মাতার প্রতি দয়া করুন যেমন তাঁরা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।
সুরহ বানি ইস-র-ঈল, সুরহ নম্বর ১৭, আইয়াত ২৪।

আর দুআ করোঃ আমার রব আল্লাহ! আমাকে যেখানেই আপনি নিয়ে যাবেন সত্যতার সাথে নিয়ে যান এবং যেখান থেকেই বের করবেন সত্যতার সাথে বের করুন এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশিল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারি করে দিন।
 সুরহ বানি-ইস-র-ঈল, আইয়াত ৮০।

আল্লাহ বলেন___ শান্তি তাঁর (নাবি ইয়াহ ইয়া) প্রতি যেদিন সে জন্মগ্রহন করেছিল অতঃপর যেদিন সে মৃত্যুবরণ করে আর যেদিন তাঁকে জিবিত করে উঠানো হবে।
সুরহ মারইয়াম, সুরহ নম্বর ১৯, আইয়াত ১৫, পারা ১৬।

( শিশু নাবি সালামুন আলা ইসাবনু মারইয়ামা বলেন ) আল্লাহ র শান্তি আমার প্রতি যেদিন আমি (পিতা ছাড়াই) জন্ম গ্রহন করেছিলাম অতঃপর যেদিন আমার মৃত্যু হবে অতঃপর যেদিন (কি-ইয়ামাহ) আল্লাহ আমাকে পুনরায় জিবিত করে উঠাবেন।
সুরহ মারইয়াম, আইয়াহ ৩৩।

অবশ্যই আল্লাহ নাবি মুহামমাদকে অনুগ্রহ, দয়া ও ক্ষমা করেন। মালা-ইকাহরাও নাবির জন্য আল্লাহ র নিকট দুআ করে। ওহে ইমানদারগন, তোমরাও নাবির জন্য আল্লাহ র নিকট দুআ করো।
সুরহ আহযাব-৩৩, আইয়াহ নমবর ৫৬।

আল্লাহ বলেন___ কুরআনকে মানুষের জন্য উপদেশ গ্রহনের সহজ মাধ্যম করে দেওয়া হয়েছে, এখন উপদেশ গ্রহনকারি কেউ আছে কি?"
সুরহ আল কমার, সুরহ নম্বর ৫৪, আ-ইয়াত নমবর ১৭, ২২, ৩২, ৪০, পারা সাতাশ।
কমার অর্থ চাদ।

(হে নাবি) আল্লাহ র অবাধ্য আবদদেরকে জিজ্ঞাসা করো যে, তোমরা কি কখনও এই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে দেখেছো যে, যদি তোমাদের কুয়াগুলো অথবা অন্যান্য পানি উত্তোলনের স্তর সমুহ মাটির গভিরে  নেমে যায় তখন পানির এই বহমান স্রোত তোমাদের রব এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্তা আছে কি, যিনি এই পানি ফিরিয়ে এনে দিতে সক্ষম?
সুরহ ألْمُلْكُ সুরহ নম্বর ৬৭, আইয়াহ ৩০, পারা ২৯।

আল্লাহ বলেন___ কাফিররা যখন কুরআনের উপদেশ বাণি শোনে তখন এমনভাবে (নাবি সালামুন আলা মুহাম্মাদ) তোমার দিকে তাকায় যেন তোমার পদযুগল উৎপাটিত করে ফেলবে, আর বলে যে এই ব্যক্তি অবশ্যই পাগল। অথচ এই কুরআন বিশ্ববাসির জন্য উপদেশ ও সাবধান বাণি ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুরহ কলাম, সুরহ নম্বর ৬৮, আইয়াত ৫১ ও ৫২, পারা ২৯।
__________________________

সর্বশেষ সংশোধন মার্চ ২০১৭ ইংলিশ সন। 
___________________________

Popular posts from this blog

কুরআন থেকে আমাদের স্রষ্টা এক আললাহ র আদেশ নিষেধের জ্ঞান অর্জন করে, বাস্তবায়ন করি

কুরআনই হাদিস

কুরআন থেকে সালামুন আলা মুসার জিবনি শিক্ষা করি