কুরআন থেকে আমাদের স্রষ্টা এক আললাহ র আদেশ নিষেধের জ্ঞান অর্জন করে, বাস্তবায়ন করি

২ নম্বর, সুরহ বা-ক-রহঃ ২৫৫) আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন , তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷  তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না।পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর ৷  কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কর্তৃত্ব  আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা। 

২) এটি 'আললাহ র' কুরআন/কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। এটি হিদায়াত ( হিদাইয়াত অর্থ জিবন কি ও কেন? জিবন কিভাবে পরিচালিত করতে হবে সেই শিক্ষা দেয়। তাই প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন অর্থসহ বুঝে পাঠ করতে হবে। নয়তো পাপ হবে ) সেই ‘মুত্তাকী’দের জন্য ৩) যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সলাহ প্রতিষ্টা করে ৪) এবং যে রিযিক আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। আর যে কিতাব তোমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন) এবং তোমার আগে যেসব কিতাব নাযিল করা হয়েছিল সে সবগুলোর ওপর ঈমান আনে আর আখিরতে/ মৃত্যুর পরের জিবনে বিশ্বাস করে। ৫) এ ধরনের লোকেরা তাদের রবের পক্ষ থেকে সরল সত্য পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারা কল্যান লাভের অধিকারী। ৬) যেসব লোক (একথাগুলো মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে, তাদের জন্য সমান –তোমরা তাদের সতর্ক করো বা না করো, তারা মেনে নেবে না। ৭) আললাহ তাদের হৃদয়ে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তাদের চোখের ওপর আবরণ পড়ে গেছে। তারা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। ( কারন তারা অহংকারি। তারা নিজের দেহ ও জিবন দানকারি স্রষ্টা এক আললাহ কে অস্বিকার করে ) ২৭) আর তিনি গোমরাহীর মধ্যে তাদেরকেই নিক্ষেপ করেন যারা ফাসেক, যারা আললাহ র সাথে মজবুতভাবে অংগীকার করার পর আবার তা ভেঙ্গে ফেলে, আললাহ যাকে জোড়ার হুকুম দিয়েছেন তাকে কেটে ফেলে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে চলে। আসলে এরাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

৬৫ নম্বর সুরহ তলাকঃ ১) হে নাবি, তোমরা স্ত্রীলোকদের তালাক দিলে তাদেরকে তাদের ইদ্দতের জন্য তালাক দাও এবং ইদ্দতের সময়টা ঠিকমত গণণা করো আর তোমাদের রব আললাহ কে' ভয় করো ( সুরহ বা-ক-রহের ২২৬ নম্বর হাদিস মতে ইদ্দতকাল চার মাস। এই সময়ে) তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ী থেকে বের করে দিও না। তারা নিজেরাও যেন বের না হয়। তবে তারা যদি স্পষ্ট অশ্লীল কাজ করে তবে ভিন্ন কথা। এগুলো আললাহ র' নির্ধারিত সীমা। যে আললাহ র' সীমাসমূহ লংঘন করবে সে নিজেই নিজের ওপর জুলুম করবে। তোমরা জান না আললাহ হয়তো এরপরে সমঝোতার কোন উপায় সৃষ্টি করে দেবেন। ২) এরপর তারা যখন তাদের (ইদ্দতের) সময়ের সমাপ্তির পর্যায়ে পৌঁছবে তখন হয় তাদেরকে ভালভাবে (বিবাহ বন্ধনে ) আবদ্ধ রাখো, নয়তো ভালভাবেই তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাও। এমন দুই ব্যক্তিকে সাক্ষী বানাও তোমাদের মধ্যে যারা ন্যায়বান। হে সাক্ষীরা, আললাহ র' জন্য সঠিকভাবে সাক্ষ দাও। যারা আললাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে তাদের জন্য উপদেশ হিসেবে এসব কথা বলা হচ্ছে৷ যে ব্যক্তিই আললাহ কে' ভয় করে চলবে আললাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন। ৩) এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আললাহ র' ওপর নির্ভর করে আললাহ তার জন্য যথেষ্ট। আললাহ তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন। আললাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য একটা মাত্রা ঠিক করে রেখেছেন। ৪) তোমাদের যেসকল স্ত্রীলোকের মাসিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের ব্যাপারে যদি তোমাদের সন্দেহ হয় তাহলে (জেনে নাও যে,) তাদের ইদ্দতকাল তিন মাস। আর এখনো যাদের মাসিক হয়নি তাদের জন্যও একই নির্দেশ। গর্ভবতী মহিলাদের ইদ্দতের সীমা সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে ব্যক্তি আললাহ কে' ভয় করে তিনি তার কাজ সহজসাধ্য করে দেন। ৫) এটা আললাহ র' বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে আললাহ কে' ভয় করবে আললাহ তার গোনাহসমূহ মুছে ফেলবেন এবং তাকে বড় পুরস্কার দেবেন। ৬) তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যে রকম বাসগৃহে থাক তাদেরকেও (ইদ্দতকালে) সেখানে থাকতে দাও। তাদেরকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য উত্যক্ত করো না। আর তারা গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য খরচ করো। তারপর তারা যদি তোমাদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করায় তাহলে তাদেরকে তার বিনিময় দাও এবং (বিনিময়দানের বিষয়টি) তোমাদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তম পন্থায় ঠিক করে নাও। কিন্তু (বিনিময় ঠিক করতে গিয়ে) তোমরা যদি একে অপরকে কষ্টকর অবস্থার মধ্যে ফেলতে চেয়ে থাক তাহলে অন্য মহিলা বাচ্চাকে দুধ পান করাবে। ৭) সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা অনুপাতে খরচ করবে। আর যাকে স্বল্প পরিমাণ রিযিক দেয়া হয়েছে সে আললাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচ করবে। আললাহ যাকে যতটা সামর্থ দিয়েছেন। তার চেয়ে অধিক দায়িত্ব তিনি তার ওপর চাপান না। অসম্ভব নয় যে, অসচ্ছলতার পর আললাহ তাকে সচ্ছলতা দান করবেন। ১১) এমন এক রসূল, তিনি তোমাদেরকে আললাহ র' আয়াত পড়ে শোনান, যা তোমাদের সুস্পষ্ট হিদায়াত দান করে। যাতে তিনি ঈমান গ্রহণকারী ও সৎকর্মশীলদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে আসেন। যে ব্যক্তিই আললাহ র' প্রতি ঈমান আনবে এবং নেককাজ করবে আললাহ তাকে এমন সব জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার নীচে দিয়ে ঝরণা বয়ে চলবে। এসব লোক সেখানে চিরদিন থাকবে। এসব লোকের জন্য আললাহ সর্বোত্তম রিযিক রেখেছেন।

৭৪ নম্বর, সুরহ আল মুদ্দাসসিরুঃ ৩) তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, ৪) তোমার পোশাক পবিত্র রাখো, ৫) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো, ৬) বেশী লাভ করার জন্য ইহসান করো না। ৭) এবং তোমার রবের জন্য ধৈর্য অবলম্বন করো। ১১) আখিরত দিবসে আললাহ বলবেন, আমি তার বিচার করবো, যাকে আমি একা সৃষ্টি করেছি। ১২) তাকে অঢেল সম্পদ দিয়েছিলাম। ১৩) এবং আরো দিয়েছি সবসময় কাছে থাকার মত অনেক পুত্র সন্তান। ১৪) তার নেতৃত্বের পথ সহজ করে দিয়েছিলাম। ১৫) এরপরও সে লালায়িত ছিল, আমি যেন তাকে আরো বেশী দান করি। ১৬) তা কখনো নয়, সে আমার আয়াতসমূহের সাথে শত্রুতা পোষণ করেছিল। ২০) আবার অভিশপ্ত হোক সে ,সে কি ধরনের ফন্দি উদ্ভাবনের চেষ্টা করলো? ২১) অতপর সে মানুষের দিকে চেয়ে দেখলো। ২২) তারপর ভ্রুকুঞ্চিত করলো এবং চেহারা বিকৃত করলো ২৩) অতপর পেছন ফিরলো এবং দম্ভ প্রকাশ করলো। ২৪) অবশেষে বললোঃ এই কুরআন তো এক চিরাচরিত যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। ২৫) এ তো মানুষের কথা মাত্র। ২৬) শিগগিরই আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। ২৭) তুমি কি জানো ,সে জাহান্নাম কি? ২৮) যা জীবিত রাখবে না, আবার একেবারে মৃত করেও ছাড়বে না। ২৯) গায়ের চামড়া ঝলসিয়ে দেবে। ৩০) সেখানে নিয়োজিত আছে উনিশ জন কর্মচারী। ৩১) আমি মালা-ইকাহদের জাহান্নামের কর্মচারী বানিয়েছি এবং তাদের সংখ্যাকে কাফিরদের জন্য ফিতনা বানিয়ে দিয়েছি। যাতে আহলে কিতাবদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। ঈমানদারদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, আহলে কিতাব ও ঈমানদাররা সন্দেহ পোষণ না করে।আর যাদের মনে রোগ আছে তারা এবং কাফিররা যেন বলে, এ অভিনব কথা দ্বারা আললাহ কি বুঝাতে চেয়েছেন? এভাবে আললাহ যাকে চান প্রথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদয়াত দান করেন।  তোমার রবের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ অবহিত নয়। আর জাহান্নামের এই বর্ণনা এছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যই নয় যে, মানুষ তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে। ৪১) সেখানে তারা অপরাধীদের জিজ্ঞসা করতে থাকবে ৪২) কিসে তোমাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করলো? ৪৩) তারা বলবোঃ আমরা সলাহ পড়তাম না। ৪৪) অভাবীদের খাবার দিতাম না। ৪৫) সত্যের বিরুদ্ধে অপবাদ রটনাকারীদের সাথে মিলে আমরাও রটনা করতাম। ৪৬) প্রতিফল দিবস মিথ্যা মনে করতাম। ৪৭) শেষ পর্যন্ত আমরা সে নিশ্চিত জিনিসের মুখোমুখি হয়েছি। ৪৮) সে সময় সুপারিশকারীদের কোন সুপারিশ তাদের কাজে আসবে না। ৪৯) এদের হলো কি যে এরা কুরআনের উপদেশ বাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? ৫০) যেন তারা বাঘের ভয়ে ৫১) পালায়নপর বন্য গাধা। 

৮৩ নম্বর, সুরহ মুতফফিফিনাঃ ১) ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। ২) তাদের অবস্থা এই যে, লোকদের থেকে নেবার সময় পুরোমাত্রায় নেয়। ৩) এবং অন্যদেরকে ওজন করে বা মেপে দেবার সময় কম করে দেয়। ৪) এরা কি চিন্তা করে না, বিচারদিবসে ৫) এদেরকে উঠিয়ে আনা হবে। ৬) যেদিন সমস্ত মানুষ রব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে। ৭) কখনো নয়, নিশ্চিতভাবেই পাপীদের আমলনামা কয়েদখানার দফতরে রয়েছে। ১০) সেদিন মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য ধ্বংস সুনিশ্চিত। ১১) যারা কর্মফল দেবার দিনটিকে মিথ্যা বলেছে। ১২) আর সীমালংঘনকারী পাপী ছাড়া কেই একে মিথ্যা বলে না। ১৩) তাকে যখন আমার কুরআনের আইয়াত শুনানো হয় সে বলে এতো আগের কালের গল্প। ১৪) কখনো নয়, বরং এদের খারাপ কাজের জং ধরেছে। ৫) কখখনো নয়, নিশ্চিতভাবেই সেদিন তাদের রবের দর্শন থেকে বঞ্চিত রাখা হবে। ১৬) এবং তাদেরকে জাহান্নামে থাকতে হবে। ২৯) অপরাধীরা দুনিয়াতে ঈমানদারদের বিদ্রূপ করতো। ৩০) তাদের কাছ দিয়ে যাবার সময় চোখ টিপে তাদের দিকে ইশারা করতো। ৩১) নিজেদের ঘরের দিকে ফেরার সময় আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ফিরতো। ৩২) আর ইমানদারদেরকে দেখলে বলতো, এরা হচ্ছে পথভ্রষ্ট। ৩৩) অথচ তাদেরকে এদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠানো হয়নি। ৩৪) আজ জান্নাতে ঈমানদাররা কাফিরদের দেখে হাসছে। ৩৫) সুসজ্জিত আসনে বসে তাদের অবস্থা দেখছে। ৩৬) কাফিররা তাদের কৃতকর্মের সাওয়াব পেয়ে গেলো তো? (এখানে জাহান্নামিদের অপমান করার জন্য শাস্তিকে সাওয়াব বলা হয়েছে। এই সুরহ এর শিক্ষা হলো মানুষের ক্ষতি করা, অধিকার নষ্ট করা, জাহান্নামে যাওয়ার কারন হবে) 

৭০ নম্বর, সুরহ আল মাআরিজিঃ ১০) আখিরতে কোন পরম বন্ধুও বন্ধুকে জিজ্ঞেস করবে না। ১১) অথচ তাদেরকে পরষ্পরে দৃষ্টি সীমার মধ্যে রাখা হবে। অপরাধী সেদিনের আযাব থেকে মুক্তির বিনিময়ে তার সন্তান-সন্ততিকে, ১২) স্ত্রীকে, ভাইকে, এবং ১৩) তাকে আশ্রয়দানকারী জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর আপনজনকে ১৪) এমনকি,পৃথিবীর সবকিছুই দিতে চাইবে। ১৫) কখনো নয়, তা তো হবে জলন্ত আগুনের লেলেহিন শিখা ১৭) তাদেরকে সে অগ্নিশিখা উচ্চ স্বরে নিজের কাছে ডাকবে, যারা সত্য কুরআনের আদেশ নিষেধ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছিল। ১৮) আর সম্পদ জমা করে ডিমে তা দেয়ার মত করে আগলে রেখেছিল। ১৯) মানুষকে ছোট মনের অধিকারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০) বিপদ -মুসিবতে পড়লেই সে ঘাবড়ে যায়। ২১) আর যেই সচ্ছলতার মুখ দেখে অমনি সে কৃপণতা করতে শুরু করে। ২২) তবে যারা 'আললাহ কে' ভয় করে তারা এ দোষ থেকে মুক্ত। ২৩) যারা ২৪ ঘন্টায় সলাহ আদায়ের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান থাকে। ২৪-২৫) যারা নিজেদের সম্পদ থেকে অভাবি, প্রার্থী ও বঞ্চিতদের দান করে। ২৬) যারা প্রতিফলের দিনটিকে সত্য বলে মানে। ২৭) যারা তাদের স্রষ্টার আযাবকে ভয় করে। ২৮) কারণ তাদের রব এর আযাব এমন বস্তু নয়, যে সম্পর্কে নির্ভয় থাকা যায়। ২৯) যারা নিজেদের লজ্জাস্থান নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্যদের থেকে হিফাযত করে। ৩০) স্ত্রীদের ক্ষেত্রে তারা তিরষ্কৃত হবে না। ৩১) তবে যারা এর বাইরে আর কাউকে চাইবে তারা সীমালংঘনকারী। ৩২) যারা আমানত বা অন্যের অধিকার রক্ষা করে ও প্রতিশ্রুতি পালন করে। ৩৩) আর যারা সাক্ষ্য দানের ক্ষেত্রে সততার ওপর অটল থাকে। ৩৪) যারা সলাহতের হিফাযত করে। অর্থাত পাচ ওয়াক্ত সলাহ অর্থ বুঝে পড়ে এবং সলাহতে যা বলে তা সারাদিনরাত মেনে চলে। ৩৫) এসব লোক সম্মানের সাথে জান্নাতের বাগানসমূহে অবস্থান করবে। ৪১) আললাহ কে' বোকা বানাতে বা ধোকা দিতে পারে এমন ক্ষমতা কারও নেই। ৪২) তাই মুনাফিক ও কাফিরদেরকে অর্থহীন কথাবার্তা ও খেল- তামাসায় মত্ত থাকতে দাও, যেদিনটির প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হচ্ছে যতদিন না সেদিনটির সাক্ষাত তারা পায়। অর্থাত মৃত্যু ও বিচারদিবসের দিন। 

৫৮ নম্বর, সুরহ আল মুজাদালাহঃ ৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখণ পরস্পরে গোপন আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হও তখন পাপ, জুলুম ও রসূলের অবাধ্যতার কথা বলাবলি করো না, বরং সততা ও আললাহ ভীতির কথাবার্তা বল এবং যে 'আললাহ র' কাছে বিচার দিবসের দিন তোমাদের উপস্থিত হতে হবে, তাঁকে ভয় কর। ১০) কানাঘুষা একটা শায়তনি কাজ এবং ঈমানদার লোকদের মনে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যেই তা করা হয়৷ অবশ্য 'আললাহ র' ইচ্ছা ছাড়া তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। আর মু’মিনদের কর্তব্য হচ্ছে শুধুমাত্র 'আললাহ র' ওপর ভরসা করা। ১১) হে ঈমানদারগণ! রাষ্ট্র নায়ক বা ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রধান ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিও, তাহলে আললাহ তোমাদেরকে প্রশস্ততা দান করবেন। আর যখন চলে যেতে বলা হবে, তখন চলে যেও।তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা আললাহ উন্নীত করবেন। বস্তুত আললাহ তোমাদের কার্যলাপ সম্পর্কে অবগত। ১৬) যারা নিজেদের শপথকে ঢাল বানিয়ে রেখেছে এবং এই মিথ্যা শপথের আড়ালে থেকে তারা মানুষকে 'আললাহ র' পথ থেকে বাধা দেয়। এই কারণে তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব। ১৭) আললাহ র' হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের অর্থ-সম্পদ যেমন কাজে আসবে না, তেমনি সন্তান-সন্তুতিও কোন কাজে আসবে না। তারা দোযখের উপযুক্ত, সেখানেই তারা চিরদিন থাকবে। ১৮) যেদিন আললাহ তাদের সবাইকে জীবিত করে উঠাবেন সেদিন তাঁর সামনেও তারা ঠিক সেভাবে শপথ করবে যেমন তোমাদের সামনে শপথ করে থাকে এবং মনে করবে এভাবে তাদের কিছু কাজ অন্তত হবে। ভাল করে জেরে রাখো, তারা যারপর নাই মিথ্যাবাদী। ১৯) শায়তন তাদের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদের অন্তর থেকে আললাহ র' স্মরণ মুছে দিয়েছে। তারা শায়তনের দলভুক্ত লোক। সাবধান! শায়তনের দলভুক্ত লোকেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

৮৫ নম্বর, সুরহ আল বুরুজিঃ ১০) যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম - নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর ক্ষতিপুরণ দিয়ে তা থেকে তাওবা করে ফিরে আসেনি। নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা - পোড়ার শাস্তি। ১১) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের বাগান যার নিম্নদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে ঝরণাধারা৷ এটিই বড় সাফল্য। 

৩৬ নম্বর, সুরহ ইয়াসিনঃ ২) বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ। ১১) তুমি তো তাকেই সতর্ক করতে পারো যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আললাহ কে' ভয় করে, তাকে মাগফেরাত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদানের সুসংবাদ দাও। ২২) কেন আমি এমন সত্তার বন্দেগী করবো না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যাঁর দিকে আমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে? ২৩) তাঁকে বাদ দিয়ে কি আমি অন্য উপাস্য বানিয়ে নেবো? অথচ যদি দয়াময় আললাহ আমার কোন ক্ষতি করতে চান তাহলে কারও সুপারিশ আমার কোন কাজে লাগবে না এবং কেউ আমাকে ছাড়িয়ে নিতেও পারবে না। ৩৩) এদের জন্য নিষ্প্রাণ ভূমি একটি নিদর্শন। আললাহ তাকে জীবন দান করেন এবং তা থেকে শস্য উৎপন্ন করেন, যা এরা খায়। ৩৪) আমি তার মধ্যে খেজুর ও আংগুরের বাগান সৃষ্টি করেছি এবং তার মধ্যে থেকে ঝরণাধারা উৎসারিত করেছি। ৩৫) যাতে এরা তার ফল ভক্ষণ করে। এসব কিছু এদের নিজেদের হাতের সৃষ্ট নয়। তারপরও কি এরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না? ৪৭) যখন এদেরকে বলা হয়, আললাহ তোমাদের যে রিযিক দান করেছেন তার মধ্য থেকে কিছু আললাহ র' পথে খরচ করো তখন এসব কুফরীতে লিপ্ত লোক মু’মিনদেরকে জবাব দেয় “আমরা কি তাদেরকে খাওয়াবো, যাদেরকে আললাহ চাইলে নিজেই খাওয়াতেন? তোমরা তো পরিস্কার বিভ্রান্তির শিকার হয়েছো। ৬০) হে আদম সন্তানেরা!আমি কি তোমাদের এ মর্মে হিদায়াত করিনি যে, শয়তানের বন্দেগী করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ৬১) এবং কেবল আললাহ র' বন্দেগী করো, এটিই সরল-সঠিক পথ। ৬৮) যে ব্যক্তিকে আমি দীর্ঘ আয়ূ দান করি তার আকৃতিকে আমি একেবারেই বদলে দেই (এ অবস্থা দেখে কি )তাদের বোধোদয় হয় না? ৬৯) আমি নাবিরসুলদের কবিতা শিখাইনি এবং কাব্য চর্চা তার জন্য শোভনীয়ও নয়।  এ তো একটি উপদেশ এবং পরিস্কার পঠনযোগ্য কিতাব, ৭০) যাতে সে প্রত্যেক জীবিত ব্যক্তিকে সতর্ক করে দিতে পারে এবং অস্বীকারকারীদের ওপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। ৭১) এরা কি দেখে না, আমি নিজের হাতে তৈরী জিনিসের মধ্য থেকে এদের জন্য সৃষ্টি করেছি গবাদি পশু এবং এখন এরা তার মালিক। ৭২) আমি এভাবে তাদেরকে এদের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দিয়েছি যে, তাদের মধ্য থেকে কারো ওপর এরা সওয়ার হয়, কারো গোশত খায়। ৭৭) মানুষ কি দেখে না, তাকে আমি সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে এবং তারপর সে দাঁড়িয়ে গেছে স্পষ্ট ঝগড়াটে হয়ে। ৭৮) এখন সে আমার ওপর উপমা প্রয়োগ করে এবং নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায় বলে, এ হাড়গুলো যখন পচে গলে গেছে এতে আবার প্রাণ সঞ্চার করবে কে? ৭৯) তাকে বলো, এদেরকে তিনি জীবিত করবেন যিনি প্রথমে এদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তিনি সৃষ্টির প্রত্যেকটি কাজ জানেন। ৮২) তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তাঁর কাজ হয় কেবল এতটুকু যে, তিনি তাকে হুকুম দেন, হয়ে যাও এবং তা হয়ে যায়।  

৪ নম্বর, সুরহ নিসাঃ ৭৯) হে মানুষ, যে কল্যাণই তুমি লাভ করে থাকো তা আললাহ র' দান এবং যে বিপদ তোমার ওপর এসে পড়ে তা তোমার নিজের উপার্জন ও কাজের বদৌলতেই আসে। হে মুহাম্মাদ, আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি এবং এর পর আললাহ র' সাক্ষই যথেষ্ট। ৮২) তারা কি কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? যদি এটি আললাহ ছাড়া আর কারো পক্ষ থেকে হতো, তাহলে তারা এর মধ্যে বহু বর্ণনাগত অসংগতি খুঁজে পেতো। ৮৪) কাজেই তুমি আললাহ র' পথে লড়াই করো ৷ তুমি নিজের সত্তা ছাড়া আর কারো জন্য দায়ী নও। অবশ্যি ঈমানদারদেরকে আললাহ র' পথে চলতে বলো। আললাহ শীঘ্রই কাফিরদের শক্তির মস্তক চূর্ণ করে দেবেন। আললাহ র' শক্তি সবচেয়ে জবরদস্ত এবং তাঁর শাস্তি সবচেয়ে বেশী কঠোর। ১) হে মানবজাতি, তোমাদের রবকে ভয় করো। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। সেই আললাহ কে' ভয় করো যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আললাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর রেখেছেন। ২) ইয়াতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস করো না। এটা মহাপাপ। ১০) যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে এবং তাদেরকে অবশ্যি জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেয়া হবে। ২৮) আললাহ তোমাদের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ হাল্‌কা করতে চান৷ কারণ মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। ২৯) হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেলো না। লেনদেন হতে হবে পারস্পরিক কল্যান ও আলোচনার ভিত্তিতে আর নিজেকে হত্যা করো না। নিশ্চিত জানো, আললাহ তোমাদের প্রতি মেহেরবান। ৩০) যে ব্যক্তি জুলুম ও অন্যায় বাড়াবাড়ি করে এমনটি করবে তাকে আমি অবশ্যি আগুনে নিক্ষেপ করবো। আর আললাহ র' জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়। ৩১) তোমরা যদি বড় বড় পাপ থেকে দূরে থাকো, যা থেকে দূরে থাকার জন্য তোমাদের বলা হচ্ছে, তাহলে তোমাদের ছোট-খাটো খারাপ কাজগুলো আমি তোমাদের হিসেব থেকে বাদ দিয়ে দেবো এবং তোমাদের সম্মান ও মর্যাদার জায়গায় প্রবেশ করিয়ে দেবো। ৩৬) আর তোমরা সবাই আললাহ র' বন্দেগী করো। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিকট আত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আললাহ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে। ১০৩) তারপর তোমরা পাচ ওয়াক্ত সলাহ শেষ করার পর দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সব অবস্থায় আললাহ র' যিকির করতে থাকো। আর মানসিক প্রশান্তি লাভ করার পর পুরো সলাহ পড়ে নাও। আসলে সলাহ নির্ধারিত সময়ে পড়ার জন্য মুমিনদের ওপর বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। ৪৩) হে ঈমানদারগণ ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সলাহতের কাছে যেয়ো না। সলাহ সেই সময় পড়া উচিত যখন তোমরা যা বলছো তা জানতে পারো। অনুরূপভাবে অপবিত্র অবস্থায়ও গোসল না করা পর্যন্ত সলাহতের কাছে যেয়ো না। তবে যদি পথ অতিক্রমকারী হও, তাহলে অবশ্যি স্বতন্ত্র কথা। আর যদি কখনো তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো, সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ করে থাকো এবং এরপর পানি না পাও, তাহলে পাক –পবিত্র মাটির সাহায্য গ্রহণ করো এবং তা নিজেদের চেহারা ও হাতের ওপর বুলাও। নিসন্দেহে আললাহ কোমলতা অবলম্বনকারী ও ক্ষমাশীল। ৪৪) তুমি কি তাদেরকেও দেখছো, যাদেরকে কুরআনের জ্ঞানের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে? তারা নিজেদের গোমরাহীর খরিদ্দার বনে গেছে এবং কামনা করেছে যেন তোমরাও পথ ভুল করে বসো। ৫১) তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যাদেরকে কুরআনের জ্ঞান থেকে কিছু অংশ দেয়া হয়েছে এবং তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা জিব্‌ত ও তাগুতকে মানে আর কাফেরদের সম্পর্কে বলে,ঈমানদারদের তুলনায় এরাই তো অধিকতর নির্ভুল পথে চলেছে। ৬০) হে নবী ! তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা এই মর্মে দাবী করে চলেছে যে, তারা ঈমান এনেছে কুরআনের প্রতি যা তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে এবং সেই সব কিতাবের প্রতি যেগুলো তোমরা পূর্বে নাযিল করা হয়েছিল কিন্তু তারা নিজেদের বিষয়সমূহ ফায়সালা করার জন্য তগুত অর্থাৎ মানুষের তৈরি কুরআন বিরোধি আইনের দিকে ফিরতে চায়, অথচ তাদেরকে তাগুতকে অস্বীকার করার হুকুম দেয়া হয়েছিল? শায়তন তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে সরল সোজা পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ৬১) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো কুরআনের দিকে, যা আললাহ নাযিল করেছেন এবং এসো রসূলের দিকে, তখন তোমরা দেখতে পাও ঐ মুনাফিকরা তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। ৫২) এই ধরনের লোকদের ওপর আললাহ লানত বর্ষণ করেছেন। আর যারা ওপর আললাহ লানত বর্ষণ করেন তোমরা তার কোন সাহায্যকারী পাবে না। ৫০) আচ্ছা, দেখো তো, এরা আললাহ র' বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা করতে একটুও কুণ্ঠিত হয় না। এদের স্পষ্ট গোনাহগার হবার ব্যাপারে এই একটি পাপই যথেষ্ট। ৬৩) আললাহ জানেন তাদের অন্তরে যা কিছু আছে। তাদের পেছনে লেগো না, তাদেরকে বুঝাও এবং এমন উপদেশ দাও, যা তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যায়। ১১৬) আললাহ কেবলমাত্র শিরকের গোনাহ মাফ করবেন না। এছাড়া আর যাবতীয় গোনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি আললাহ র' সাথে আর কাউকে শরীক করে, সে গোমরাহীম মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ৪৮) আললাহ অবশ্যি শিরককে মাফ করেন না। এছাড়া অন্যান্য যত পাপ হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি আললাহ র' সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে। ৪৯) তুমি কি তাদেরকেও দেখেছো, যারা নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও আত্মপবিত্রতার বড়াই করে বেড়ায়? অথচ শুদ্ধি ও পবিত্রতা আললাহ যাকে চান তাকে দেন। আর (তারা যে শুদ্ধি ও পবিত্রতা লাভ করে না সেটা আসলে) তাদের ওপর বিন্দুমাত্রও জুলুম করা হয় না। ৫৮) হে মুসলিমগণ, আললাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারদের হাতে ফেরত দেবার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর লোকদের মধ্যে ফায়সালা করার সময় “আদল” ও ন্যায়নীতি সহকারে ফায়সালা করো। আললাহ তোমাদের বড়ই উৎকৃষ্ট উপদেশ দান করেন। আর অবশ্যি আললাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন। ১৪০) আললাহ এই কিতাবে তোমাদের পূর্বেই হুকুম দিয়েছেন, যেখানে তোমরা আললাহ র' আয়াতের বিরুদ্ধে কুফরী কথা বলতে ও তার প্রতি বিদ্রূপবাণ নিক্ষেপ করতে শুনবে সেখানে বসবে না, যতক্ষন না লোকেরা অন্য প্রসংগে ফিরে আসে৷ অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হবে। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আললাহ মুনাফিক ও কাফেরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় একত্র করবেন। ১৪৫) নিশ্চিত জেনো, মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে চলে যাবে এবং তোমরা কাউকে তাদের সাহায্যকারী হিসেবে পাবে না। ৯৫) যেসব মুসলিম কোন প্রকার অক্ষমতা ছাড়াই ঘরে বসে থাকে আর যারা ধন-প্রাণ দিয়ে আললাহ র' পথে জিহাদ করে, তাদের উভয়ের মর্যাদা সমান নয়। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের তুলনায় জানমাল দিয়ে আললাহ র' পথে জিহাদকারীদের মর্যাদা আল্লাহ বুলন্দ করেছেন। যদিও সবার জন্য আললাহ কল্যাণ ও সাওয়াবের ঘোষনা দিয়েছেন তবুও আললাহ র' নিকট মুজাহিদদের কাজের মর্যাদা বসে থাকা লোকেদের তুলনায় অনেক বেশী।

৮ নম্বর, সুরহ আল আনফাল বা নাফালঃ ২৫) আর সেই ফিতনাহ থেকে দূরে থাকো, যার অনিষ্টকারিতা শুধুমাত্র তোমাদের গোনাহগারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। জেনে রাখো, আললাহ কঠোর শাস্তিদাতা। ২৮) এবং জেনে রেখো, তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্তুতি আসলে পরীক্ষার সামগ্রী। আর আললাহ র' কাছে প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই আছে। ২৯) হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আললাহ কে' ভয় করার পথ অবলম্বন করো তাহলে আললাহ তোমাদের কষ্টিপাথর দান করবেন এবং তোমাদের পাপগুলো তোমাদের থেকে দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি ক্ষমা করবেন। আললাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল। ২৭) হে ঈমানদরগণ! জেনে বুঝে আললাহ ও তাঁর রসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না, নিজেদের আমানতসমূহের খেয়ানত করো না। ৩১) যখন তাদেরকে আমার আইয়াহ শুনানো হতো, তারা বলতো ,হ্যাঁ শুনেছি, চাইলে এমন কথা আমরাও শুনাতে পারি। এতো সেই সব পুরানো কাহিনী, যা আগে থেকে লোকেরা বলে আসছে। ( এই কারনে ইসলাম প্রচার অধিকাংশ মুসলিম কুরআন বাদ দিয়ে বুখারি মুসলিম প্রভৃতি বই দিয়ে করে। কারন তাদের বুঝানো হয়েছে কুরআন ছাড়াও বুখারি মুসলিমসহ হাজারো বইতে সালামুন আলা মুহাম্মাদের হাদিস আছে। অথচ এটা মিথ্যা কথা ) ৩৬) যারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা নিজেদের ধন-সম্পদ আললাহ র' পথ রোধ করার জন্য ব্যয় করেছে এবং এখনো আরো ব্যয় করতে থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা তাদের অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তারা পরাজিত হবে। আর এ কাফিরদের ঘেরাও করে জাহান্নামের দিকে আনা হবে। ৩৮) কাফিরদের বলে দাও, যদি এখনো তারা ফিরে আসে তাহলে যা কিছু আগে হয়ে গেছে তা মাফ করা হবে। কিন্তু যদি তারা আগের আচরণের পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে অতীতের জাতিগুলোর সাথে যা কিছু ঘটে গেছে তা সবার জানা। ৪৯) যখন মুনাফিকরা এবং যাদের দিলে রোগ আছে তারা সবাই বলছিল, এদের দীনই তো এদের মাথা বিগড়ে দিয়েছে। অথচ যদি কেউ আললাহ র' উপর ভরসা করে তাহলে আললাহ অবশ্যি বড়ই পরাক্রান্ত ও জ্ঞানী। ৩৫) বায়তুল্লাহর কাছে তারা কি সলাহ পড়ে? তারা তো শুধু সিটি দেয় ও তালি বাজায়। কাজেই তোমরা যে সত্য অস্বীকার করে আসছিলে তার প্রতিদানে এখন আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো। ৪৫) হে ঈমানদারগণ! যখন কোন দলের সাথে তোমাদের মোকাবিলা হয়, তোমরা দৃঢ়পদ থাকো এবং আললাহ কে' স্মরণ করতে থাকো বেশী বেশী করে। আশা করা যায়, এতে তোমরা সাফল্য অর্জন করবে। ৪৬) আর আললাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দেবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তির দিন শেষ হয়ে যাবে। সবরের পথ অবলম্বন করো। অবশ্যি আল্লাহ সবরকারীদের সাথে রয়েছেন। ৬৩) আললাহ মুমিনদের অন্তর পরষ্পরের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা সারা দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ ব্যয় করলেও মুসলিমদের অন্তর জোড়া দিতে পারতে না। কিন্তু আললাহ তাদের অন্তর জুড়ে দিয়েছেন। অবশ্যি তিনি বড়ই পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী। ৬১) শত্রু যদি সন্ধিও শান্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তোমরাও সেদিকে ঝুঁকে পড়ো এবং আললাহ র' প্রতি নির্ভর করো। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শুনেন এবং জানেন। ১) লোকেরা তোমার কাছে নাফাল সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে? বলে দাও, এ গনীমতের মাল তো আললাহ ও তাঁর রাসূলের। কাজেই তোমরা আললাহ কে' ভয় করো, নিজেদের পারষ্পরিক সম্পর্কে শুধরে নাও এবং আললাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। ২) সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই আললাহ কে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আললাহ র' আইয়াহ যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে। ৩) তারা সলাহ প্রতিষ্টা করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। ৪) এই ধরনের লোকেরাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বিরাট মর্যাদা ভূলত্রুটির ক্ষমা ও উত্তম রিযিক। ৬৯) কাজেই তোমরা যা কিছু সম্পদ লাভ করেছো তা খাও, কেননা, তা হালাল ও পাক -পবিত্র এবং আললাহ কে' ভয় করতে থাকো। নিশ্চয়ই আললাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ৭৪) যারা ঈমান এনেছে, আললাহ র' পথে বাড়ি-ঘর ত্যাগ করেছে এবং জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে এবং সাহায্য -সহায়তা করেছে তারাই সাচ্চা মুমিন। তাদের জন্যে রয়েছে ভূলের ক্ষমা ও সর্বোত্তম রিযিক। 

৫১ নম্বর, সুরহ আয যারিইয়াতিঃ ৮) আখিরত/মৃত্যুর পরের জিবন সম্পর্কে তোমাদের কথা পরস্পর ভিন্ন। ৯) তার ব্যাপারে সে-ই বিরক্ত যে হাক/সত্যের প্রতি বিমুখ। ১০) ধ্বংস হয়েছে অনুমান ও ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা। ১১) যারা অজ্ঞতায় নিমজ্জিত এবং গাফলতিতে বিভোর। কারন তারা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে না। ১২) তারা জিজ্ঞেস করে, তবে সেই কর্মফল দিবস কবে আসবে? ১৩) তা সেদিন আসবে যেদিন তাদের আগুনে ভাজা হবে। ১৫) তবে মুত্তাকীরা সেদিন বাগান ও ঝর্ণাধারার মধ্যে অবস্থান করবে। ১৭) কারন রাতের বেলা তারা কুরআন অধ্যয়নের কারনে কমই ঘুমাতো। ১৮) রাতের শেষ অংশে 'আললাহ র' নিকট ক্ষমা চাইতো। ১৬) পুরষ্কারস্বরুপ তাদের রব যা কিছু তাদের দান করবেন তা সানন্দে গ্রহণ করতে থাকবে। যেহেতু সেদিনটি আসার পূর্বে তারা সৎকর্মশীল ছিল। ১৯) তাদের সম্পদে অধিকার ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতদের। ৫৫) মানুষকে কুরআনের উপদেশ দিতে থাকো। কেননা, উপদেশ ঈমান গ্রহণকারীদের জন্য উপকারী। ৫৬) আললাহ, জিন ও মানুষকে শুধু এই জন্যই সৃষ্টি করেছেন যে, তারা 'আললাহ র' দাসত্ব করবে। 

৪৯ নম্বর, সুরহ হুজুরতঃ ১৩) হে মানব জাতি, আললাহ তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে দিয়েছেন যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। তোমাদের মধ্যে যে অধিক পরহেজগার সে-ই প্রকৃতপক্ষে আললাহ র' কাছে অধিক মর্যাদার অধিকারী। নিশ্চয়ই আললাহ মহাজ্ঞানী ও সবকিছু সম্পর্কে অবহিত। ৬) হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ। এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। ৯) ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো। যতক্ষণ না তারা আললাহ র' নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায় বিচারের সাথে মীমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ করো। আললাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। ১০) মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই ৷ অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আললাহ কে' ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে। ১১) হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রূপ করো না। এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধ লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার। যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই যালিম। (অর্থাত মিথ্যাবাদি ও পাপি) ১২) হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। দোষ অন্বেষন করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে?  দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আললাহ কে' ভয় করো। আললাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু। ১৪) এ বেদুইনরা বলে, “আমরা ঈমান এনেছি” তাদের বলে দাও তোমরা ঈমান আন নাই। বরং বল, আমরা অনুগত হয়েছি। (অনুগত মানে মুসলিম) ঈমান এখনো তোমাদের মনে প্রবেশ করেনি। তোমরা যদি আললাহ ও তাঁর আনুগত্যের পথ অনুসরণ করো তাহলে তিনি তোমাদের কার্যাবলীর পরস্পর দানে কোন কার্পণ্য করবেন না৷ নিশ্চয়ই আললাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (এই হাদিসে আমরা শিখলাম মুসলিমদের ইমানে পার্থক্য বা কমবেশি থাকে। যার ইমান বা বিশ্বাস যত আন্তরিক ও মজবুত সে তত ভালো মুসলিম) ১৫) প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আললাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এই ব্যাপারে পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করেনি। তারপর প্রাণ ও অর্থ-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী। ১৬) হে নবী! ঈমানের এই দাবীদারদের বলো, তোমরা কি আললাহ কে' তোমাদের দীনের কথা অবগত করাচ্ছো? আললাহ তো আসমান ও যমীনের প্রত্যেকটি জিনিস ভালভাবে অবহিত। ১৭) এসব লোক তোমাকে বুঝাতে চায় যে, তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমার উপকার করেছে। তাদের বলো, ইসলাম গ্রহণ করে আমার উপকার করেছো একথা মনে করো না। বরং যদি তোমরা নিজেদের ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে আললাহ তোমাদের উপকার করে চলেছেন। কারণ তিনি তোমাদেরকে কুরআন দ্বারা ঈমানের পথ দেখিয়েছেন। ১৮) আললাহ আসমান ও যমীনের প্রতিটি গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে জানেন। তোমরা যা কিছু করছো তা সবই তিনি দেখছেন। 

৯০ নম্বর, সুরহ আল বালাদিঃ ৫) মানুষ কি মনে করে রেখেছে, তার ওপর কেউ জোর খাটাতে পারবে না? ৬) সে অহংকার করে বলে, আমি প্রচুর ধন সম্পদ উড়িয়ে দিয়েছি। ৭) সে কি মনে করে কেউ তাকে দেখেনি? ৮) আমি কি তাকে দু’টি চোখ, ৯) একটি জিহ্বা ও দু’টি ঠোঁট দেইনি? ১০) আমি কি তাকে দু’টি সুস্পষ্ট পথ দেখাইনি? (কুরআন অথবা শায়তন) ১১) কিন্তু সে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করার সাহস করেনি। ১২) তুমি কী জানো সেই দুর্গম গিরিপথটি কি? ১৩) কোন গলাকে দাসত্বমুক্ত করা। ১৪) অথবা অনাহারের দিন ১৫) কোন নিকটবর্তী ইয়াতিম ১৬) বা ধূলি মলিন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। ১৭) তারপর ( এই সংগে ) তাদের মধ্যে শামিল হওয়া যারা ঈমান এনেছে এবং যারা পরস্পরকে সবর ও ( 'আললাহ র' সৃষ্টির প্রতি ) রহম করার উপদেশ দেয়। ১৮) এরাই ডানপন্থী। ১৯) আর যারা আমার কুরআন মানতে অস্বীকার করেছে তারা বামপন্থী। ২০) এদের ওপর আগুন ছেয়ে থাকবে। 

৭৬ নম্বর, সুরহ আদ দাহরিঃ ৭) জান্নাতি হবে সেসব লোক যারা (দুনিয়াতে) মানত/শপথ পূরণ করে সে দিনকে ভয় করে যার বিপদ সবখানে ছড়িয়ে থাকবে। ৮) আর 'আললাহ র' মহব্বতে মিসকীন,ইয়াতীম, এবং বন্দীকে খাবার দান করে। ৯) এবং (তাদেরকে বলে) আমরা একমাত্র 'আললাহ র' উদ্দেশ্যেই তোমাদের খেতে দিচ্ছি। আমরা তোমাদের কাছে এর কোন প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা পেতে চাই না। ১০) আমরা তো আমাদের রবের পক্ষ থেকে সেদিনের আযাবের ভয়ে ভীত, যা হবে কঠিন বিপদ ভরা অতিশয় দীর্ঘ দিন। ২৩) হে নাবি,আললাহ তোমার প্রতি এই কুরআন অল্প অল্প করে নাযিল করেছেন। ২৪) তাই তুমি ধৈর্যের সাথে তোমার রবের হুকুম পালন করতে থাকো। এবং এদের মধ্যকার কোন দুষ্কর্মশীল এবং সত্য অমান্যকারীর কথা শুনবে না। ২৫) সকাল সন্ধ্যায় তোমার রবের নাম স্মরণ করো। ২৬) রাতের বেলায়ও তার সামনে সিজদায় অবনত হও। রাতের দীর্ঘ সময় তাঁর তাসবীহ অর্থাৎ পবিত্র বর্ণনা করতে থাকো। ২৭) এসব লোক তো দ্রুত লাভ করা যায় এমন জিনিসকে (দুনিয়াকে)ভালবাসে এবং ভবিষ্যতে যে কঠিন দিন আসছে তাকে উপেক্ষা করে চলছে। ২৮) আমিই এদের সৃষ্টি করেছি এবং এদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও সন্ধিস্থল মজবুত করেছি। আর যখনই চাইবো তাদের আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে দেব। ২৯) এটি একটি উপদেশ বাণী। এখন কেউ চাইলে তার রবের দিকে যাওয়ার পথ অবলম্বন করতে পারে। ৩০) তোমাদের চাওয়ার কিছুই হয় না যদি আললাহ না চান। ৩১) আললাহ সর্বজ্ঞ ও সুবিজ্ঞ৷। যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তাঁর রহমতের মধ্যে শামিল করেন। আর জালেমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কঠিন শাস্তি। 

৫৯ নম্বর, সুরহ হাশারঃ ১) 'আললাহ র' তাসবীহ করেছে আসমান ও যমীনের প্রতিটি জিনিস। তিনিই বিজয়ী এবং মহাজ্ঞানী। ১৮) হে ঈমানদাররা, 'আললাহ কে' ভয় করো। আর প্রত্যেককেই যেন লক্ষ রাখে, সে আগামীকালের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। 'আললাহ কে' ভয় করতে থাকো। আললাহ নিশ্চিতভাবেই তোমাদের সেই সব কাজ সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করে থাকো। ২১) আমি যদি এই কুরআনকে কোন পাহাড়ের ওপর নাযিল করতাম তাহলে তুমি দেখতে পেতে তা আললাহ র ভয়ে ধসে পড়ছে এবং ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। আমি মানুষের সামনে এসব উদাহরণ এ জন্য পেশ করি যাতে তারা (নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে) ভেবে দেখে।  ২২) আললাহ সেই মহান সত্তা যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ/স্রষ্টা নেই। অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সবকিছুই তিনি জানেন। তিনিই রহমান ও রহীম। ২৩) আললাহ সেই মহান সত্তা যিনি ছাড়া কোন ইলাহ/স্রষ্টা নেই। তিনি বাদশাহ, অতীব পবিত্র, পূর্ণাঙ্গ শান্তি, নিরাপত্তাদানকারী, হিফাযতকারী, সবার ওপর বিজয়ী, শক্তি বলে নিজের নির্দেশ কার্যকরী করতে সক্ষম এবং সবার চেয়ে বড় হয়েই বিরাজমান থাকতে সক্ষম। আললাহ সেই সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা করে থাকে। ২৪) সেই পরম সত্তা তো আললাহ, যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের র্নিদেশ দানকারী এবং সেই অনুপাতে রূপদানকারী। উত্তম নামসমূহ তাঁর-ই। আসমান ও যমীনের সবকিছু তাঁর তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করে চলেছে। তিনি পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।

*** ইমান অর্থ 'আললাহ কে' না দেখে বিশ্বাস করা। ইসলাম অর্থ 'আললাহ র' আদেশ নিষেধের আনুগত্য করা আর যে ব্যক্তি আনুগত্য করে তাকে মুসলিম/আনুগত্যকারি বলে। কুরআনের শাব্দিক অর্থ হলো অর্থবুঝে পাঠ করা ও আনুগত্য করা। সুরহ ও আইয়াত অর্থ নিদর্শন। কেবল কুরআনের ছয় হাজারের বেশি আইয়াতই নিদর্শন নয়। আললাহ র প্রতিটা সৃষ্টিই আইয়াহ। যেমন প্রত্যেক মানুষ একেকটা আইয়াহ। এইজন্যই আললাহ বলেছেন "২৩) আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার ওপর নাযিল করেছি সেটি আমার কিনা- এ ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করে থাকো তাহলে তার মতো একটি সুরহ তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্টীকে ডেকে আনো। এক আললাহ কে ছাড়া আর যার যার চাও তার সাহায্য নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে এ কাজটি করে দেখাও। ২৪) কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো আর নিসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবে না, তাহলে ভয় করো সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। ২৬) অবশ্য আললাহ লজ্জা করেন না মশা বা তার চেয়ে তুচ্ছ কোন জিনিসের দৃষ্টান্ত দিতে। যারা সত্য গ্রহণকারী তারা এ দৃষ্টান্ত –উপমাগুলো দেখে জানতে পারে এগুলো সত্য, এগুলো এসেছে তাদের রবেরই পক্ষ থেকে, আর যারা (সত্যকে) গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় তারা এগুলো শুনে বলতে থাকে, এই ধরনের দৃষ্টান্ত –উপমার সাথে আললাহ র কী সম্পর্ক? ( অথচ সে অহংকারের কারনে ভুলে যায় যে সে একটা মশা বা পিপড়া সৃষ্টি করতেও সক্ষম নয় ) এভাবে আললাহ একই কথার সাহায্যে অনেককে গোমরাহীতে লিপ্ত করেন আবার অনেককে দেখান সরল সোজা পথ।

১১২ নম্বর, সুরহ ইখলাসঃ ১) বলো,  তিনি আললাহ এক। ২) আললাহ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল। ৩) আললাহ র কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারোর সন্তান নন। ৪) এবং আললাহ র সমতুল্য কেউ নেই। 

১১৩ নম্বর, সুরহ ফালাকঃ ১) বলো, আমি প্রভাতের রবের নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। ২) এমন প্রত্যেকটি জিনিসের অনিষ্টকারিতা থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। ৩) এবং রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে ,যখন তা ছেয়ে যায়। ৪) আর গিরায় ফুঁৎকারদানকারীদের ( বা কারিনীদের ) অনিষ্টকারিতা থেকে। ৫) এবং হিংসুকের অনিষ্টকারিতা থেকে, যখন সে হিংসা করে।

১১৪ নম্বর সুরহ নাসঃ ১) বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের রব ২) মানুষের বাদশাহ, ৩) মানুষের প্রকৃত ইলাহ এর নিকট ৪) এমন প্ররোচনা দানকারীর অনিষ্ট থেকে ৫) যে বারবার ফিরে আসে,  যে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে। ৬) সে জিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে হোক।

*** সুরহ ফালাক ও নাস হলো দুআ। তাই এই দুআ দুইটি প্রতিদিন অর্থবুঝে পড়তে হবে।

৮৯ নম্বর, সুরহ ফাজারঃ ১৭) কখনোই নয়, বরং তোমরা ইয়াতিমের সাথে সম্মানজনক ব্যবহার কর না। ১৮) এবং মিসকীনকে খাওয়াবার জন্য পরস্পরকে উৎসাহিত কর না। ১৯) তোমরা মীরাসের সব ধন সম্পদ সম্পূর্ণরূপে খেয়ে ফেলো ২০) এবং এই ধন সম্পদের প্রেমে তোমরা মারাত্মকভাবে বাঁধা পড়েছ। ২১) কখনই নয়, পৃথিবীকে যখন চূর্ণবিচূর্ণ করে বালুকাময় করে দেয়া হবে। ২২) এবং তোমার রব এমন অবস্থায় দেখা দেবেন। যখন মালাইকাহরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। ২৩) সেদিন জাহান্নামকে সামনে আনা হবে। ২৪) সেদিন মানুষ বুঝবে কিন্তু তার বুঝতে পারায় কী লাভ? সে বলবে, হায়, যদি আমি নিজের জীবনের জন্য কিছু আগাম ব্যবস্থা করতাম। ২৫) সেদিন আললাহ যে শাস্তি দেবেন তেমন শাস্তি কেউ দিতে পারবে না। ২৬) এবং আললাহ যেমন বাঁধবেন আর কেউ তেমন বাঁধতে পারবে না। 

৮৬ নম্বর, সুরহ আততরিকঃ ৫) কাজেই মানুষ একবার এটাই দেখে নিক কী জিনিস থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ৬) তাকে সৃষ্টি করা হেয়ছে প্রবলবেগে নিঃসৃত পানি থেকে ৭) যা পিঠ ও বুকের হাড়ের মাঝখান দিয়ে বের হয়। ৯) যেদিন গোপন রহস্যের যাচাই বাছাই হবে। ১০) সেদিন মানুষের নিজের কোন শক্তি থাকবে না এবং কেউ তার সাহায্যকারী ও হবে না। ১১) কসম বৃষ্টি বর্ষণকারী আকাশের ১২) এবং ( উদ্ভিদ জন্মাবার সময় ) ফেটে যাওয়া যমীনের ১৩) এটি মাপাজোকা মীমাংসাকারী কথা ১৪) হাসি ঠাট্টা নয়। ১৫) এরা কিছু চক্রান্ত করছে ১৬) এবং আমিও একটি কৌশল করছি। ১৭) কাজেই ছেড়ে দাও, হে নাবি, এই কাফিরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। 

১০৭ নম্বর, সুরহ মাউনঃ ১) তুমি কি তাকে দেখেছো যে আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তিকে মিথ্যা বলছে? ২) সে-ই তো ইয়াতিককে ধাক্কা দেয় ৩) এবং মিসকিনকে খাবার দিতে  উদ্বুদ্ধ করে না৷ ৪) তারপর সেই সলাহ আদায়কারিদের জন্য ধবংস ৫) যারা নিজেদের সলাহতের ব্যাপারে গাফলতি করে ৬) যারা লোক দেখানো কাজ করে এবং মামুলি প্রয়োজনের জিনিসপাতি লোকদেরকে দিতে বিরত থাকে।

৭৯ নম্বর, সুরহ আন নাযিআতিঃ ২৭) তোমাদের সৃষ্টি করা বেশী কঠিন কাজ, না আকাশের?  আললাহ আকাশ সৃষ্টি করেছেন। ২৮) তার ছাদ অনেক উঁচু করেছেন। তারপর তার ভারসাম্য কায়েম করেছেন। ২৯) তার রাতকে ঢেকে দিয়েছেন এবং তার দিনকে প্রকাশ করেছেন। ৩০) এরপর তিনি যমীনকে বিছিয়েছেন।৩১) তার মধ্য থেকে তার পানি ও উদ্ভিদ বের করেছেন। ৩২) এবং তার মধ্যে পাহাড় গেড়ে দিয়েছেন।৩৩) জীবন যাপনের সামগ্রী হিসেবে তোমাদের গৃহপালিত পশুদের জন্য। ৩৪) তারপর যখন মহাবিপর্যয়/বিচার দিবস ঘটবে। ৩৫) যেদিন মানুষ নিজে যা কিছু করেছে তা সব স্মরণ করবে। ৩৬) এবং প্রত্যেক দর্শনকারীর সামনে জাহান্নাম খুলে ধরা হবে। ৩৭) তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছিল, ৩৮) এবং দুনিয়ার জীবনকে বেশী ভালো মনে করে বেছে নিয়েছিল। ৩৯) জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। ৪০) আর যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে এসে দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীত ছিল এবং নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রেখেছিল। ৪১) তার ঠিকানা হবে জান্নাত। ৪২) এরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে সেই সময়টি ( কিয়ামত ) কখন আসবে? ৪৩) সেই সময়টি বলার সাথে তোমার সম্পর্ক কি? ৪৪) এর জ্ঞান তো আললাহ ব্যতিত কেউ জানে না। ৪৫) 'আললাহ র' ভয়ে ভীত এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে সতর্ক করাই শুধুমাত্র তোমার দায়িত্ব। ৪৬) যেদিন এরা তা দেখে নেবে সেদিন এর অনুভব করবে যেন ( এরা দুনিয়ায় অথবা মৃত অবস্থায় ) মাত্র একদিন বিকালে বা সকালে অবস্থান করেছে। 

১০২ নম্বর, সুরহ তাকাসুরঃ ১) বেশী বেশী এবং একে অপরের থেকে বেশী দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করার মোহ তোমাদের গাফলতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ২) এমনকি ( এই চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে ) তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও। ৩) কখখনো না, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। ৪) আবার ( শুনে নাও ) কখখনো না শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। ৫) কখখনো না, যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে ( এই আচরণের পরিণাম ) জানতে ( তাহলে তোমরা এ ধরনের কাজ করতে না৷ )। ৬) তোমরা জাহান্নাম দেখবেই। ৭) আবার ( শুনে নাও) তোমরা একেবারে স্থির নিশ্চিতভাবে তা দেখবেই। ৮) তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের এই নিয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

১০৩ নম্বর, সুরহ আসরিঃ ১) সময়ের শপথ। ২) মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। ৩) তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হাক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।

১০৪ নম্বর, সুরহ হুমাযাহঃ ১) ধ্বংশ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনা সামনি) লোকদের ধিক্কার দেয় এবং (পেছনে ) নিন্দা করতে অভ্যস্ত। ২) যে অর্থ জমায় এবং তা গুণে গুণে রাখে। ৩) সে মনে করে তার অর্থ -সম্পদ চিরকাল থাকবে। ৪) কখনো নয়, তাকে তো চূর্ণ - বিচূর্ণকারী জায়গায় ফেলে দেয়া হবে। ৫) আর তুমি কি জানো সেই চূর্ণ - বিচূর্ণকারী জায়গাটি কি? ৬) আললাহ র আগুন প্রচণ্ডভাবে উৎক্ষিপ্ত। ৭) যা হৃদয় অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে। ৮) তা তাদের ওপর ঢেকে দিয়ে বন্ধ করা হবে। ৯) (এমন অবস্থায় যে তা ) উঁচু উঁচু থামে (ঘেরাও হয়ে থাকবো )।

১০১ নম্বর, সুরহ করিআহঃ ১) মহাদুর্ঘটনা। ২) কী সেই মহাদুর্ঘটনা? ৩) তুমি কী জানো সেই মহাদুর্ঘটনাটি কি? ৪) সেদিন যখন লোকেরা ছড়িয়ে থাকা পতংগের মতো, ৫) এবং পাহাড়গুলো রং বেরঙের ধূনা পশমের মতো হবে। ৬) তারপর যার পাল্লা ভারী হবে ৭) সে মনের মতো সুখী জীবন লাভ করবে। ৮) আর যার পাল্লা হালকা হবে। ৯) তার আবাস হবে গভীর খাদ। ১০) আর তুমি কী জানো সেটি কি? ১১) ( সেটি ) জ্বলন্ত আগুন। 

৯৯ নম্বর, সুরহ যিলযালঃ ১) যখন পৃথিবীকে প্রবলবেগে ঝাঁকুনি দেয়া হবে। ২) পৃথিবী তার ভেতরের সমস্ত ভার বাইরে বের করে দেবে। ৩) আর মানুষ বলবে , এর কী হয়েছে? ৪) সেদিন সে তার নিজের ( ওপর যা কিছু ঘটেছে সেই ) সব অবস্থা বর্ণনা করবে। ৫) কারণ তোমার রব তাকে ( এমটি করার) হুকুম দিয়ে থাকবেন। ৬) সেদিন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ফিরে আসবে, যাতে তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে দেখানো যায়। ৭) তারপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখে নেবে। ৮) এবং যে অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তা দেখে নেবে। 

৮৮ নম্বর, সুরহ গশিইয়াহঃ ১) তোমার কাছে আচ্ছন্নকারী বিপদ জাহান্নামের খবর এসে পৌঁছেছে কি? ২) কিছু চেহারা সেদিন হবে ভীত কাতর ৩) কঠোর পরিশ্রম রত, ক্লান্ত - পরিশ্রান্ত, ৪) জ্বলন্ত আগুনে ঝলসে যেতে থাকবে। ৫) ফুটন্ত ঝরণার পানি তাদেরকে দেয়া হবে পান করার জন্য। ৬) তাদের জন্য কাঁটাওয়ালা শুকনো ঘাস ছাড়া আর কোন খাদ্য থাকবে না। ৭) তা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও মেটাবে না। ৮) কিছু চেহারা সেদিন আলোকোজ্জ্বল হবে। ৯) নিজেদের কর্ম সাফল্যে আনন্দিত হবে। ১০) উচ্চ মর্যাদার জান্নাতে অবস্থান করবে। ১১) সেখানে কোন বাজে কথা শুনবে না। ১২) যেখানে থাকবে বহমান ঝরণাধারা। ১৩) সেখানে উঁচু আসন থাকবে। ১৪) পানপাত্রসমূহ থাকবে। ১৫) সারি সারি বালিশ সাজানো থাকবে। ১৬) এবং উৎকৃষ্ট বিছানা পাতা থাকবে। ১৭) (এরা মানছে না ) তাহলে কি এরা উটগুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? ১৮) আকাশ দেখছে না, কিভাবে তাকে উঠানো হয়েছে? ১৯) পাহাড়গুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে শক্তভাবে বসানো হয়েছে? ২০) আর যমীনকে দেখছে না, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে? ২১) বেশ ( হে নাবি ) তাহলে তুমি উপদেশ দিয়ে যেতে থাকো। তুমি তো শুধু মাত্র একজন উপদেশক, ২২) এদের উপর বল প্রয়োগকারী নও। ২৩) তবে যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং অস্বীকার করবে, ২৪) আললাহ তাকে মহাশাস্তি দান করবেন। ২৫) অবশ্যি এদের আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। ২৬) তারপর এদের হিসেব নেয়া হবে আমারই দায়িত্ব।

৯২ নম্বর, সুরহ আল লায়লিঃ ১) রাতের শপথ যখন তা ঢেকে যায়। ২) দিনের শপথ যখন তা উজ্জ্বল হয়। ৩) আর সেই সত্তার শপথ যিনি পুরুষ ও স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। ৪) আসলে তোমাদের প্রচেষ্টা নানা ধরনের, ৫) কাজেই যে ( আললাহ র পথে ) ধন সম্পদ দান করেছে ৬) ( আললাহ র নাফরমানি থেকে ) দূরে থেকেছে ৭) এবং সৎবৃত্তিতে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তাকে আমি সহজ পথের সুযোগ - সুবিধা দেবো। ৮) আর যে কৃপণতা করেছে , আললাহ র আদেশ নিষেধ থেকে বেপরোয়া হয়ে গেছে, ৯) এবং সৎবৃত্তিকে মিথ্যা গণ্য করেছে, ১০) তাকে আমি কঠিন পথের সুযোগ - সুবিধা দেবো। ১১) আর তার ধন - সম্পদ তার কোন কাজে লাগবে যখন সে ধ্বংস হয়ে যাবে। ১২) নিসন্দেহে পথনির্দেশ দেয়া তো আললাহ র দায়িত্বের অন্তরভুক্ত। ১৩) আর আললাহ তো আখেরাত ও দুনিয়া উভয়েরই মালিক। ১৪) তাই আমি তোমাদের সাবধান করে দিয়েছি জ্বলন্ত আগুন থেকে, ১৫) যে চরম হতভাগ্য ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ১৬) সে ছাড়া আর কেউ তাতে ঝলসে যাবে না। ১৭) আর যে পরম মুত্তাকী ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জনের জন্য নিজের ধন - সম্পদ দান করে ১৮) তাকে তা থেকে দূরে রাখা হবে। ১৯) তার প্রতি কারো কোন অনুগ্রহ নেই যার প্রতিদান তাকে দিতে হবে। ২০) সেতো কেবলমাত্র নিজের রবের সন্তুষ্টিলাভের জন্য এ কাজ করে। ২১) আর আললাহ অবশ্যি ( তার প্রতি ) সন্তুষ্ট হবেন।

৬ নম্বর, সুরহ আনআমঃ ১৫১) হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, এসো আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কি বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। আললাহ র সাথে কাউকে শরীক করো না।পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো। প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যাবে না। আললাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায় সংগতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না। তিনি তোমাদের এ বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করবে। ১৫২) আর তোমরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এতীমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না, তবে উত্তম পদ্ধতিতে যেতে পারো। ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আমি ততটুকু দায়িত্বের বোঝা যতটুকু তার সামর্থের মধ্যে রয়েছেন। যখন কথা বলো, ন্যায্য কথা বলো, চাই তা তোমার আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারই হোক না কেন। আললাহ কে দেওয়া অংগীকার পূর্ণ করো। এই বিষয়গুলোর নির্দেশ আললাহ তোমাদের দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা নসীহত গ্রহণ করবে। ১৫৩) এছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এইঃ এটিই আললাহ র সোজা পথ। তোমরা এ পথেই চলো এবং অন্য পথে চলো না। কারণ তা তোমাদের আললাহ র পথ থেকে সরিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। এই হেদায়াত তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা বাঁকা পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে। ১৬০) যে ব্যক্তি আললাহ র কাছে হাযির হবে সৎকাজ নিয়ে তার জন্য রয়েছে দশগুণ প্রতিফল আর যে ব্যক্তি অসৎকাজ নিয়ে আসবে সে ততটুকু প্রতিফল পাবে যতটুকু অপরাধ সে করেছে এবং কারোর জুলুম করা হবে না। ২৬) তারা এই কুরআন গ্রহণ করা থেকে লোকদেরকে বিরত রাখে এবং নিজেরাও এর কাছে থেকে দূরে পালায়। (তারা মনে করে এ ধরনের কাজ করে তারা তোমার কিছু ক্ষতি করেছে ) অথচ আসলে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করেছে। কিন্তু এটা তারা উপলব্ধি করে না। হায় ! যদি তুমি সে সময়ের অবস্থা দেখতে পারতে যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারে দাঁড় করানো হবে। সে সময় তারা বলবে, ২৭) হায় ! যদি এমন কোন উপায় হতো যার ফলে আমরা আবার দুনিয়ায় প্রেরিত হতাম তখন আমাদের রবের নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলতাম না এবং মুমিনদের অন্তরভূক্ত হয়ে যেতাম। ২৮) আসলে একথা তার নিছক এ জন্য বলবে যে, তারা যে সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল তা সে সময় আবরণমুক্ত হয়ে তাদের সামনে এসে যাবে। নয়তো তাদেরকে যদি আগের জীবনের দিকে ফেরত পাঠানো হয় (অর্থাত পৃথিবি) তাহলে আবার তারা সে সবকিছুই করে যাবে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল৷ তারা তো মিথ্যুকই।

৩১ নম্বর, সুরহ লুকমানঃ ১২) আমি লুকমানকে দান করেছিলাম সূক্ষ্ণজ্ঞান। যাতে সে আললাহ র প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে তার কৃতজ্ঞতা হবে তার নিজেরই জন্য লাভজনক। আর যে ব্যক্তি কুফরী করবে, সে ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে আললাহ অমুখাপেক্ষী এবং নিজে নিজেই প্রশংসিত। ১৩) স্মরণ করো যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছিল, সে বললো, “হে পুত্র, আললাহ র সাথে কাউকে শরীক করো না। যথার্থই শিরক অনেক বড় পাপ / জুলুম। ১৪) আর প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি। তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে। (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে। ১৫) কিন্তু যদি তারা তোমার প্রতি আমার সাথে এমন কাউকে শরীক করার জন্য চাপ দেয় যাকে তুমি জানো না, তাহলে তুমি তাদের কথা কখনোই মেনে নিয়ো না। দুনিয়ায় তাদের সাথে সদাচার করতে থাকো কিন্তু মেনে চলো সে ব্যক্তির পথ যে আমার দিকে ফিরে এসেছে। তারপর তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে আমারই দিকে। সে সময় তোমরা কেমন কাজ করছিলে তা আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো। ১৬) (আর লুকমান বলেছিল ) “হে পুত্র! কোন জিনিস যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা লুকিয়ে থাকে পাথরের মধ্যে আকাশে বা পৃথিবীতে কোথাও, তাহলে আললাহ তা বের করে নিয়ে আসবেন। তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু জানেন। ১৭) হে পুত্র! সলাহ  কায়েম করো, সৎকাজের হুকুম দাও, খারাপ কাজে নিষেধ করো এবং যা কিছু বিপদই আসুক সে জন্য সবর করো। একথাগুলোর জন্য বড়ই তাকিদ করা হয়েছে। ১৮) আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আললাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে। ১৯) নিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নীচু করো। সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ। ২৭) পৃথিবীতে যত গাছ আছে তা সবই যদি কলম হয়ে যায় এবং সমুদ্র (দোয়াত হয়ে যায়) তাকে আরো সাতটি সমুদ্র কালি সরবরাহ করে তবুও আললাহ র কথা (লেখা) শেষ হবে না। অবশ্যই আললাহ মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানী। ৩৩) হে মানুষেরা ! তোমাদের রবের ক্রোধ থেকে সতর্ক হও এবং সেদিনের ভয় করো যেদিন কোন পিতা নিজের পুত্রের পক্ষ থেকে প্রতিদান দেবে না এবং কোন পুত্রই নিজের পিতার পক্ষ থেকে কোন প্রতিদান দেবে না।  প্রকৃতপক্ষে আললাহ র প্রতিশ্রুতি সত্য। কাজেই এ দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে এবং প্রতারক যেন তোমাকে আললাহ র ব্যাপারে প্রতারিত করতে সক্ষম না হয়। ৩৪) একমাত্র আললাহ কিইয়ামতের জ্ঞান রাখেন ৷ তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কি লালিত হচ্ছে। কোন প্রাণসত্তা জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কোন ব্যক্তির জানা নেই তার মৃত্যু হবে কোন যমীনে। আললাহ ই সকল জ্ঞানের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন।

১৭ নম্বর, সুরহ বানি ইসরঈলঃ ২৩) তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ (১) তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো। (২) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্‌” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো ২৪) আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ ( রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি সগির। হামহুমা অর্থ মাতাপিতা, কামা অর্থ যেভাবে, সগির অর্থ ছোটকালের সময়, রব্বাইয়ানি অর্থ লালনপালন করা ) হে আমার রব। তাদের প্রতি দয়া করুন যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। ২৫) তোমাদের রব খুব ভালো করেই জানেন তোমাদের মনে কি আছে। যদি তোমরা সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপন করো, তাহলে তিনি এমন লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল যারা নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে বন্দেগীর নীতি অবলম্বন করার দিক ফিরে আসে। ২৬) আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও। ২৭) বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শায়তনের ভাই আর শায়তন তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ। ২৮) যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও। ২৯) নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে। ৩০) তোমার রব যার জন্য চান রিযিক প্রশস্ত করে দেন আবার যার জন্য চান সংকীর্ণ করে দেন। তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন। ৩১) দারিদ্রের আশংকায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না। আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও। আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ। ৩২) যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ। ৩৩) আললাহ যাকে হত্যা করা হারম করে দিয়েছেন, সত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না। আর যে ব্যক্তি মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছে তার অভিভাবককে আমি কিসাস দাবী করার অধিকার দান করেছি। কাজেই হত্যার ব্যাপারে তার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়, তাকে সাহায্য করা হবে। ৩৪) ইয়াতীমের সম্পত্তির ধারে কাছে যেয়ো না, তবে হ্যাঁ সুদপায়ে, যে পর্যন্ত না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে যায়। (১১)প্রতিশ্রুতি পালন করো, অবশ্যই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে। ৩৫) মেপে দেবার সময় পরিমাপ পাত্র ভরে দাও এবং ওজন করে দেবার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। এটিই ভালো পদ্ধতি এবং পরিণামের দিক দিয়েও এটিই উত্তম। ৩৬) এমন কোনো জিনিসের পেছনে লেগে যেয়ো না সে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই। নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ৩৭) যমীনে দম্ভভরে চলো না। তুমি না যমীনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে। ৩৮) এই বিষয়গুলোর মধ্য থেকে প্রত্যেকটির খারাপ দিক তোমার রবের কাছে অপছন্দনীয়। ৩৯) তোমার রব তোমাকে অহীর মাধ্যমে যে হিকমতের কথাগুলো বলেছেন এগুলো তার অন্তরভুক্ত। আর দেখো, আললাহ র সাথে অন্য কোনো মাবুদ স্থির করে নিয়ো না, অন্যথায় তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে নিন্দিত এবং সব রকমের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত অবস্থায়। ৪১) আমি এই কুরআনে নানাভাবে লোকদেরকে বুঝিয়েছি যেন তারা সজাগ হয়, কিন্তু তারা সত্য থেকে আরো বেশী দূরে সরে যাচ্ছে। ৪৫) যখন তুমি কুরআন পড়ো তখন আমি তোমার ও যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে না তাদের মাঝখানে একটি পর্দা ঝুলিয়ে দেই। ৪৬) এবং তাদের মনের ওপর এমন আবরণ চড়িয়ে দেই যেন তারা কিছুই বুঝে না এবং তাদের কানে তালা লাগিয়ে দেই। আর যখন তুমি কুরআনে নিজের একমাত্র রবের কথা পড়ো তখন তারা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। ৫৩) আর হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে যা সর্বোত্তম। আসলে শায়তন মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে শায়তন হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। ৭৩) হে মুহাম্মাদ, তোমার কাছে আমি যে অহী পাঠিয়েছি তা থেকে তোমাকে ফিরিয়ে রাখার জন্য এ লোকেরা তোমাকে বিভ্রাটের মধ্যে ঠেলে দেবার প্রচেষ্টায় কসুর করেনি, যাতে তুমি আমার নামে নিজের পক্ষ থেকে কোনো কথা তৈরি করো। যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে তারা তোমাকে নিজেদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতো। ৭৪) আর যদি আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না। ৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না। ৭৬) আর এরা এ দেশ থেকে তোমাকে উৎখাত করার এবং এখান থেকে তোমাকে বের করে দেবার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু যদি এরা এমনটি করে তাহলে তোমার পর এরা নিজেরাই এখানে বেশীক্ষণ থাকতে পারবে না। ৭৭) এটি আমার স্থায়ী কর্মপদ্ধতি। তোমার পূর্বে আমি যেসব রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের সবার ব্যাপারে এ কর্মপদ্ধতি আরোপ করেছিলাম। আর আমার কর্মপদ্ধতিতে তুমি কোনো পরিবর্তন দেখতে পাবে না। ৭৮) সলাহ প্রতিষ্টা করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফাজারে কুরআন পড়ার ব্যবস্থা করো। কারণ ফাজারের কুরআন পাঠ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। ৮৮) বলে দাও, যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে কুরআনের মতো কোনো একটি জিনিস আনার চেষ্টা করে তাহলে তারা আনতে পারবে না, তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়ে গেলেও পারবে না। ৮৯) আমি এই কুরআনে লোকদেরকে নানাভাবে বুঝিয়েছি কিন্তু অধিকাংশ লোক অস্বীকার করার ওপরই অবিচল থাকে। ১০৫) এই কুরআনকে আমি সত্য সহকারে নাযিল করেছি এবং সত্য সহকারেই এটি নাযিল হয়েছে। আর হে মুহাম্মাদ! তোমাকে আমি এছাড়া আর কোনো কাজে পাঠাইনি যে, (যে মেনে নেবে তাকে) সুসংবাদ দিয়ে দেবে এবং (যে মেনে নেবে না তাকে) সাবধান করে দেবে। ১০৬) আর এই কুরআনকে আমি সামান্য সামান্য করে নাযিল করেছি, যাতে তুমি থেমে থেমে তা লোকদেরকে শুনিয়ে দাও এবং তাকে আমি (বিভিন্ন সময়) পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি।

৬৬ নম্বর, সুরহ তাহরিমঃ ৯) হে নাবি, কাফির ও মুনাফিকরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের কঠোরতা দেখাও। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম৷ তা অত্যন্ত মন্দ ঠিকানা৷ ৬) হে লোকজন যারা ঈমান এনেছো, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার ও সন্তান-সন্তুতিকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, মানুষ এবং পাথর হবে যার জ্বালানী। সেখানে রুঢ় স্বভাব ও কঠোর হৃদয় মালাইকাহরা নিয়োজিত থাকবে যারা কখনো আললাহ র' নির্দেশ অমান্য করে না এবং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাই পালন করে।

৫৭ নম্বর, সুরহ হাদিদঃ ১) যমীন ও আসমানসমূহের প্রতিটি জিনিসই আললাহ র তাসবীহ করেছে। তিনি মহা পরাক্রমশালী ও অতিশয় বিজ্ঞ। ২) পৃথিবী ও আকাশ সাম্রাজ্যের সার্বভৌম মালিক তিনিই। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান৷ তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। ৩) তিনিই আদি, তিনি অন্ত এবং তিনিই প্রকাশিত তিনিই গোপন। তিনি সব বিষয়ে অবহিত। ৫) তোমরা যেখানেই থাক তিনি তোমাদের সাথে আছেন। তোমরা যা করছো আললাহ তা দেখছেন। আসমান ও যমীনের নিরংকুশ সার্বভৌম মালিকানা একমাত্র তাঁরই। সব ব্যাপারের ফায়সালার জন্য তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হয়। ৭) আললাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং ব্যয় কর সে জিনিস যার প্রতিনিধিত্বমূলক মালিকানা তিনি তোমাদের দিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে ও অর্থ -সম্পদ খরচ করবে তাদের জন্য বড় প্রতিদান রয়েছে। ২০) ভালভাবে জেনে রাখো দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদে পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এর উপমা হচ্ছে, বৃষ্টি হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো৷ তারপর সে ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে বর্ণ ধারণ করে এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়৷ পক্ষান্তরে আখেরাত এমন স্থান যেখানে রয়েছে কঠিন আযাব, আললাহ র ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। ২২) পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি৷ এমনটি করা আললাহ র জন্য খুবই সহজ কাজ। ২৩) (এ সবই এজন্য) যাতে যে ক্ষতিই তোমাদের হয়ে থাকুক তাতে তোমরা মনক্ষুন্ন না হও। আর আললাহ তোমাদের যা দান করেছেন ৷ সেজন্য গর্বিত না হও। যারা নিজেরা নিজেদের বড় মনে করে এবং অহংকার করে, ২৪) নিজেরাও কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতা করতে উৎসাহ দেয় আললাহ তাদের পছন্দ করেন না। এরপরও যদি কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আললাহ অভাবশূন্য ও অতি প্রশংসিত। ২৮) হে ঈমানদারগণ! আললাহ কে ভয় কর এবং তাঁর রসুল (মুহাম্মাদ সললাললাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর ওপর ঈমান আনো। তাহলে আললাহ তোমাদেরকে দ্বিগুণ রহমত দান করবেন, তোমাদেরকে সেই জ্যোতি দান করবেন যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি মাফ করে দেবেন৷ আললাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

৩০ নম্বর, সুরহ রুমঃ ৩) ক্ষমতা ও কতৃত্ব আগেও আললাহ র ছিল, পরেও তাঁরই থাকবে। ৭) লোকেরা দুনিয়ায় কেবল বাহ্যিক দিকটাই জানে এবং আখিরত থেকে তারা নিজেরাই অসচেতন ও অজ্ঞ। ৮) তারা কি কখনো নিজেদের মধ্যে চিন্তা- ভাবনা করেনি? আললাহ পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলী এবং তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে সবকিছু সঠিক উদ্দেশ্যে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু অনেকেই তাদের রবের সাক্ষাতে বিশ্বাস করে না। ৯) আর এরা কি কখনো পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? তাহলে এদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের পরিণাম এরা দেখতে পেতো। তারা এদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল, তারা জমি কর্ষণ করেছিল খুব ভালো করে এবং এত বেশি আবাদ করেছিল যতটা এরা করেনি।   তাদের কাছে তাদের রাসূল উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে আসে। তাঁরপর আললাহ তাদের প্রতি জুলূমকারী ছিলেন না কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম/পাপ/অবাধ্যতা করেছিল। ১০) শেষ পর্যন্ত যারা অসৎকাজ করেছিল তাদের পরিণাম হয়েছিল বড়ই অশুভ, কারণ তারা আললাহ র আইয়াতকে মিথ্যা বলেছিল এবং তারা সেগুলোকে বিদ্রুপ করতো। ২০) আললাহ র আইয়াহ বা নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তাঁরপর সহসা তোমরা হলে মানুষ, (পৃথিবীর বুকে) ছড়িয়ে পড়ছো। ২১) আর তাঁর আইয়াহতের মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতি থেকে সৃষ্টি করেছেন স্ত্রীগণকে যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই এর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা- ভাবনা করে। ২২) আর আললাহ র আইয়াতের মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের পার্থক্য। অবশ্যই তাঁর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য। ২৩) আর আললাহ র আইয়াতের মধ্যে রয়েছে তোমাদের রাতে ও দিনে ঘুমানো এবং তোমাদের তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করা। অবশ্যই এর মধ্যে রয়েছে বহু নিদর্শন এমনসব লোকদের জন্য যারা (গভীর মনোযোগ সহকারে) শোনে। ২৪) আর আললাহ র আইয়াহতের অন্তরভুক্ত হচ্ছে, তিনি তোমাদের দেখান বিদ্যুৎচমক ভীতি ও লোভ সহকারে।  আর আকাশে থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তাঁরপর এর মাধ্যমে জমিকে তাঁর মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। অবশ্যই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন লোকদের জন্য যারা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে। ২৯) কিন্তু মিথ্যাবাদিরা না জেনে বুঝে নিজেদের চিন্তা-ধারণার পেছনে ছুটে চলছে। এখন আললাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন কে তাকে পথ দেখাতে পারে? এই ধরনের লোকদের কোন সাহায্যকারী হতে পারে না। ( কারন তারা অহংকারি ) ৩০) কাজেই একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারা এই দীনের দিকে স্থির নিবদ্ধ করে দাও। আললাহ মানুষকে যে প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন তাঁর ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও। আললাহ র তৈরি সৃষ্টি কাঠামো পরিবর্তন করা যেতে পারে না। এটিই পুরোপুরি সঠিক ও যথার্থ দীন।  কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। ৩৮) কাজেই (হে মুমিন!) আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকে (দাও তাদের অধিকার)। এই পদ্ধতি এমন লোকদের জন্য ভালো যারা চায় আললাহ র সন্তুষ্টি এবং তারাই সফলকাম হবে। ৩৯) যে সূদ ( কম বেতন দেওয়া বা অধিক লাভ করাও সুদ) তোমরা নিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আললাহ র কাছে তা বাড়ে না।  আর যে যাকাত তোমরা আললাহ র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো, তা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে। ৩১) (প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও একথার ওপর ) আল্লাহ অভিমুখী হয়ে এবং তাকে ভয় করো, আর সলাহ কায়েম করো এবং এমন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেয়ো না,৩২) যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। ( যেমন শিয়া সুন্নি, আহলি হাদিস, আহলি কুরআন, মাজহাবি ) প্রত্যেক দলের কাছে যা আছে তাতেই তারা মশগুল হয়ে আছে। ৩৬) যখন লোকদের দয়ার স্বাদ আস্বাদন করাই তখন তারা তাতে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে এবং যখন তাদের নিজেদের কৃতকর্মের ফলে তাদের ওপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন সহসা তারা হতাশ হয়ে যেতে থাকে। ৪১) মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা বিরত হবে। ৫৮) আমি এই কুরআনে বিভিন্নভাবে লোকদেরকে বুঝিয়েছি। ( তাই কুরআনে অর্থসহ বুঝে পড়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামুলক/ফারদ ) তুমি যে কোন নিদর্শনই আনো না কেন, অবিশ্বাসীরা একথাই বলবে, তোমরা মিথ্যাশ্রয়ী।

৮০ নম্বর, সুরহ আবাসাঃ ১৭) লানত মানুষের প্রতি, সে কত বড় সত্য অস্বীকারকারী। ১৮) কোন জিনিস থেকে আললাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন? ১৯) এক বিন্দু শুত্রু থেকে আললাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। ২৩) কখনো নয়, আললাহ তাকে যে কর্তব্য পালন করার হুকুম দিয়েছিলেন তা সে পালন করেনি। ২৪) মানুষ তার খাদ্যের দিকে একবার নজর দিক। ২৫) আমি প্রচুর পানি/বৃষ্টি ঢেলেছি। ২৬) তারপর যমীনকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করেছি। ২৭) এরপর তার মধ্যে উৎপন্ন করেছি, ২৮) শস্য , আঙুর, ২৯) শাক-সবজি, যয়তুন, ৩০) খেজুর , ঘন বাগান, ৩১) নানা জাতের ফল ও ঘাস, ৩২) তোমাদের ও তোমাদের গৃহপালিত পশুর জীবন ধারণের সামগ্রী হিসেবে। ৩৩) অবশেষে যখন সেই কান ফাটানো আওয়াজ/বিচার দিবস আসবে। ৩৪) সেদিন মানুষ পালাতে থাকবে ৩৫) নিজের ভাই, বোন, ৩৬) মা , বাপ , স্বামি, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের থেকে, ৩৭) তাদের প্রত্যেকে সেদিন এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে যে , নিজের ছাড়া আর কারোর কথা তার মনে থাকবে না। ৩৮) সেদিন কতক চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।৩৯) হাসিমুখ ও খুশীতে ডগবগ করবে। ৪০) আবার কতক চেহারা হবে সেদিন ধূলিমলিন। ৪১) কালিমাখা। ৪২) তারাই হবে কাফির ও পাপী।

৮১ নম্বর, সুরহ কুওউইরতঃ ৮) যখন জীবিত পুঁতে ফেলা মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে। ৯) কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে? ১২) যখন জাহান্নামের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হবে। ১৩) এবং জান্নাতকে নিকটে আনা হবে। ১৪) সে সময় প্রত্যেক ব্যক্তি জনতে পারবে সে কি নিয়ে এসেছে। কাজেই ২৭) এই কুরআন তো সারা জাহানের অধিবাসীদের জন্য একটা উপদেশ ২৮) তোমাদের মধ্য থেকে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য , যে সত্য সরল পথে চলতে চায়। ২৯) আর তোমাদের চাইলেই কিছু হয় না, যতক্ষণ না আললাহ রাব্বুল আলামীন তা চান। 

৮২ নম্বর, সুরহ আন ফাতরতঃ ৬) হে মানুষ, কোন জিনিষ তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে? ৭) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন। ৮) এবং যে আকৃতিতে চেয়েছেন তোমাকে গঠন করেছেন। ৯) কখনো না, বরং ( আসল কথা হচ্ছে এই যে ) তোমরা শাস্তি ও পুরস্কারকে মিথ্যা মনে করছো। ১৭) আর তোমরা কি জানো, ঐ কর্মফল দিনটি কি? ১৯) এটি সেই দিন যখন কারোর জন্য কোন কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না। ফায়সালা সেদিন একমাত্র 'আললাহ র' ইখতিয়ারে থাকবে। 

১ নম্বর, সুরহ ফাতিহাঃ ১) প্রশংসা একমাত্র 'আললাহ র' জন্য যিনি বিশ্ব –জাহানের রব, ২) যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময় ৩) প্রতিদান দিবসের মালিক। ৪) আমরা একমাত্র 'আললাহ র' ইবাদাত করি এবং একমাত্র আপনারই কাছে সাহায্য চাই। ৫) আললাহ আমাদেরকে কুরআনের সোজা পথ দেখিয়ে দিন। ৬) তাদের পথ যাদেরকে আপনি কুরআনের জ্ঞান দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। ৭) তাদের পথ নয়, যারা কুরআনের জ্ঞান অর্জনে উদাসিন/অবজ্ঞা করার কারনে পথভ্রষ্ট হয়েছে। 

৯৮ নম্বর, সুরহ আল বায়ইনাহঃ ৪) প্রথমে যাদেরকে কিতাব/কুরআন দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে তো বিভেদ সৃষ্টি হলো তাদের কাছে ( সত্য পথের ) সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর। ৫) তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র 'আললাহ র' জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, সলাহ কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দীন। ৭) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারা নিশ্চিত ভাবে সৃষ্টির সেরা। ৮) তাদের পুরষ্কার রয়েছে তাদের রবের কাছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত ৷ সেখানে তারা চিরকাল থাকবে ৷ আললাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ৷ এই কুরআন সেই ব্যক্তির জন্য যে তার রবকে ভয় করে। (বায়ইনাহ অর্থ সহজভাবে ব্যাখ্যা করা। এই শব্দ থেকে বাংলায় বয়ান শব্দ বলা হয়)

৪৫ নম্বর, সুরহ জাসিইয়াহঃ ৩) প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মু’মিনদের জন্য আসমান ও যমীনে অসংখ্য নিদর্শন বা আইয়াহ রয়েছে। ৪) তোমাদের নিজেদের সৃষ্টির মধ্যে এবং যেসব জীব-জন্তুকে আললাহ পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার মধ্যে বড় বড় আইয়াহ রয়েছে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণকারী লোকদের জন্য। ৫) তাছাড়া রাত ও দিনের পার্থক্য ও ভিন্নতার মধ্যে, আললাহ আসমান থেকে যে রিযিক নাযিল করেন এবং তার সাহায্যে মৃত যমীনকে যে জীবিত করে তোলেন তার মধ্যে এবং বায়ু প্রবাহের আবর্তনের মধ্যে অনেক আইয়াহ বা নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা বুদ্ধি-বিবেচনাকে কাজে লাগায়। ৬) এগুলো 'আললাহ র' নিদর্শন, যা আমি তোমাদের সামনে যথাযথভাবে বর্ণনা করছি। আললাহ ও তাঁর নিদর্শনাদি ছাড়া আর কি হাদিস বা কথা আছে যার প্রতি এরা ঈমান আনবে? ৭) ধ্বংস এমন প্রত্যেক মিথ্যাবাদী ও দুষ্কর্মশীল ব্যক্তির জন্য ৮) যার সামনে 'আললাহ র' আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় এবং সে তা শোনে তারপর পুরো অহংকার নিয়ে কুফরীকে এমনভাবে আঁকড়ে থাকে যেন সে ঐগুলো শোনেইনি। এই রকম লোককে কষ্টদায়ক আযাবের সুখবর শুনিয়ে দাও। ৯) যখন সে আমার আইয়াহসমূহ জানতে পারে তখন তা নিয়ে উপহাস ও বিদ্রূপ করে। এরূপ প্রতিটি ব্যক্তির জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। ১১) এই কুরআন পুরাপুরি হেদায়াতের কিতাব। সেই লোকদের জন্য কঠিন জ্বালাদায়ক আযাব রয়েছে। যারা নিজেদের রব-এর আইয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করছে। ২১) যেসব লোক অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তারা কি মনে করে নিয়েছে যে, আমি তাদেরকে এবং মু’মিন ও সৎকর্মশীলদেরকে সমপর্যায়ভুক্ত করে দেবো যে তাদের জীবন ও মৃত্যু সমান হয়ে যাবে? তারা যে ফায়সালা করে তা অত্যন্ত জঘন্য। ৩৬) কাজেই সব প্রশংসা 'আললাহ র' যিনি যমীন ও আসমানের মালিক এবং গোটা বিশ্ব জাহানের সবার পালনকর্তা। ৩৭) যমীন ও আসমানে তারই শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।

৪৪ নম্বর, সুরহ দুখনঃ ৩) আললাহ এই কুরআন এক বরকত ও কল্যাণময় রাতে নাযিল করেছেন যাতে মানুষ সতর্ক ও সচেতন হয়। ৪) এটা ছিল সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি বিষয়ে বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়ে থাকে। ৭) আললাহ আসমান ও যমীনের মাঝখানের প্রতিটি জিনিসের রব, যদি তোমরা সত্যিই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণকারী হও। ৮) আললাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তোমাদের রব ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের রব যারা অতীত হয়ে গিয়েছেন। ৯) ( কিন্তু বাস্তবে এসব লোকের দৃঢ় বিশ্বাস নেই) বরং তারা নিজেদের সন্দেহের মধ্যে পড়ে খেলছে। ১০) বেশ তো! সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করো, যে দিন আসমান পরিষ্কার ধোঁয়া বা দুখন নিয়ে আসবে। ১১) এবং তা মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। এটা কষ্টদায়ক শাস্তি। ২৯) অতপর না আসমান তাদের জন্য কেঁদেছে না যমীন এবং সামান্যতম অবকাশও তাদের দেয়া হয়নি। ৫৮) আললাহ এই কুরআনকে সহজ করে দিয়েছেন যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে। 

২ নম্বর, সুরহ বাকরহঃ ১৮৬) হে নাবি, আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও আমি তাদের কাছেই আছি ৷ যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত। একথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে। ২১৩) প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল ৷ (তারপর এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকেনি, তাদের মধ্যে মতভেদের সূচনা হয়) তখন আললাহ নাবি পাঠান ৷ তারা ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতিপ্রদর্শনকারী ৷ আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায় ৷ (এবং প্রথমে তাদেরকে সত্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়নি বলে এ মতভেদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল, তা নয় ) মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের ( কুরআন ) জ্ঞান দান করা হয়েছিল ৷ তারা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে। ( যেমন বুখারি মুসলিম সহ সকল বই, মতবাদ। তাই প্রত্যেক মুসলিমকে ইসলাম জানার জন্য প্রথমে ৩০ পারা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং নিয়মিত, প্রতিদিন এক রুকু বা পাচটা আইয়াত হলেও অর্থবুঝে অধ্যয়ন করতে হবে। এই অভ্যাস অর্জনের পর প্রয়োজন বোধ করলে বুখারি মুসলিমসহ অন্যান্য মানুষের লেখা বই পড়া যেতে পারে ) কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আললাহ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দিয়েছেন,যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল ৷ আললাহ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন। ২৭২) মানুষকে হিদায়াত দান করার দায়িত্ব তোমাদের ওপর অর্পিত হয়নি ৷ আললাহ যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করেন ৷ তোমরা যে ধন-সম্পদ দান –খয়রাত করো, তা তোমাদের নিজেদের জন্য ভালো ৷ তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই তো অর্থ ব্যয় করে থাকো ৷ কাজেই দান-খয়রাত করে তোমরা যা কিছু অর্থ ব্যয় করবে , তার পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোন ক্রমেই তোমাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হবে না ৷ ২১৪) তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি ৷ তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল ৷ এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চীৎকার করে বলে উঠেছিল, অবশ্যিই আললাহ র সাহায্য নিকটেই।

২৩ নম্বর, সুরহ আল মুউমিনুনাঃ ১) নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা ২) যারাঃ নিজেদের সলাহতে বিনয়াবনত হয়। ৩) বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে। ৪) যাকাত অর্থাত ২৪ ঘন্টা আললাহ র' আদেশ নিষেধ পালনে সক্রিয় থাকে। ৫) নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। ৬) নিজেদের স্ত্রীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরষ্কৃত হবে না। ৭) তবে যারা এর বাইরে আরো কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী। ৮) নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। ৯) এবং নিজেদের পাচ ওয়াক্ত সলাহ রক্ষণাবেক্ষণ করে। ১০) তারাই এমন ধরনের উত্তরাধিকারী যারা পুরষ্কার হিসেবে জান্নাত লাভ করবে। ৫১) হে রসূল! পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো। আললাহ জানেন, তোমরা যা কিছু করো। ৫৭) আসলে কল্যাণের দিকে দৌড়ে যাওয়া ও অগ্রসর হয়ে তা অর্জনকারী লোক তো তারাই যারা নিজেদের রবের ভয়ে ভীত। ৫৮) যারা নিজেদের রবের আয়াতের প্রতি ঈমান আনে। ৫৯) যারা নিজেদের রবের সাথে কাউকে শরীক করে না। ৬০) এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে, ৬১) তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। ৬২) আমি কোন ব্যক্তির ওপর,  তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পণ করি না এবং আমার কাছে একটি কিতাব আছে যা (প্রত্যেকের অবস্থা) ঠিকমতো জানিয়ে দেয় আর কোনক্রমেই লোকদের প্রতি জুলুম করা হবে না। ৬৩) কিন্তু তারা এ ব্যাপারে অচেতন। আর তাদের কার্যাবলীও এ পদ্ধতির (যা ওপরে বর্ণনা করা হয়েছে) বিপরীত। তারা নিজেদের এসব কাজ করে যেতে থাকবে, ৬৪) অবশেষে যখন আমি তাদের বিলাসপ্রিয়দেরকে আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করবো তখন তারা আবার চিৎকার করতে থাকবে। ৬৫) এখন বন্ধ করো তোমাদের আর্তচিৎকার, আললাহ র' পক্ষ থেকে এখন কোন সাহায্য দেয়া হবে না। ৬৬) যখন আললাহ র' আইয়াহ তোমাদের শোনানো হতো, তোমরা তো (রসূলের আওয়াজ শুনতেই ) পিছন ফিরে কেটে পড়তে। ৬৭) অহংকারের সাথে তা অগ্রাহ্য করতে, নিজেদের আড্ডায় বসে তার সম্পর্কে গল্প দিতে ও আজেবাজে কথা বলতে। ৬৮) তারা কি কখনো এই কুরআন সম্পর্কে চিন্তা করেনি? অথবা সে এমন কথা নিয়ে এসেছে যা কখনো তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আসেনি? 

৪০ নম্বর, সুরহ মুউমিনুনঃ ৬০) তোমাদের রব বলেনঃ আমাকে ডাকো৷ আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো৷ যেসব মানুষ গর্বের কারণে আমার দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। ৫৫) অতএব ধৈর্যধারণ করো। আললাহ র' ওয়াদা সত্য, নিজের ভূল-ত্রুটির জন্য মাফ চাও। ৫৬) এবং সকাল সন্ধ্যা নিজের রবের প্রশংসার সাথে সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকো। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যারা তাদের কাছে আসা যুক্তি-প্রমাণ ছাড়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে ঝগড়া করছে তাদের মন অহংকারে ভরা কিন্তু তারা যে বড়ত্বের অহংকার করে তারা তার ধারেও ঘেঁষতে পারবে না। তাই আললাহ র' আশ্রয় প্রার্থনা করো তিনি সবকিছু দেখেন এবং শোনেন। ১৪) (সুতরাং হে প্রত্যাবর্তনকারীরা,) দীনকে আললাহ র' জন্য নির্দিষ্ট করে তাঁকে ডাকো, তোমাদের এ কাজ কাফেরদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন। ২১) এসব লোক কি কখনো পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করেনি তাহলে ইতিপূর্বে যারা অতীত হয়েছে তাদের পরিণাম দেখতে পেতো? তারা এদের চেয়ে বেশী শক্তিশালী ছিল এবং এদের চেয়েও বেশী শক্তিশালী স্মৃতিচিহ্ন পৃথিবীর বুকে রেখে গিয়েছে। কিন্তু গোনাহর কারণে আললাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। আললাহ র' হাত থেকে তাদের রক্ষাকারী কাউকে পাওয়া যায়নি। ৮২) সুতরাং এরা কি এ পৃথিবীতে বিচরণ করেনি? তাহলে এরা এদের পূর্ববর্তী লোকদের পরিণতি দেখতে পেত। তারা সংখ্যায় এদের চেয়ে বেশী ছিল, এদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ছিল এবং পৃথিবীর বুকে এদের চেয়ে অধিক জাঁকালো নিদর্শন রেখে গেছে। তারা যা অর্জন করেছিল, তা শেষ পর্যন্ত তাদের কাজে লাগেনি। ৭) আললার র' আরশের ধারক মালাইকাহগন এবং যারা আরশের চারপাশে হাজির থাকে তারা সবাই প্রশংসাসহ তাদের রবের পবিত্রতা বর্ণনা করে। তাঁর প্রতি ঈমান পোষণ করে এবং ঈমানদারদের জন্য দুআ করে। তারা বলেঃ হে আমাদের রব, আপনি আপনার রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন। তাই যারা তাওবা করেছে এবং কুরআনের পথ অনুসরণ করেছে তাদেরকে মাফ করে দিন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। ৮) হে আমাদের রব উপরন্তু তাদেরকে তোমার প্রতিশ্রুত চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আর তাদের বাপ মা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল (তাদেরকেও সেখানে তাদের সাথে পৌঁছিয়ে দিন)৷ নিসন্দেহে আপনি সর্বশক্তিমান ও মহাকৌশলী। ৯) আর তাদেরকে মন্দ কাজসমূহ থেকে রক্ষা করুন। কিয়ামতের দিন আপনি যাকে মন্দ ও অকল্যাণসমূহ থেকে রক্ষা করেছেন তার প্রতি আপনি বড় করুণা করেছেন। এটাই বড় সফলতা। 

২৫ নম্বর, সুরহ ফুরকনঃ ৭৭) হে মুহাম্মদ! লোকদের বলো, “আমার রবের তোমাদের কি প্রয়োজন, যদি তোমরা আললাহ কে না ডাকো৷ এখন যে তোমরা মিথ্যা আরোপ করেছো, শিগগীর এমন শাস্তি পাবে যে, তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে না। ৫৮) ভরসা করো এমন আললাহ র' প্রতি যিনি জীবিত এবং কখনো মরবেন না। তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করো। নিজের বান্দাদের গোনাহের ব্যাপারে কেবল তাঁরই জানা যথেষ্ট। ৬৩) রহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, ৬৪) তোমাদের সালাম। তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়। ৬৫) তারা দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব ! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন, তার আযাব তো সর্বনাশা।৬৬) আশ্রয়স্থল ও আবাস হি্সেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা। ৬৭) তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করেনা বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। ৬৮) তারা আললাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আললাহ যে প্রানকে হারম করেছেন কোনো ন্যায় সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে। ৬৯) কিয়ামতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়। ৭০) তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ইমান এনে সৎকাজ করতে থেকেছে। এ ধরনের লোকদের সৎ কাজগুলোকে আললাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন এবং আললাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। ৭১) যে ব্যক্তি তাওবা করে সৎকাজের পথ অবলম্বন করে, সে তো আললাহ র' দিকে ফিরে আসার মতই ফিরে আসে। ৭২) (আর রহমানের বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং কোন বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মত অতিক্রম করে যায়। ৭৩) তাদের যদি তাদের রবের আইয়াহ শুনিয়ে উপদেশ দেওয়া হয় তাহলে তারা তার প্রতি অন্ধ বধির হয়ে থাকে না। ৭৪) তারা দুআ করে থাকে, “ হে আমাদের রব ! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী করুন এবং আমাদের মুত্তাকীদের নেতা করে দিন। 

১০৬ নম্বর, সুরহ কুরয়শিনঃ ১) যেহেতু কুরাইশরা অভ্যস্ত হয়েছে। ২) ( অর্থাৎ) শীতের ও গ্রীষ্মের সফরে অভ্যস্ত। ৩) কাজেই তাদের এই ঘরের রবের ইবাদাত করা উচিত। ৪) যিনি তাদেরকে ক্ষুধা থেকে রেহাই দিয়ে খাবার দিয়েছেন এবং ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন। ব্যাখ্যাঃ এই সুরহতে শিক্ষা হলো আললাহ আমাদের রব। তিনি আমাদের দেহ, ঘড়, ভবন, বাড়ি, খাবার, নিরাপত্তা সব কিছুই দিয়েছেন। তাই কুরআনে বলা 'আললাহ র' আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে।

০৩ নম্বর, সুরহ ইমরনঃ ১২৮) চূড়ান্ত ফায়সালা করার ক্ষমতায় তোমার কোন অংশ নেই। এটা আললাহ র' ক্ষমতা-ইখতিয়ারভুক্ত, তিনি চাইলে তাদের মাফ করে দেবেন। আবার চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন। কারণ তারা অত্যাচারি। ১২৯) পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সমস্তই আললাহ র' মালিকানাধীন। যাকে চান মাফ করে দেন এবং যাকে চান শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ১৪০) এখন যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তাহলে এর আগে এমনি ধরনের আঘাত লেগেছে তোমাদের বিরোধী পক্ষের গায়েও।  এ – তো কালের উত্থান পতন, মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন করে থাকি। এ সময় ও অবস্থাটি তোমাদের ওপর এ জন্য আনা হয়েছে যে, আললাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে। আর তিনি তাদেরকে বাছাই করে নিতে চান, যারা যথার্থ ( সত্য ও ন্যায়ের ) সাক্ষী হবে  --কেননা জালেমদেরকে আললাহ পছন্দ করেন না। ১৪১) – এবং তিনি এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাচ্চা মুমিনদের বাছাই করে নিয়ে কাফেরদের চিহ্নিত করতে চাইছিলেন। ১৪২) তোমরা কি মনে করে রেখেছ তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আললাহ দেখেনইনি, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং কে তাঁর জন্য সবরকারী।১৪৪) মুহাম্মাদ একজন রসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রসূলও চলে গেছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তাহলে কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে?  মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আললাহ র' কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আললাহ র' কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন। ১৪৫) কোন প্রাণীই আললাহ র' অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে। যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে এবং শোকরকারীদেরকে  আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো। ১৬১) খেয়ানত করা কোন নবীর কাজ হতে পারে না। যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে কিয়ামতের দিন সে নিজের খেয়ানত করা জিনিস সহকারে হাজির হয়ে যাবে। তারপর প্রত্যেকেই তার উপার্জনের পুরোপুরি প্রতিদান পেয়ে যাবে এবং কারো প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।  ১৬২) যে ব্যক্তি সবসময় আললাহ র' সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলে সে কেমন করে এমন ব্যক্তির মতো কাজ করতে পারে , যাকে আললাহ র' গযব ঘিরে ফেলেছে এবং যার শেষ আবাস জাহান্নাম, যা সবচেয়ে খারাপ আবাস। ১৬৩) আললাহ র' কাছে এ উভয় ধরনের লোকদে মধ্যে বহু পর্যায়ের পার্থক্য রয়েছে ৷ আললাহ সবার কার্যকলাপের ওপর নজর রাখেন ৷ ১৮৬) (হে মুসলমানগণ!) তোমাদের অবশ্যি ধন ও প্রাণের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এবং তোমরা আহলি কিতাব ও মুশরিকদের থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি এমন অবস্থায় তোমরা সবর ও তাকওয়ার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো তাহলে তা হবে বিরাট সাহসিকতার পরিচায়ক ৷ ১৮৮) যারা নিজেদের কার্যকলাপে আনন্দিত এবং যে কাজ যথার্থই তারা নিজেরা করেনি সে জন্য প্রশংশা পেতে চায়, তাদেরকে তোমরা আযাব থেকে সংরক্ষিত মনে করো না। আসলে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী রয়েছে। ১৯১) যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আললাহ কে' স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। (তারা আপনা আপনি বলে) হে আমাদের রব, এসব আপনি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে আপনি পাক-পবিত্র ও মুক্ত। ১৯৬) দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আললাহ র' নাফরমান লোকদের চলাফেরা যেন তোমাকে ধোঁকায় ফেলে না দেয় ৷ ১৯৭) এটা নিছক কয়েক দিনের জীবনের সামান্য আনন্দ ফূর্তি মাত্র ৷ তারপর এরা সবাই জাহান্নামে চলে যাবে, যা সবচেয়ে খারাপ স্থান। ২৮) মু’মিনরা যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কখনো কাফেরদেরকে নিজেদের পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে গ্রহণ না করে। যে এমনটি করবে, আললাহ র' সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, তাদের জুলুম থেকে আত্মরক্ষার জন্য তোমরা যদি বাহ্যত এই নীতি অবলম্বন করো তাহলে তা মাফ করে দেয়া হবে। কিন্তু আললাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্তার ভয় দেখাচ্ছেন আর তোমাদের তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।

২ নম্বর, সুরহ বাকরহঃ ২৮৪) আকাশসমূহে  ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আললাহ র সৃষ্টি। তোমরা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করো বা লুকিয়ে রাখো, আল্লাহ অবশ্যি তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন।তারপর তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন, এটা তাঁর আখতিয়ারাধীন ৷ তিনি সব জিনিসের ওপর শক্তি খাটাবার অধিকারী। ২৮৫) রসূল তার রবের পক্ষ থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে ৷ আর যেসব লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে নিয়েছে ৷ তারা সবাই আললাহ কে, তাঁর মালাইকাহ (ফেরেশতা) তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁর রসূলদেরক মানে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ “ আমরা আললাহ র রসূলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি না ৷ আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি। হে রব, আমরা আপনার কাছে গোনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করছি ৷ আমাদেরকে আপনার দিকে ফিরে যেতে হবে। ২৮৬) আললাহ কারোর ওপর তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না। প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই বর্তাবে। (হে ঈমানদারগণ, তোমরা এভাবে দোয়া চাওঃ) হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, আপনি সেগুলো পাকড়াও করবেন না। হে রব, আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিবেন না, যা আপনি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিবেন না। আমাদের প্রতি কোমল হন, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি করুণা করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক ৷ কাফেরদের মোকাবিলায় আপনি আমাদের সাহায্য করুন। ২০১) হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দিন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন। ( এই দুআ দুইটি প্রতিদিন অর্থবুঝে পড়তে হবে )

২১) হে মানব জাতি ৷ ইবাদাত করো তোমাদের রবের , যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবেই তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো। ২২) তিনিই তোমাদের জন্য মাটির শয্যা বিছিয়েছেন, আকাশের ছাদ তৈরি করেছেন, ওপর থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং তার সাহায্যে সব রকমের ফসলাদি উৎপন্ন করে তোমাদের আহার যুগিয়েছেন ৷ কাজেই একথা জানার পর তোমরা অন্যদেরকে আললাহ র প্রতিপক্ষে পরিণত করো না। ২৮) তোমরা আললাহ র সাথে কেমন করে কুফরীর আচরণ করতে পারো? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন,তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন ৷ অতপর তিনি তোমাদের প্রাণ হরণ করবেন এবং অতপর তিনি তোমাদের জীবন দান করবেন ৷ তারপর তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে। ১৮৮) আর তোমরা নিজেদের মধ্যে এক অন্যের সম্পদ অবৈধ পদ্ধতিতে খেয়ো না এবং শাসকদের সামনেও এগুলোকে এমন কোন উদ্দেশ্যে পেশ করো না যার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে তোমরা অন্যের সম্পদের কিছু অংশ খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাও। ১৯৫) আললাহ র পথে ব্যয় করো এবং নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। অনুগ্রহ প্রদর্শনের পথ অবলম্বন করো, কেননা আললাহ অনুগ্রহ প্রদর্শনকারীদেরকে ভালোবাসেন। ২২০) তোমাকে জিজ্ঞেস করছেঃ আমরা আললাহ র পথে কি ব্যয় করবো? বলে দাওঃ যা কিছু তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়। এভাবে আললাহ তোমাদের জন্য দ্ব্যর্থহীন সুস্পষ্ট বিধান বর্ণনা করেন, হয়তো তোমরা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানের জন্য চিন্তা করবে ৷ জিজ্ঞেস করছেঃ এতিমদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে? বলে দাওঃ যে কর্মপদ্ধতি তাদের জন্য কল্যাণকর তাই অবলম্বন করা ভালো। তোমারা যদি তোমাদের নিজেদের ও তাদের খরচপাতি ও থাকা-খাওয়া যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাখো তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই ৷ তারা তো তোমাদের ভাই ৷ অনিষ্টকারী ও হীতকারী উভয়ের অবস্থা আললাহ জানেন। আললাহ চাইলে এ ব্যাপারে তোমাদের কঠোর ব্যবহার করতেন ৷ কিন্তু তিনি ক্ষমতা ও পরাক্রমের অধিকারী হবার সাথে সাথে জ্ঞান ও হিকমতের অধিকারী। ২১৫) লোকেরা জিজ্ঞেস করছে, আমরা কি ব্যয় করবো? জবাব দাও, যে অর্থই তোমরা ব্যয় কর না কেন তা নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো। আর যে সৎকাজই তোমরা করবে সে সম্পর্কে আললাহ অবগত হবেন। ( ২১৫ ও ২২০ এই আইয়াহ বা হাদিস দুইটি হলো যাকাতের সহজ সংজ্ঞা ) ১৬৮) হে মানব জাতি ! পৃথিবীতে যে সমস্ত হালাল ও পাক জিনিস রয়েছে সেগুলো খাও এবং শায়তনের দেখানো পথে চলো না। ১৬৯) সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ৷ সে তোমাদের অসৎকাজ ও অনাচারের নির্দেশ দেয় আর একথাও শেখায় যে, তোমরা আললাহ র নামে এমন সব কথা বলো ( যেমন কুরআন বাদ দিয়ে বুখারি মুসলিম প্রচার করা ) যেগুলো আললাহ বলেছেন বলে তোমাদের জানা নেই। ১৭০) তাদের যখন বলা হয়, আললাহ যে বিধান ( অর্থাত কুরআন ) নাযিল করেছেন তা মেনে চলো, জবাবে তারা বলে ,আমাদের বাপ-দাদাদের যে পথের ( অর্থাত বুখারি, মুসলিম, ফাজায়েলে আমাল প্রভৃতি মানুষের লেখা বইকে সালামুন আলা মুহাম্মাদের হাদিস বিশ্বাস করা ) অনুসারী পেয়েছি আমরা তো সে পথে চলবো৷ আচ্ছা, তাদের বাপ-দাদারা যদি একটুও বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ না করে থেকে থাকে এবং সত্য-সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে থাকে তাহলেও কি তারা তাদের অনুসরণ করে যেতে থাকবে? ১৭১) আললাহ প্রদর্শিত পথে চলতে যারা অস্বীকার করেছে তাদের অবস্থা ঠিক তেমনি যেমন রাখাল তার পশুদের ডাকতে থাকে কিন্তু হাঁক ডাকের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই তাদের কানে পৌছে না। তারা কালা বোবা ও অন্ধ, তাই কিছুই বুঝতে পারে না। ১৭৩) আললাহ র পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যদি কোন নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে এই যে , মৃতদেহ খেয়ো না, রক্ত ও শূকরের গোশত থেকে দূরে থাকো ৷ আর এমন কোন জিনিস খেয়ো না যার ওপর আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম নেয়া হয়েছে ৷ তবে যে ব্যক্তি অক্ষমতার মধ্যে অবস্থান করে এবং এ অবস্থায় আইন ভংগ করার কোন প্রেরণা ছাড়াই বা প্রয়োজনের সীমা না পেরিয়ে এর মধ্য থেকে কোনটা খায়, সে জন্য তার কোন গোনাহ হবে না ৷ আললাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ১৭৪) মূলত আল্লাহ তাঁর কিতাবে যে সমস্ত বিধান অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো যারা গোপন করে এবং সামান্য পার্থিব স্বার্থের বেদীমূলে সেগুলো বিসর্জন দেয় তারা আসলে আগুন দিয়ে নিজেদের পেট ভর্তি করছে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথাই বলবেন না, তাদের পত্রিতার ঘোষণাও দেবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ১৭৫) এরাই হিদায়াতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতা কিনে নিয়েছে এবং ক্ষমার বিনিময়ে কিনেছে শাস্তি ৷ এদের কী অদ্ভুত সাহস দেখো ৷ জাহান্নামের আযাব বরদাস্ত করার জন্যে এরা প্রস্তুত হয়ে গেছে। ১৭৬) এসব্ কিছুই ঘটার কারণ হচ্ছে এই যে আললাহ তো যথার্থ সত্য অনুযায়ী কুরআন নাযিল করেছিলেন কিন্তু যারা কিতাবে মতবিরোধ ( যেমন বুখারি মুসলিম ) উদ্ভাবন করেছে তারা নিজেদের বিরোধের ক্ষেত্রে সত্য থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। ৪৪) তোমরা অন্যদের সৎকর্মশীলতার পথ অবলম্বন করতে বলো কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও ৷ অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করে থাকো। তোমরা কি জ্ঞান বুদ্ধি একটুও কাজে লাগাও না? ৪৫) সবর ও সলাহ সহকারে সাহায্য নাও। নিসন্দেহে নামায-সলাহ বড়ই কঠিন কাজ, ৪৬) কিন্তু সেসব অনুগত বান্দাদের জন্য কঠিন নয় যারা মনে করে, সবশেষে তাদের মিলতে হবে তাদের রবের সাথে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে ৷ ( সলাহ কেবল পাচ ওয়াক্ত নয়। সলাহ ও যিকির ২৪ ঘন্টা। সলাহতের সংজ্ঞা হলো কুরআন অর্থসহ বুঝে অধ্যয়ন করা, আললাহ র প্রশংসা করা, ক্ষমা চাওয়া, দুআ করা ) ১১০) সলাহ প্রতিষ্টা করো ও যাকাত দাও ৷ নিজেদের পরকালের জন্য তোমরা যা কিছু সৎকাজ করে আগে পাঠিয়ে দেবে, তা সবই আললাহ র ওখানে মজুত পাবে ৷ তোমরা যা কিছু করো সবই আললাহ র দৃষ্টিতে রয়েছে। ১৫২) কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ রাখো, ( মানে আললাহ র আদেশ নিষেধ মেনে চলো ) আমিও তোমাদেরকে স্মরণ রাখবো আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং আমার নিয়ামত অস্বীকার করো না। ১৫৩) হে ঈমানদারগণ, সবর ও সলাহতের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আললাহ সবরকারীদের সাথে আছেন। ২৩৮) তোমাদের সলাহসমুহ সংরক্ষণ করো, বিশেষ করে এমন সলাহ যাতে সলাহতের সমস্ত গুণের সমন্বয় ঘটেছে। ( অর্থাত সলাহতে যা বলি ও পড়ি তা অর্থসহ বুঝে বলতে ও পড়তে হবে এবং ২৪ ঘন্টা মেনে চলতে হবে ) আললাহ র সামনে এমনভাবে দাঁড়াও ( দাঁড়াও মানে আললাহ আদেশ নিষেধ মানার ব্যাপারে সচেতন ও আন্তরিক থাকা। এই দাড়াও কেবল পাচ সময়ের সলাহতে নয়, পাশাপাশি ২৪ ঘন্টায় সচেতন ও আন্তরিক থাকা ) যেমন অনুগত সেবকরা দাঁড়ায়। ২৭৭) অবশ্যি যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সলাহ প্রতিষ্টা করে ও যাকাত দেয়, তাদের প্রতিদান নিসন্দেহে তাদের রবের কাছে আছে এবং তাদের কোন ভয় ও মর্মজ্বালাও নেই। ৪৮) আর ভয় করো সেই দিনকে যেদিন কেউ কারো সামান্যতমও কাজে লাগবে না, কারো পক্ষ থেকে সুপারিশ গৃহীত হবে না, বিনিময় নিয়ে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না এবং অপরাধীরা কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে পারবে না। ৮১) যে ব্যক্তিই পাপ করবে এবং পাপের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়বে সে-ই জাহান্নামী হবে এবং জাহান্নামের আগুনে পুড়তে থাকবে চিরকাল। ৮২) আর যারা ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। ৬২) নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো, যারা শেষ নবীর প্রতি ঈমান আনে কিংবা ইহুদি, খৃষ্টান বা সাবি তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই আললাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তার প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের জন্য কোন ভয় ও মর্মবেদনার অবকাশ নেই ৷ ১২১) যাদেরকে আমি কুরআন দিয়েছি তারা তাকে যথাযথভাবে অর্থ বুঝে পাঠ করে ৷ তারা তার ওপর সাচ্চা দিলে ঈমান আনে ৷ আর যারা তার সাথে কুফরীর নীতি অবলম্বন করে তারাই আসলে ক্ষতিগ্রস্ত। ১২৩) আর সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না, কারোর থেকে ফিদিয়া (বিনিময়)গ্রহণ করা হবে না, কোন সুপারিশ মানুষের জন্য লাভজনক হবে না এবং অপরাধীরা কোথাও কোন সাহায্য পাবে না। ১৪১) অতিতের মৃত ব্যক্তিরা যা কিছু উপার্জন করেছিল তা ছিল তাদের নিজেদের জন্য। আর তোমরা বর্তমান জিবিত ব্যক্তিরা যা উপার্জন করবে তা তোমাদের জন্য তাদের কাজের ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে না। ২৪২) এমনিভাবে আললাহ তাঁর বিধান পরিষ্কার ভাষায় তোমাদের জানিয়ে দেন ৷ আশা করা যায়, তোমরা ভেবেচিন্তে কাজ করবে। ২৫৪) হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যা কিছু ধন-সম্পদ দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো, সেই দিনটি আসার আগে, যেদিন কেনাবেচা চলবে না, বন্ধুত্ব কাজে লাগবে না এবং কারো কোন সুপারিশও কাজে আসবে না ৷ আর যালিম আসলে সেই ব্যক্তি যে কুফরী নীতি অবলম্বন করে। ( কুফরি মানে অস্বিকার করা। অর্থাত আললাহ র সকল আদেশ নিষেধ মানে না। নিজের ইচ্ছা মতো যেটা পছন্দ হয় সেটা মানে আর যেটা পছন্দ হয় না সেটা মানে না )

১৩৮) বলোঃ “আললাহ র রঙ ধারণ করো !  আর কার রঙ তার চেয়ে ভলো? আমরা তো তাঁরই ইবাদাতকারী ৷” ৪২) মিথ্যার রঙে রাঙিয়ে সত্যকে সন্দেহযুক্ত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করার চেষ্টা করো না৷ ( রং ও সত্য অর্থ কুরআনে বলা আললাহ র আদেশ নিষেধ ) ১৫৫) আর নিশ্চয়ই আললাহ ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবেন। এই অবস্থায় যারা সবর করে ১৫৬) এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে। ইন্না লিললাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজি উনা। ১৫৭) —তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও ৷ তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী।

*** নিচের ২৬১ থেকে ২৭১ হাদিসসমুহে যাকাতের নিয়ম ও সংজ্ঞা আছে ***

২৬১) যারা  নিজেদের ধন-সম্পদ আললাহ র পথে ব্যয় করে  তাদের ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হয় এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, যার প্রত্যেকটি শীষে থাকে একশতটি করে শস্যকণা ৷ এভাবে আল্লাহ যাকে চান , তার কাজে প্রাচুর্য দান করেন ৷ তিনি মুক্তহস্ত ও সর্বজ্ঞ। ২৬২) যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আললাহ র পথে ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর নিজেদের অনুগ্রহের কথা বলে বেড়ায় না আর কাউকে কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন দুঃখ মর্মবেদনা ও ভয় নেই। ২৬৩) একটি মিষ্টি কথা এবং কোন অপ্রীতিকর ব্যাপারে সামান্য উদারতা ও ক্ষমা প্রদর্শন এমনি দানের চেয়ে ভালো, যার পেছনে আসে দুঃখ ও মর্মজ্বালা ৷ মূলত আল্লাহ করো মুখাপেক্ষী নন, সহনশীলতাই তাঁর গুণ৷ ২৬৪) হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা বলে বেড়িয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাতকে সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করে দিয়ো না যে নিছক লোক দেখাবার জন্য নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, অথচ সে আললাহ র উপর ঈমান রাখে না এবং পরকালেও বিশ্বাস করে না। তার ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ একটি মসৃণ পাথরখন্ডের ওপর মাটির আস্তর জমেছিল৷ প্রবল বর্ষণের ফলে সমস্ত মাটি ধুয়ে গেলো ৷ এখন সেখানে রয়ে গেলো শুধু পরিষ্কার পাথর খন্ডটি। এই ধরনের লোকেরা দান – খয়রাত করে যে নেকী অর্জন করে বলে মনে করে তার কিছুই তাদের হাতে আসে না ৷ আর কাফেরদের সোজা পথ দেখানো আললাহ র নিয়ম নয়। ২৬৫) বিপরীত পক্ষে যারা পূর্ণ মানসিক একাগ্রতা ও অবিচলতা সহকারে একমাত্র আললাহ র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের এই ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ কোন উচ্চ ভূমিতে একটি বাগান, প্রবল বৃষ্টিপাত হলে সেখানে দ্বিগুণ ফলন হয় ৷ আর প্রবল বৃষ্টিপাত না হলে সামান্য হালকা বৃষ্টিপাতই তার জন্য যথেষ্ট। আর তোমরা যা কিছু করো সবই আললাহ র দৃষ্টি সীমার মধ্যে রয়েছে। ২৬৬) তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে, তার একটি সবুজ শ্যামল বাগান থাকবে, সেখানে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, খেজুর, আংগুর ও সব রকম ফলে পরিপূর্ণ থাকবে এবং বাগানটি ঠিক এমন এক সময় প্রবল উষ্ণ বায়ু প্রবাহে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে সে নিজে বৃদ্ধ হয়ে গেছে এবং তার সন্তানরাও তখনো যোগ্য হয়ে উঠেনি? এভাবেই আললাহ তাঁর কথা তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পারো। ২৬৭) হে ঈমানদারগণ! যে অর্থ তোমরা উপার্জন করেছো এবং যা কিছু আমি জমি থেকে তোমাদের জন্য বের করে দিয়েছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট অংশ আললাহ র পথে ব্যয় করো৷ তাঁর পথে ব্যয় করার জন্য তোমরা যেন সবচেয়ে খারাপ জিনিস বাছাই করার চেষ্টা করো না অথচ ঐ জিনিসই যদি কেউ তোমাদের দেয়, তাহলে তোমরা কখনো তা নিতে রাযী হও না, যদি না তা নেবার ব্যাপারে তোমরা চোখ বন্ধ করে থাকো ৷ তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আললাহ করো মুখাপেক্ষী নন এবং তিনি সর্বোত্তম গুণে গণান্বিত। ২৬৮) শায়তন তোমাদের দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং লজ্জাকর কর্মনীতি অবলম্বন করতে প্রলুব্ধ করে কিন্তু আললাহ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের আশ্বাস দেন৷ আল্লাহ বড়ই উদারহস্ত ও মহাজ্ঞানী। ২৬৯) তিনি যাকে চান, হিকমত দান করেন ৷ আর যে ব্যক্তি হিকমত লাভ করে সে আসলে বিরাট সম্পদ লাভ করেছে ৷ এই কথা থেকে কেবলমাত্র তারাই শিক্ষা লাভ করে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী৷ ২৭০) তোমরা যা কিছু ব্যয় করেছো এবং যা মানতও করেছো আললাহ তা সবই জানেন। আর জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই। ২৭১) যদি তোমাদের দান-সাদ্‌কাগুলো প্রকাশ্যে করো, তাহলে তাও ভালো , তবে যদি গোপনে অভাবীদের দাও, তাহলে তোমাদের জন্য এটিই বেশী ভালো। এভাবে তোমাদের অনেক গোনাহ নির্মুল হয়ে যায়। আর তোমরা যা কিছু করে থাকো আললাহ অবশ্যি তা জানেন। ২৭৪) যারা নিজেদের ধন-সম্পদ দিনরাত গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন ভয় ও দুঃখ নেই।

*** শারিরিক অক্ষমতা ব্যতিত ভিক্ষা করা হারম ***

২৭৩) বিশেষ করে এমন সব গরীব লোক সাহায্য লাভের অধিকারী, যারা আললাহ র কাজে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থোপার্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারে না এবং তাদের আত্মমর্যাদাবোধ দেখে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে সচ্ছল বলে মনে করে। তাদের চেহারা দেখেই তুমি তাদের ভেতরের অবস্থা জানতে পারো। মানুষের পেছনে লেগে থেকে কিছু চাইবে, এমন লোক তারা নয়। তাদের সাহায্যার্থে তোমরা যা কিছু অর্থ ব্যয় করবে, তা আললাহ র দৃষ্টির অগোচরে থাকবে না।

৯ নম্বর, সুরহ তাওবাঃ ৫৫) তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না৷ আললাহ চান, এই জিনিসগুলোর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি দিতে আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায়। ৮৫) তাদের ধনাঢ়্যতা ও তাদের অধিক সংখ্যক সন্তান সন্তুতি তোমাকে যেন প্রতারিত না করে। আললাহ তো তাদেরকে এই ধন ও সম্পদের সাহায্যে দুনিয়ায়ই সাজা দেবার সংকল্প করে ফেলেছেন এবং কাফের থাকা অবস্থায় তাদের মৃত্যু হোক-এটাই চেয়েছেন।

২০ নম্বর,  সুরহ তহাঃ ১৩১) আর চোখ তুলেও তাকাবে না দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকে, যা আমি এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকদেরকে দিয়ে রেখেছি।  এসব তো আমি এদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্য দিয়েছি এবং তোমার রবের দেয়া হালাল রিযিকই উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী। ১৩২) নিজের পরিবার পরিজনকে সলাহ পড়ার হুকুম দাও এবং নিজেও তা নিয়মিত পালন করতে থাকো। আমি তোমার কাছে কোন রিযিক চাই না, রিযিক তো আমিই তোমাকে দিচ্ছি এবং শুভ পরিণাম তাকওয়ার জন্যই।

৪ নম্বর সুরহ নিসাঃ ৩২) আর যা কিছু আললাহ তোমাদের কাউকে অন্যদের মোকাবিলায় বেশী দিয়েছেন তার আকাংখা করো না। যা কিছু পুরুষেরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী আর যা কিছু মেয়েরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী। তবে আললাহ র' কাছে সততার সাথে চেষ্টার পাশাপাশি সম্পদ, জ্ঞান, কল্যান ও মেহেরবানীর জন্য দুআ করতে থাকো। নিশ্চিতভাবেই আললাহ সমস্ত জিনিসের জ্ঞান রাখেন।

১৩ নম্বর, সুরহ রদঃ ২৬) আললাহ যাকে ইচ্ছা রিযিক সম্প্রসারিত করেন এবং যাকে চান মাপাজোকো রিযিক দান করেন। এরা দুনিয়ার জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় সামান্য সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।

১৫ নম্বর, সুরহ আল হিজরিঃ ২) এমন এক সময় আসা বিচিত্র নয় যখন আজ যারা (ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করতে) অস্বীকার করছে, তারা অনুশোচনা করে বলবে, হায়, যদি আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম। ৩) ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফূর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক৷ শিগ্‌গির এরা জানতে পারবে। ৮৮) আমি তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের দুনিয়ার যে সম্পদ দিয়েছি সেদিকে তুমি চোখ উঠিয়ে দেখো না এবং তাদের অবস্থা দেখে মুনঃক্ষুন্নও হয়ো না। তাদেরকে বাদ দিয়ে মুমিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও।

১৮ নম্বর, সুরহ কাহাফঃ ৪৬) এই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত্র। আসলে তো স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের কাছে ফলাফলের দিক দিয়ে উত্তম এবং এগুলোই উত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা সফল হবার মাধ্যম। ৪৭) সেই দিনের কথা চিন্তা করা দরকার যেদিন আমি পাহাড়গুলোকে চালিত করবো এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে সম্পূর্ণ অনাবৃত আর আমি সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে এমনভাবে ঘিরে এনে একত্র করবো যে, (পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মধ্য থেকে) একজনও বাকি থাকবে না।

২৮ নম্বর, সুরহ কসসঃ ৭৬) একথা সত্য, কারূণ ছিল মূসার সম্প্রদায়ের লোক, তারপর সে নিজের সম্প্রদায়ে বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠলো৷ আর আমি তাকে এতটা ধনরত্ন দিয়ে রেখেছিলাম যে, তাদের চাবিগুলো বলবান লোকদের একটি দল বড় কষ্টে বহন করতে পারতো। একবার যখন এ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে বললো, "অহংকার করো না, আললাহ অহংকারকারীদেরকে পছন্দ করেন না। ৭৭) আললাহ তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা দিয়ে আখেরাতের ঘর তৈরি করার কথা চিন্তা করো এবং দুনিয়া থেকেও নিজের অংশ ভুলে যেয়ো না। অনুগ্রহ করো যেমন আললাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেস্টা করো না। আললাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না৷" ৭৮) এতে সে বললো, "এসব কিছু তো আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি তার ভিত্তিতে আমাকে দেয়া হয়েছে৷" --সে কি এ কথা জানতো না যে, আললাহ এর পূর্বে এমন বহু লোককে ধ্বংস করে দিয়েছেন যারা এর চেয়ে বেশী বাহুবল ও জনবলের অধিকারী ছিল? অপরাধীদেরকে তো তাদের গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় না। ৭৯) একদিন সে সম্প্রদায়ের সামনে বের হলো পূর্ণ জাঁকজমক সহকারে। যারা দুনিয়ার জীবনের ঐশ্বর্যের জন্য লালায়িত ছিল তারা তাকে দেখে বললো, "আহা! কারূনকে যা দেয়া হয়েছে তা যদি আমরাও পেতাম! সে তো বড়ই সৌভাগ্যবান৷" ৮০) কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলতে লাগলো, "তোমাদের ভাবগতিক দেখে আফসোস হয়৷ আললাহ র' সওয়াব তার জন্য ভালো যে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আর এ সম্পদ সবরকারীরা ছাড়া আর কেউ লাভ করে না৷" ৮১) শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ও তার গৃহকে ভূগর্ভে পুতে ফেললাম৷ তখন আললাহ র' মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো সাহায্যকারীদের কোন দল ছিল না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে পারলো না। ৮২) যারা আগের দিন তার মতো মর্যাদালাভের আকাংখা পোষণ করছিল তারা বলতে লাগলো, "আফসোস, আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার রিযিক প্রসারিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সীমিত রিযিক দেন। যদি আললাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করতেন, তাহলে আমাদেরও ভূগর্ভে পুতে ফেলতেন। আফসোস, আমাদের মনে ছিল না, কাফেররা সফলকাম হয় না। ৮৩) সে আখেরাতের গৃহ তো আমি তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেবো যারা পৃথিবীতে নিজেদের বড়াই চায় না এবং চায় না বিপর্যয় সৃষ্টি করতে৷ আর শুভ পরিণাম রয়েছে মুত্তাকীদের জন্যই। ৮৪) যে কেউ ভাল কাজ নিয়ে আসবে তার জন্য রয়েছে তার চেয়ে ভাল ফল এবং যে কেউ খারাপ কাজ নিয়ে আসে তার জানা উচিৎ যে, অসৎ কর্মশীলরা যেমন কাজ করতো তেমনটিই প্রতিদান পাবে। 

১৯ নম্বর, সুরহ মারইয়ামঃ ৫৫) সে নিজের পরিবারবর্গকে সলাহ ও যাকাতের হুকুম দিতো এবং নিজের রবের কাছে ছিল একজন পছন্দনীয় ব্যক্তি। ৫৯) তারপর এদের পর এমন নালায়েক লোকেরা এদের স্থলাভিষিক্ত হলো যারা সলাহ নষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির কামনার দাসত্ব করলো। তাই শীঘ্রই তারা গোমরাহীর পরিণামের মুখোমুখি হবে। ৭৩) এদেরকে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন অস্বীকারকারীরা ঈমানদারদেরকে বলে, ”বলো, আমাদের দু’দলের মধ্যে কে ভালো অবস্থায় আছে এবং কার মজলিসগুলো বেশী জাঁকালো? ৭৪) অথচ এদের আগে আমি এমন কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা এদের চাইতে বেশী সাজ-সরঞ্জামের অধিকারী ছিল এরা বাহ্যিক শান শওকতের দিক দিয়েও ছিল এদের চেয়ে বেশী অগ্রসর। ৭৫) এদেরকে বলো, যে ব্যক্তি গোমরাহীতে লিপ্ত হয় করুণাময় তাকে ঢিল দিতে থাকেন, এমনকি এ ধরনের লোকেরা যখন এমন জিনিস দেখে নেয় যার ওয়াদা তাদের সাথে করা হয়- তা আল্লাহর আযাব হোক বা কিয়ামতের সময় তখন তারা জানতে পারে, কার অবস্থা খারাপ এবং কার দল দুর্বল!  ৮০) সে সাজসরঞ্জাম ও জনবলের কথা এ ব্যক্তি বলছে তা সব আমার কাছেই থেকে যাবে এবং সে একাকী আমার সামনে হাযির হয়ে যাবে। ৯৮) এদের পূর্বে আমি কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি। আজ কি কোথাও তাদের নাম-নিশানা দেখতে পাও অথবা কোথাও শুনতে পাও তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ?

১৭ নম্বর, সুরহ বানি ইসরঈলঃ ৯০) তারা বলে,“আমরা তোমার কথা মানবো না যতক্ষণ না তুমি ভূমি বিদীর্ণ করে আমাদের জন্য একটি ঝরণাধারা উৎসারিত করে দেবে। ৯১) অথবা তোমার খেজুর ও আংগুরের একটি বাগান হবে এবং তুমি তার মধ্যে প্রবাহিত করে দেবে নদী-নালা। ৯২) অথবা তুমি আকাশ ভেংগে টুকরো টুকরো করে তোমার হুমকি অনুযায়ী আমাদের ওপর ফেলে দেবে৷ অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে। ৯৩) অথবা তোমার জন্য সোনার একটি ঘর তৈরি হবে৷ অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে এবং তোমার আরোহণ করার কথাও আমরা বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি একটি লিখিত পত্র আনবে, যা আমরা পড়বো। হে মুহাম্মাদ, এদেরকে বলো, পাক-পবিত্র আমার পরওয়ারদিগার, আমি কি একজন বাণীবাহক মানুষ ছাড়া অন্য কিছু?

৪৮ নম্বর, সুরহ ফাতাহঃ ১৫) তোমরা যখন গনীমাতের মাল লাভ করার জন্য যেতে থাকবে তখন এ পিছনে রেখে যাওয়া লোকেরা তোমাকে অবশ্যই বলবে যে, আমাদরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও।এরা আললাহ র' ফরমান পরিবর্তন করে দিতে চায়। এদের স্পষ্ট ভাষায় বলে দাওঃ ‘তোমরা কখনই আমাদের সাথে যেতে পারো না। আললাহ তো আগেই একথা বলে দিয়েছেন। এর বলবেঃ “না, তোমরাই বরং আমাদের প্রতি হিংসা পোষণ কর৷” (অথচ এটা কোন হিংসার কথা নয়) আসলে সঠিক কথা খুব কমই বুঝে। ( গনিমাত মানে শত্রুর বিরুদ্ধে করা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ। যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি তারা এই সম্পদের দাবি করতে পারে না। এটাই এই হাদিসে বোঝানো হয়েছে। এখানেও ভিক্ষা করতে নিষেধ করা হলো। ) ১৬) এ পিছনে রেখে যাওয়া বদ্দু আরবদেরকে বলে দাওঃ “খুব শীঘ্রই তোমাদেরকে এমন সব লোকের সাথে লড়াই করার জন্য ডাকা হবে যারা বড়ই শক্তি সম্পন্ন।” তোমাদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে, কিংবা তারা অনুগত হয়ে যাবে। সে সময় তোমরা জিহাদের নির্দেশ পালন করলে আললাহ তোমাদেরকে উত্তম সওয়াব দিবেন৷ আর যদি তোমরা পিছনে হটে যাও যেমন পূর্বে হটে গিয়েছিল, তাহলে আললাহ তোমাদেরকে কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি দেবেন। ১৭) যদি অন্ধ, পংগু ও রোগাক্রান্ত লোক জিহাদে না আসে তাহলে কোন দোষ নেই। যে কেউ আললাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, আললাহ তাকে সেসব জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেসবের নিম্নদেশে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহমান থাকবে। আর যে মুখ ফিরিয়ে থাকবে আললাহ তাকে মর্মান্তিক আযাব দেবেন। ২৯) মুহাম্মাদ 'আললাহ র' রসূল। আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়াপরবশ। তোমরা যখনই দেখবে তখন তাদেরকে চেহারায় সিজদার চিহ্ন বর্তমান যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়। তাদের এ পরিচয় তাওরাতে দেয়া হয়েছে। আর ইনযীলে তাদের উপমা পেশ করা হয়েছে এই বলে যে, একটি শস্যক্ষেত যা প্রথমে অঙ্কুরোদগম ঘটালো। পরে তাকে শক্তি যোগালো তারপর তা শক্ত ও মজবুত হয়ে স্বীয় কাণ্ডে ভর করে দাঁড়ালো। যা কৃষককে খুশী করে কিন্তু কাফির তার পরিপুষ্টি লাভ দেখে মনোকষ্ট পায়। এ শ্রেণীর লোক যারা ঈমান আনয়ন করছে এবং সৎকাজ করেছে আললাহ তাদেরকে ক্ষমা ও বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ( এই হাদিসে যেমন সলাহ ও মুসলিমদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি কৃষকের উদাহারনের মাধ্যমে ভিক্ষা না করে চাষ বা কাজ করে জিবিকা অর্জনের গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। এই উদাহরনে কাফির বলতে ইমানহিন ও কাজ না করে বসে থাকা অলস ব্যক্তি উভয়কেই বোঝানো হয়েছে। কারন অলস ব্যক্তি অন্যের ফসল হতে দেখে হিংসা করে। অথচ সে জমি চাষ করলে আললাহ তাকেও ফসল দিতেন। ) ১৪) আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর বাদশাহীর (প্রভূত্ব ও প্রশাসন ক্ষমতা) একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আললাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। আললাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।

*** সুদ ও অতিরিক্ত লাভ করা হারম। ব্যবসা অর্থ যে লেনদেনে উভয়ই লাভবান হয়। চাকরিতে বেতন কাঠামো বৈষম্য করাও সুদ। উদাহরনস্বরুপ প্রতিষ্টান, দেশ বা সমাজের পারিশ্রমিক একই সময় ও পরিশ্রমের কাজে সর্বনিম্ন বেতন যদি বিশ হাজার বাংলাদেশি ডলার হয় তাহলে কাজের গুরত্বের বিবেচনায় সর্বোচ্চ বেতন চল্লিশ হাজার বাংলাদেশি  ডলার হতে পারে। তার বেশি হলে সুদ বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রমান নিচের হাদিসসমুহ ***

০৩ নম্বর, সুরহ আল ইমরনঃ ৯২) তোমরা নকী অর্জন করতে পারো না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো আললাহ র' পথে ব্যয় করো।  আর তোমরা যা ব্যয় করবে আললাহ তা থেকে বেখবর থাকবেন না। ৯১) নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, যারা কুফরী অবলম্বন করেছে এবং কুফরীর অবস্থায় জীবন দিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি নিজেকে শাস্তি থেকে বাঁচাবার জন্য সারা পৃথিবীটাকে স্বর্ণে পরিপূর্ণ করে বিনিময় স্বরুপ পেশ করে তাহলেও তা গ্রহণ করা হবে না। এই ধরনের লোকদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তারা নিজেদের জন্য কোন সাহায্যকারীও পাবে না। ২৯) লোকদের জানিয়ে দাও, তোমাদের মনের মধ্যে যা কিছু আছে তাকে তোমরা লুকিয়ে রাখো বা প্রকাশ করো, আললাহ তা জানেন। পৃথিবী ও আকাশের কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে অবস্থান করছে না এবং তার কর্তৃত্ব সবকিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত। ৩০) সেদিন আসবে, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের ফল সামনে উপস্থিত পাবে, তা ভালো কাজই হোক আর মন্দ কাজ। সেদিন মানুষ কামনা করবে, হায়! যদি এখনো এই দিন এর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতো। আললাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্তার ভয় দেখাচ্ছেন। আর তিনি নিজের বান্দাদের গভীর শুভাকাংখী। 

৪৩ নম্বর, সুরহ যুখরুফঃ ৩৩) সমস্ত মানুষ একই পথের অনুসারি হয়ে যাবে যদি এই আশংকা না থাকত তাহলে যারা দয়াময় 'আললাহ র' সাথে কুফরি করে আমি তাদের ঘরের ছাদ,৩৪) যে সিঁড়ি দিয়ে তারা তাদের বালাখানায় ওঠে সেই সিঁড়ি, দরজাসমূহ এবং যে সিংহাসনের ওপর তারা বালিশে হেলান দিয়ে বসে তা সবই রৌপ্য এবং স্বর্ণের বানিয়ে দিতাম। ৩৫) এগুলে তো শুধু পার্থিব জীবনের উপকরণ, তোমার রবের দরবারে আখেরাতে শুধু মুত্তাকীদের জন্য নির্দিষ্ট। 

৪ নম্বর, সুরহ নিসাঃ ৩৭) আর আললাহ এমন লোকদেরকেও পছন্দ করেন না, যারা কৃপণতা করে, অন্যদেরকেও কৃপণতা করার নির্দেশ দেয় এবং আললাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন সেগুলো গোপন করে। এই ধরনের অনুগ্রহ অস্বীকারকারী লোকদের জন্য আমি লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তির ব্যবস্তা করে রেখেছি। ৩৮) আর আললাহ তাদেরকেও অপছন্দ করেন, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ কেবল মাত্র লোকদেরকে দেখাবার জন্য ব্যয় করে এবং আসলে না আললাহ র' প্রতি ঈমান রাখে আর না আখেরাতের দিনের প্রতি। সত্য বলতে কি, শায়তন যার সাথী হয়েছে তার ভাগ্যে বড় খারাপ সাথীই জুটেছে। ৩৯) হ্যাঁ, যদি তারা আললাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনতো এবং যা কিছু আললাহ তাদেরকে দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করতো, তাহলে তাদের মাথায় এমন কী আকাশ ভেঙে পড়তো? যদি তারা এমনটি করতো, তাহলে তাদের নেকীর অবস্থা আললাহ র' কাছে গোপন থেকে যেতো না। ৪০) আললাহ কারো ওপর এক অণু পরিমাণও জুলুম করেন না। যদি কেউ একটি সৎকাজ করে, তাহলে আললাহ তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন। 

২ নম্বর, সুরহ বাকরহঃ ২১২) যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবন বড়ই প্রিয় ও মনোমুগ্ধকর করে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ এ ধরনের লোকেরা ঈমানের পথ অবলম্বনকারীদেরকে বিদ্রুপ করে৷ কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকওয়া অবলম্বন –কারীরাই তাদের মোকাবিলায় উন্নত মর্যাদার আসীন হবে ৷ আর দুনিয়ার জীবিকার ক্ষেত্রে আললাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত দান করে থাকেন ৷  ২০৫) যখন সে কর্তৃত্ব লাভ করে, পৃথিবীতে তার সমস্ত প্রচেষ্টা-সাধনা নিয়োজিত করে বিপর্যয় সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত ও মানব বংশ ধ্বংস করার কাজে ৷ অথচ আললাহ (যাকে সে সাক্ষী মেনেছিল )বিপর্যয় মোটেই পছন্দ করেন না। ২০৬) আর যখন তাকে বলা হয়, আললাহ কে ভয় করো তখন তার আত্মাভিমান তাকে পাপের পথে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়, এই ধরনের লোকের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট এবং সেটি নিকৃষ্টতম আবাস। ২০৭) অন্যদিকে মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অভিযানে যে নিজের প্রাণ সমর্পণ করে। এই ধরনের বান্দার ওপর আললাহ অত্যন্ত স্নেহশীল ও মেহেরবান। ২০৮) হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শায়তনের অনুসারী হয়ো না,কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন। ২০৯) তোমাদের কাছে যে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হিদায়াত (কুরআন) এসে গেছে তা লাভ করার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তাহলে ভালোভাবে জেনে রাখো আললাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। ২১০) (এই সমস্ত উপদেশ ও হিদায়াতের পরও যদি লোকেরা সোজা পথে না চলে, তাহলে ) তারা কি এখন এই অপেক্ষায় বসে আছে যে, আললাহ মেঘমালার ছায়া দিয়ে মালাইকাহদের বিপুল জমায়েত সংগে নিয়ে নিজেই সামনে এসে যাবেন এবং তখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে? সমস্ত ব্যাপার তো শেষ পর্যন্ত আললাহ র সামনে উপস্থাপিত হবে।

২৭৫) কিন্তু যারা সুদ খায়  তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে৷ তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “ ব্যবসা তো সুদেরই মতো। অথচ আললাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।  কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আললাহ র কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে।  আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী ৷ সেখানে সে থাকবে চিরকাল। ২৭৬) আললাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন। আর আললাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না। ২৭৮) হে ঈমানদারগণ ! আললাহ কে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো। ২৭৯) কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আললাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। এখনো তাওবা করে নাও ( এবং সুদ ছেড়ে দাও ) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে ৷ তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না। ২৮০) তোমাদের ঋণগ্রহীতা অভাবী হলে সচ্ছলতা লাভ করা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আর যদি সাদ্‌কা করে দাও, তাহলে এটা তোমাদের জন্য বেশী ভালো হবে, যদি তোমরা জানতে।২৮১) যেদিন তোমরা আললাহ র দিকে ফিরে আসবে সেদিনের অপমান ও বিপদ থেকে বাঁচো। সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার উপার্জিত সৎকর্মের ও অপকর্মের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং কারো ওপর কোন জুলুম করা হবে না। ২৮২) হে ঈমানদাগণ! যখন কোন নির্ধারিত সময়ের জন্য তোমরা পরস্পরে মধ্যে ঋণের লেনদেন করো তখন লিখে রাখো উভয় পক্ষের মধ্যে ইনসাফ সহকারে এক ব্যক্তি দলীল লিখে দেবে ৷ আললাহ যাকে লেখাপড়ার যোগ্যতা দিয়েছেন তার লিখতে অস্বীকার করা উচিত নয় ৷ সে লিখবে এবং লেখার বিষয়বস্তু বলে দেবে সেই ব্যক্তি যার ওপর ঋণ চাপছে (অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা ) ৷ তার রব আললাহ কে ভয় করো। যে বিষয় স্থিরীকৃত হয়েছে তার থেকে যেন কোন কিছুর কম বেশি না করা হয় ৷ কিন্তু ঋণগ্রহীতা যদি বুদ্ধিহীন বা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে না পারে, তাহলে তার অভিভাবক ইনসাফ সহকারে লেখার বিষয়বস্তু বলে দেবে ৷ তারপর নিজেদের পুরুষদের মধ্য থেকে দুই ব্যক্তিকে তার স্বাক্ষী রাখো ৷ আর যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলা সাক্ষী হবে , যাতে একজন ভুলে গেলে অন্যজন তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে ৷ এসব সাক্ষী এমন লোকদের মধ্য থেকে হতে হবে যাদের সাক্ষ্য তোমাদের কাছে গ্রহণীয়।সাক্ষীদেরকে সাক্ষ দেবার জন্য বললে তারা যেন অস্বীকার না করে ৷ ব্যাপার ছোট হোক বা বড়,সময়সীমা নির্ধারণ সহকারে দলীল লেখাবার ব্যাপারে তোমরা গুড়িমসি করো না ৷ আললাহ র কাছে তোমাদের জন্য এই পদ্ধতি অধিকতর ন্যায়সংগত, এর সাহায্যে সাক্ষ প্রতিষ্ঠা বেশী সহজ হয় এবং তোমাদের সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত হবার সম্ভবনা কমে যায় ৷ তবে যেসব ব্যবসায়িক লেনদেন তোমরা পরস্পরের মধ্যে হাতে হাতে করে থাকো, সেগুলো না লিখলে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু ব্যবসায়িক বিষয়গুলো স্থিরীকৃত করার সময় সাক্ষী রাখো ৷ লেখক ও সাক্ষীকে কষ্ট দিয়ো না। এমনটি করলে গোনাহের কাজ করবে ৷ আললাহ র গযব থেকে আত্মরক্ষা করো ৷ তিনি তোমাদের সঠিক কর্মপদ্ধতি শিক্ষা দান করেন এবং তিনি সবকিছু জানেন। 

সিইয়াম বা রোযার নিয়মঃ সিইয়াম অর্থ সকল পাপ, খাদ্য ও যৌন কাজ থেকে বিরত থাকা।

১৮৩) হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর সিইয়াম ফারদ করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল ৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। ১৮৪) এ কতিপয় নিদিষ্ট দিনের সিইয়াম। যদি তোমাদের কেউ হয়ে থাকে রোগগ্রস্ত অথবা মুসাফির তাহলে সে যেন অন্য দিনগুলোয় এই সংখ্যা পূর্ণ করে ৷ আর যাদের সিইয়াম রাখার সামর্থ আছে (এরপরও রাখে না) তারা যেন ফিদিয়া দেয়। একটি সিইয়ামের ফিদিয়া একজন মিসকিনকে খাওয়ানো৷ আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে কিছু বেশী সৎকাজ করে , তা তার জন্য ভালো। তবে যদি তোমরা সঠিক বিষয় অনুধাবন করে থাকো। তাহলে তোমাদের জন্য সিইয়াম রাখাই ভালো। ১৮৫) রমাদন মাস, এই মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে , যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য –সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয় ৷ কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এই মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে সিইয়াম রাখা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনগুলোয় সিইয়াম সংখ্যা পূর্ণ করে। আললাহ তোমাদের সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান না ৷ তাই তোমাদেরকে এই পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আললাহ তোমাদের যে হিদায়াত দান করেছেন সে জন্য যেন তোমরা আললাহ র শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো। ১৮৭) রোযার সময় রাতের বেলা স্ত্রীদের কাছে যাওয়া তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে ৷ তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আললাহ জানতে পেরেছেন, তোমরা চুপি চুপি নিজেরাই নিজেদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছিলে ৷ কিন্তু তিনি তোমাদের অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন ৷ এখন তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে রাত্রিবাস করো এবং যে স্বাদ আললাহ তোমাদের জন্য বৈধ করে দিয়েছেন তা গ্রহণ করো। আর পানাহার করতে থাকো।যতক্ষণ না রাত্রির কালো রেখার বুক চিরে প্রভাতের সাদা রেখা সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। তখন এসব কাজ ত্যাগ করে রাত পর্যন্ত নিজের রোযা পূর্ণ করো। আর যখন তোমরা মসজিদে ই’তিকাফে বসো তখন স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। এগুলো আললাহ র নির্ধারিত সীমারেখা, এর ধারে কাছেও যেয়ো না। এভাবে আললাহ তাঁর বিধান লোকদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, আশা করা যায় এর ফলে তারা ভুল কর্মনীতি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে ৷  

*** হাজের নিয়ম। হাজ অর্থ ভ্রমন করা *** 

১৯৬) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যখন হজ্জ ও উমরাহ করার নিয়ত করো তখন তা পূর্ণ করো ৷ আর যদি কোথাও আটকা পড়ো তাহলে যে কুরবানী তোমাদের আয়ত্বাধীন হয় তাই আললাহ র উদ্দেশ্যে পেশ করো। আর কুরবানী তার নিজের জায়গায় পৌছে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা নিজেদের মাথা মুণ্ডন করো না। তবে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় অথবা যার মাথায় কোন কষ্ট থাকে এবং সেজন্য মাথা মুণ্ডন করে তাহলে তার ‘ফিদিয়া’ হিসেবে রোযা রাখা বা সাদকা দেয়া অথবা কুরবানী করা উচিত। তারপর যদি তোমাদের নিরাপত্তা অর্জিত হয় ( এবং তোমরা হজ্জের আগে মক্কায় পৌছে যাও ) তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি হজ্জের সময় আসা পর্যন্ত উমরাহর সুযোগ লাভ করে সে যেন সামর্থ অনুযায়ী কুরবানী করে ৷ আর যদি কুরবানীর যোগাড় না হয়, তাহলে হজ্জের যামানায় তিনটি রোযা এবং সাতটি রোযা ঘরে ফিরে গিয়ে, এভাবে পুরো দশটি রোযা যেন রাখে ৷ এই সুবিধে তাদের জন্য যাদের বাড়ী-ঘর মসজিদে হারামের কাছাকাছি নয় ৷ আললাহ র এ সমস্ত বিধানের বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং ভালোভাবে জেনে নাও আল্লাহ কঠিন শাস্তি প্রদানকারী। ১৯৭) হজ্জের মাসগুলো সবার জানা ৷ যে ব্যক্তি এই নিদিষ্ট মাসগুলোতে হজ্জ করার নিয়ত করে, তার জেনে রাখা উচিত, হজ্জের সময়ে সে যেন যৌন সম্ভোগ দুষ্কর্ম ও ঝগড়া –বিবাদে লিপ্ত না হয় ৷ আর যা কিছু সৎকাজ তোমরা করবে আললাহ তা জানেন ৷ হজ্জ সফরের জন্য পাথেয় সংগে নিয়ে যাও আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া ৷ কাজেই হে বুদ্ধিমানেরা ! আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো। ১৯৮) আর হজ্জের সাথে সাথে তোমরা যদি তোমাদের রবের অনুগ্রহের সন্ধান করতে থাকো তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। তারপর আরাফাত থেকে অগ্রসর হয়ে ‘মাশআরুর হারাম’ (মুয্‌দালিফা) এর কাছে থেমে আললাহ র যিকির করো এবং এমনভাবে স্মরণ করো যেভাবে স্মরণ/যিকির করার জন্য তিনি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ নয়তো ইতিপূর্বে তোমরা তো ছিলে পথভ্রষ্টদের অন্তরভুক্ত। ১৯৯) তারপর যেখান থেকে আর সবাই ফিরে আসে তোমরাও সেখান থেকে ফিরে এসো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিসন্দেহে তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ২০০) অতপর যখন তোমরা নিজেদের হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করবে তখন আললাহ কে এমনভাবে স্মরণ করবে যেমন ইতিপূর্বে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে স্মরণ করতে বরং তার চেয়ে অনেক বেশী করে স্মরণ করবে ৷ (তবে আললাহ কে  স্মরণকারী লোকদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে) তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে যে বলে, হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়ায় সবকিছু দিয়ে দাও ৷ এই ধরনের লোকের জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। ২০৩) এই হাতেগোণা কয়েকটি দিন, এ দিন ক’টি তোমাদের আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করতে হবে ৷ যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু’দিনে ফিরে আসে, তাতে কোন ক্ষতি নেই ৷ আর যদি কেউ একটু বেশীক্ষণ অবস্থান করে ফিরে আসে তবে তাতেও কোন ক্ষতি নেই। তবে শর্ত হচ্ছে, এই দিনগুলো তাকে তাকওয়ার সাথে অতিবাহিত করতে হবে ৷ আললাহ র নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো এবং খুব ভালোভাবে জেনে রাখো, একদিন তাঁর দরবারে তোমাদের হাযির হতে হবে। 

৫২ নম্বর, সুরহ আত তুরঃ ২) এবং এমন একখানা খোলা কুরআনের শপথ ৩) যা সুক্ষ্ম চামড়ার মানুষের মুখের উপর লিখিত ৭) তোমার রবের আযাব অবশ্যই আপতিত হবে। ৮) যার রোধকারী কেউ নেই। ২১) যারা ঈমান গ্রহণ করেছ এবং তাদের সন্তানরাও ঈমানসহ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে আমি তাদের সেসব সন্তানকেও তাদের সাথে (জান্নাতে) একত্রিত করে দেব। আর তাদের আমালের কোন ঘাটতি আমি তাদেরকে দেব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জিত কর্মের হাতে জিম্মী রয়েছে। ২৬) জান্নাতিরা বলবে আমরা প্রথমে নিজেদের সমাজে লোকদের মধ্যে ভয়ে ভয়ে জীবন যাপন করতাম। ২৭) পরিশেষে আললাহ আমাদের ওপর মেহেরবানী করেছেন এবং দগ্ধকারী আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন। ২৮) অতীত জীবনে আমরা 'আললাহ র' কাছেই দুআ করতাম। সত্যিই আললাহ অতি বড় উপকারী ও দয়াবান। ২৯) তাই তুমি উপদেশ দিতে থাকো। 'আললাহ র' মেহেরবাণীতে তুমি গণকও নও, পাগলও নও। ৩৩) তারা কি বলে যে, এই ব্যক্তি নিজেই কুরআন রচনা করে নিয়েছে? প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে তারা ঈমান গ্রহণ করতে চায় না। ৩৪) তাদের এই কথার ব্যাপারে তারা যদি সত্যবাদী হয় তাহলে এই কুরআনের হাদিসের মতো একটি হাদিস তৈরি করে আনুক। ৩৫) কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এরা কি নিজেরাই সৃষ্টি হয়েছে? নাকি এরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তা? ৩৬) নাকি পৃথিবী ও আসমানকে এরাই সৃষ্টি করেছে? প্রকৃত ব্যাপার হলো, তারা বিশ্বাস পোষণ করে না। ৩৭) তোমার রবের ভাণ্ডারসমূহ কি এদের অধিকারে নাকি ঐ সবের ওপর তাদের কৃর্তৃত্ব বলে? ৪০) তুমি কি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক দাবী করছো যে, তাদের ওপর জোরপূর্বক চাপানো জরিমানার বোঝার নীচে তারা অত্যাচারিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে? ৪১) তাদের কাছে কি অদৃশ্য সত্যসমূহের জ্ঞান আছে যার ভিত্তিতে তারা নানারকম ইসলামি সাহিত্য, বুখারি মুসলিম লিখছে? তারা কি কোন চক্রান্ত আঁটতে চাচ্ছে? ৪২) (যদি তাই হয়) তাহলে কাফিররা নিজেরাই উল্টো নিজেদের ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়বে। ৪৩) আললাহ ছাড়া কি তাদের আর কোন ইলাহ আছে? যে শির্‌ক তারা করছে আললাহ তা থেকে পবিত্র।৪৪) এরা যদি আসমানের একটি অংশ পতিত হতে দেখে তাহলেও বলবে, এ তো ধাবমান মেঘরাশি।৪৫) অতএব, তাদেরকে আপন অবস্থায় থাকতে দাও। যাতে তারা সে দিনটির সাক্ষাত পায় যেদিন তাদেরকে মেরে ভূপাতিত করা হবে। ৪৬) সেদিন না তাদের কোন চালাকি কাজে আসবে, না কেউ তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। ৪৮) হে নবী! তোমার রবের ফায়সালা আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করো। তুমি আমার চোখে চোখেই আছ। তুমি যখন উঠবে তখন তোমার রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করো। ৪৯) তাছাড়া রাত্রিকালেও তার তাসবীহ পাঠ করো। আর তারকারাজি যখন অস্তমিত হয় সে সময়ও পড়ো। (আললাহ শেষ দুই হাদিসে সলাহ ও যিকিরের আদেশ করেছেন। লক্ষ করুন এখানে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি। তাই সলাহ পাচ ওয়াক্তের পাশাপাশি ২৪ ঘন্টায় পালন করতে হবে) 

৫৬ নম্বর, সুরহ আল ওয়াকিআহঃ ৭) বিচার দিবসে মানুষকে তিনটি দলে বিভক্ত করা হবে। ডান দিকের জান্নাতি লোক। ৯) বাম দিকের জাহান্নামি লোক। বাম দিকের লোকদের (দুর্ভাগ্যের) পরিণতি আর কি বলা যাবে। ১০-১১) আর অগ্রগামীরা তো অগ্রগামীই। তারাই তো নৈকট্য লাভকারী জান্নাতি।৫৭) আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি। এরপরও কেন তোমরা মানছো না? ৫৮) তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যে শুক্র তোমরা নিক্ষেপ করো, ৫৯) তা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি তোমরা করো না। আললাহ এইসকল সৃষ্টির একক স্রষ্টা। ৬০) আললাহ তোমাদের মধ্যে মৃত্যুকে বন্টন করেছেন। ৬১) তোমাদের আকার আকৃতি পাল্টে দিতে এবং তোমাদের অজানা কোন আকার -আকৃতিতে সৃষ্টি করতে আললাহ সক্ষম। ৬২) নিজেদের প্রথমবার সৃষ্টি সম্পর্কে তোমরা জানো। তবুও কেন শিক্ষা গ্রহণ করো না? ৬৩) তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, জমিতে যে বীজ তোমরা বপন করে থাকো, ৬৪) তা থেকে ফসল উৎপন্ন তোমরা করো, নাকি আললাহ করেন? ৬৫) আললাহ চাইলে এসব ফসলকে দানাবিহীন ভূষি বানিয়ে দিতে পারেন। তখন তোমরা নানা রকমের কথা বলতে থাকবে। ৬৮) তোমরা কি চোখ মেলে কখনো দেখেছো, যে পানি তোমরা পান করো, ৬৯) মেঘ থেকে তা তোমরা বর্ষণ করো, নাকি তার বর্ষণকারী হচ্ছেন আললাহ? ৭০) আললাহ চাইলে তা লবণাক্ত বানিয়ে দিতে পারতেন। তা সত্ত্বেও তোমরা কৃতজ্ঞ ও শোকরগোজার হও না কেন? ৭১) তোমরা কি কখনো লক্ষ করেছো, -এই যে আগুন তোমরা জ্বালাও তার গাছ, ৭২) তোমরা সৃষ্টি করো, নাকি তার সৃষ্টিকর্তা আললাহ? ৭৩) আললাহ এইসকল সৃষ্টিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার উপকরণ এবং মুখাপেক্ষীদের জন্য জীবনোপকরণ বানিয়েছেন। ৭৭) এ তো মহা সম্মানিত কুরআন। ৭৮) একখানা সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ। ৮০) এটা বিশ্ব-জাহানের রবের নাযিলকৃত। ৮১) এরপরও কি তোমরা এই হাদিসের প্রতি উপেক্ষার ভাব প্রদর্শন করছো? ৮২) এ নিয়ামতে তোমরা নিজেদের অংশ রেখেছো এই যে, তোমরা তা অস্বীকার করছো? ৮৩-৮৭) তোমরা যদি কারো অধীন না হয়ে থাকো  এবং নিজেদের এ ধারণার ব্যাপারে যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে মৃত্যুপথযাত্রীর প্রাণ যখন কণ্ঠনালীতে উপনীতে হয়  এবং তোমরা নিজ চোখে দেখতে পাও যে, সে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে সে সময় তোমরা বিদায়ী প্রাণবায়ূকে ফিরিয়ে আন না কেন?  সে সময় তোমাদের চেয়ে আললাহ তার অধিকতর নিকটে থাকেন।  কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। ৮৮) মৃত সেই ব্যক্তি যদি অগ্রগামিদের কেউ হয়ে থাকে ৮৯) তাহলে তার জন্য রয়েছে আরাম-আয়েশ, উত্তম রিযিক এবং নিয়ামত ভরা জান্নাত। ৯০) আর সে যদি ডান দিকের লোক হয়ে থাকে ৯১) তাহলে তাকে সাদর অভিনন্দন জানানো হবে এভাবে যে, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ৯২-৯৪) আর সে যদি অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের কেউ হয়ে থাকে তাহলে তার সমাদরের জন্য রয়েছে ফূটন্ত গরম পানি এবং জাহান্নামের ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা। ৯৫) এই সবকিছুই অকাট্য সত্য। ৯৬) অতএব, মহান রবের নামের তাসবীহ-তথা পবিত্রতা ঘোষণা করো। 



Popular posts from this blog

কুরআনই হাদিস

Salah