কুরআন থেকে সালামুন আলা মুসার জিবনি শিক্ষা করি

সুরহ মারইয়ামঃ 

(৫১) আর এ কিতাবে মূসার কথা স্মরণ করো। সে ছিল এক বাছাই করা ব্যক্তি এবং ছিল রাসূল-নবী। (৫২) আমি তাকে তূরের ডান দিক থেকে ডাকলাম এবং গোপন আলাপের মাধ্যমে তাকে নৈকট্য দান করলাম। (৫৩) আর নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারুণকে নবী বানিয়ে তাকে সাহায্যকারী হিসেবে দিলাম।

সুরহ বা-ক-রহঃ 

(৪৭) হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা আমি তোমাদের দান করেছিলাম এবং একথাটিও যে, আমি দুনিয়ার সমস্ত জাতিদের ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। (৪৮) আর ভয় করো সেই দিনকে যেদিন কেউ কারো সামান্যতমও কাজে লাগবে না, কারো পক্ষ থেকে সুপারিশ গৃহীত হবে না, বিনিময় নিয়ে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না এবং অপরাধীরা কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে পারবে না। (৪৯) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা ফেরাউনী দলের দাসত্ব থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম। তারা তোমাদের কঠিন যন্ত্রণায় নিমজ্জিত করে রেখেছিল, তোমাদের পুত্র সন্তানদের যবেহ করতো এবং তোমাদের কন্যা সন্তানদের জীবিত রেখে দিতো। মূলত এ অবস্থায় তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বড় কঠিন পরীক্ষা ছিল। (৫০) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা সাগর চিরে তোমাদের জন্য পথ করে দিয়েছিলাম, তারপর তার মধ্য দিয়ে তোমাদের নির্বিঘ্নে পার করে দিয়েছিলাম, আবার সেখানে তোমাদের চোখের সামনেই ফেরাউনী দলকে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। (৫১) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা মূসাকে চল্লিশ দিন-রাত্রির জন্য ডেকে নিয়েছিলাম, তখন তার অনুপস্থিতিতে তোমরা বাছুরকে নিজেদের উপাস্যে পরিণত করেছিল। সে সময় তোমরা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করেছিলে। (৫২) কিন্তু এরপরও আমরা তোমাদের মাফ করে দিয়েছিলাম এ জন্য যে, হয়তো এবার তোমরা কৃতজ্ঞ হবে। (৫৩) স্মরণ করো (ঠিক যখন তোমরা এই যুলুম করছিলে সে সময়) আমরা মূসাকে কিতাব ও ফুরকান দিয়েছিলাম, যাতে তার মাধ্যমে তোমরা সোজা পথ পেতে পারো। (৫৪) স্মরণ করো যখন মূসা(এই নিয়ামত নিয়ে ফিরে এসে) নিজের জাতিকে বললো, “হে লোকেরা! তোমরা বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে নিজেদের ওপর বড়ই যুলুম করেছো, কাজেই তোমরা নিজেদের স্রষ্টার কাছে তাওবা করো এবং নিজেদেরকে হত্যা করো, এরই মধ্যে তোমাদের স্রষ্টার কাছে তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সে সময় তোমাদের স্রষ্টা তোমাদের তাওবা কবুল করে নিয়েছিলেন, কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী। (৫৫) স্মরণ করো, যখন তোমরা মূসাকে বলেছিলে, “আমরা কখনো তোমার কথায় বিশ্বাস করবো না, যতক্ষণ না আমরা স্বচক্ষে আল্লাহকে তোমার সাথে প্রকাশ্যে (কথা বলতে) দেখবো।” সে সময় তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের ওপর একটি ভয়াবহ বজ্রপাত হলো, তোমরা নিস্প্রাণ হয়ে পড়ে গেলে। (৫৬) কিন্তু আবার আমরা তোমাদের বাঁচিয়ে জীবিত করলাম, হয়তো এ অনুগ্রহের পর তোমরা কৃতজ্ঞ হবে। (৫৭) আমরা তোমাদের ওপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম, তোমাদের জন্য সরবরাহ করলাম মান্না ও সালওয়ার খাদ্য এবং তোমাদের বললাম, যে পবিত্র দ্রব্য-সামগ্রী আমরা তোমাদের দিয়েছি তা থেকে খাও। কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরা যা কিছু করেছে তা আমাদের ওপর যুলুম ছিল না বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে। (৫৮) আরো স্মরণ করো যখন আমরা বলেছিলাম, “তোমাদের সামনের এই জনপদে প্রবেশ করো এবং সেখানকার উৎপন্ন দ্রব্যাদি যেমন ইচ্ছা খাও মজা করে। কিন্তু জনপদের দুয়ারে সিজদাবনত হয়ে প্রবেশ করবে ‘হিত্তাতুন’ ‘হিত্তাতুন’ বলতে বলতে। আমরা তোমাদের ত্রুটিগুলো মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি অত্যধিক অনুগ্রহ করবো।” (৫৯) কিন্তু যে কথা বলা হয়েছিল যালেমরা তাকে বদলে অন্য কিছু করে ফেললো। শেষ পর্যন্ত যুলুমকারীদের ওপর আমরা আকাশ থেকে আযাব নাযিল করলাম। এ ছিল তারা যে নাফরমানি করছিল তার শাস্তি। (৬০) স্মরণ করো, যখন মূসা তার জাতির জন্য পানির দোয়া করলো, তখন আমরা বললাম, অমুক পাথরের ওপর তোমার লাঠিটি মারো। এর ফলে সেখান থেকে বারোটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত হলো। প্রত্যেক গোত্র তার পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিল। (সে সময় এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, ) আল্লাহ‌ প্রদত্ত রিযিক খাও, পান করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। (৬১) স্মরণ করো, যখন তোমরা বলেছিলে, “হে মূসা! আমরা একই ধরনের খাবারের ওপর সবর করতে পারি না, তোমার রবের কাছে দোয়া করো যেন তিনি আমাদের জন্য শাক-সব্জি, গম, রসুন, পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি কৃষিজাত দ্রব্যাদি উৎপন্ন করেন।” তখন মূসা বলেছিল, “তোমরা কি একটি উৎকৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস নিতে চাও? তাহলে তোমরা কোন নগরে গিয়ে বসবাস করো, তোমরা যা কিছু চাও সেখানে পেয়ে যাবে।” অবশেষে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলো যার ফলে লাঞ্ছনা, অধঃপতন, দুরবস্থা ও অনটন তাদের ওপর চেপে বসলো এবং আল্লাহর গযব তাদেরকে ঘিরে ফেললো। এ ছিল তাদের আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করার এবং পয়গম্বরদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ফল। এটি ছিল তাদের নাফরমানির এবং শরীয়াতের সীমালংঘনের ফল। (৬২) নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো, যারা শেষ নবীর প্রতি ঈমান আনে কিংবা ইহুদি, খৃষ্টান বা সাবি তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তার প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের জন্য কোন ভয় ও মর্মবেদনার অবকাশ নেই। (৬৩) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা ‘তূর’কে তোমাদের ওপর উঠিয়ে তোমাদের থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং বলেছিলামঃ “যে কিতাব আমরা তোমাদেরকে দিচ্ছি তাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তার মধ্যে যে সমস্ত নির্দেশ ও বিধান রয়েছে সেগুলো স্মরণ রেখো। এভাবেই আশা করা যেতে পারে যে, তোমরা তাকওয়ার পথে চলতে পারবে।” (৬৪) কিন্তু এরপর তোমরা নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে। তবুও আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত তোমাদের সঙ্গ ছাড়েনি নয়তো তোমরা কবেই ধ্বংস হয়ে যেতে। (৬৫) নিজেদের জাতির সেইসব লোকের ঘটনা তো তোমাদের জানাই আছে যারা শনিবারের বিধান ভেঙেছিল। আমরা তাদের বলে দিলামঃ বানর হয়ে যাও এবং এমনভাবে অবস্থান করো যাতে তোমাদের সবদিক থেকে লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়। (৬৬) এভাবে আমরা তাদের পরিণতিকে সমকালীন লোকদের এবং পরবর্তী বংশধরদের জন্য শিক্ষণীয় এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য মহান উপদেশে পরিণত করেছি। (৬৭) এরপর স্মরণ করো সেই ঘটনার কথা যখন মূসা তার জাতিকে বললো, আল্লাহ‌ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করা হুকুম দিচ্ছেন। তারা বললো, তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো? মূসা বললো, নিরেট মূর্খদের মতো কথা বলা থেকে আমি আল্লাহ‌ কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (৬৮) তারা বললো, আচ্ছা তাহলে তোমার রবের কাছে আবেদন করো তিনি যেন সেই গাভীর কিছু বিস্তারিত বিবরণ আমাদের জানিয়ে দেন। মূসা জবাব দিল আল্লাহ‌ বলছেন, সেটি অবশ্যি এমন একটি গাভী হতে হবে যে বৃদ্ধা নয়, একেবারে ছোট্ট বাছুরটিও নয় বরং হবে মাঝারি বয়সের। কাজেই যেমনটি হুকুম দেয়া হয় ঠিক তেমনটিই করো। (৬৯) আবার তারা বলতে লাগলো, তোমার রবের কাছে আরো জিজ্ঞেস করো, তার রংটি কেমন? মূসা জবাব দিল, তিনি বলছেন, গাভীটি অবশ্যি হলুদ রংয়ের হতে হবে, তার রং এতই উজ্জল হবে যাতে তা দেখে মানুষের মন ভরে যাবে। (৭০) আবার তারা বললো, তোমার রবের কাছ থেকে এবার পরিষ্কার ভাবে জেনে নাও, তিনি কেমন ধরনের গাভী চান? গাভীটি নির্ধারণ করার ব্যাপারে আমরা সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছি। আল্লাহ‌ চাইলে আমরা অবশ্যি এটি বের করে ফেলবো। (৭১) মূসা জবাব দিল আল্লাহ‌ বলছেন, সেটি এমন একটি গাভী যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করা হয়না, জমি চাষ বা ক্ষেতে পানি সেচ কোনটিই করে না, সুস্থ-সবল ও নিখুঁত। একথায় তারা বলে উঠলো, হ্যাঁ,, এবার তুমি ঠিক সন্ধান দিয়েছো। অতঃপর তারা তাকে যবেহ করলো, অন্যথায় তারা এমনটি করতো বলে মনে হচ্ছিল না। 


(২৪৮) এই সঙ্গে তাদের নবী তাদের একথাও জানিয়ে দিলঃ আল্লাহ‌র পক্ষ থেকে তাকে বাদশাহ নিযুক্ত করার আলামত হচ্ছে এই যে, তার আমলে সেই সিন্ধুকটি তোমরা ফিরিয়ে পাবে, যার মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে মূসার পরিবারের ও হারুনের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র এবং যাকে এখন ফেরেশতারা বহন করে ফিরছে। যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে এটি তোমাদের জন্য অনেক বড় নিশানী।

সুরহ নিসাঃ


(১৫৩) এই আহ্‌লি কিতাবরা যদি আজ তোমার কাছে আকাশ থেকে তাদের জন্য কোন লিখন অবতীর্ণ করার দাবী করে থাকে, তাহলে ইতিপূর্বে তারা এর চাইতেও বড় ধৃষ্ঠতাপূর্ণ দাবী মূসার কাছে করেছিল। তারা তো তাঁকে বলেছিল, আল্লাহকে প্রকাশ্যে আমাদের দেখিয়ে দাও। তাদের এই সীমালংঘনের কারণে অকস্মাৎ তাদের ওপর বিদ্যুত আপতিত হয়েছিল। তারপর সুস্পষ্ট নিশানীসমূহ দেখার পরও তারা বাছুরকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছিল। এরপরও আমি তাদেরকে ক্ষমা করেছি। আমি মূসাকে সুস্পষ্ট ফরমান দিয়েছি। (১৫৪) এবং তূর পাহাড়ে তাদের ওপর উঠিয়ে তাদের থেকে (এই ফরমানে আনুগত্যের) অঙ্গীকার নিয়েছি। আমি তাদেরকে হুকুম দিয়েছি, সিজ্‌দানত হয়ে দরজার মধ্যে প্রবেশ করো। আমি তাদেরকে বলেছি, শনিবারের বিধান লংঘন করো না এবং এর সপক্ষে তাদের থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছি। (১৫৫) শেষ পর্যন্ত তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতের ওপর মিথ্যা আরোপ করার জন্য, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং “আমাদের দিল আবরণের মধ্যে সুরক্ষিত” তাদের এই উক্তির জন্য(তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ মূলত তাদের বাতিল পরস্তির জন্য আল্লাহ‌ তাদের দিলের ওপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এ জন্য তারা খুব কমই ঈমান এনে থাকে। (১৫৬) তারপর তাদের নিজেদের কুফরীর মধ্যে অনেক দূর অগ্রসর হয়ে মারয়ামের ওপর গুরুতর অপবাদ লাগাবার জন্য (১৫৭) এবং তাদের ‘আমরা আল্লাহর রসূল মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ্‌কে হত্যা করেছি’, এই উক্তির জন্য (তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলেও চড়ায়নি বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্য সন্দিগ্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তারাও আসলে সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোন জ্ঞান নেই, আছে নিছক আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুসৃতি। নিঃসন্দেহে তারা ঈসা মসীহকে হত্যা করেনি। (১৫৮) বরং আল্লাহ‌ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ জবরদস্ত শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়। (১৫৯) আর আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে এমন একজনও হবে না। যে তার মৃত্যুর পূর্বে তার ঈমান আনবে না, এবং কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (১৬০) মোটকথা এই ইহুদী মতাবলম্বীদের এহেন জুলুম নীতির জন্য, তাদের মানুষকে ব্যাপকভাবে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার জন্য (১৬১) তাদের সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য, আমি এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিস তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল। আর তাদের মধ্য থেকে যারা কাফের তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি। (১৬২) কিন্তু তাদের মধ্য থেকে যারা পাকাপোক্ত জ্ঞানের অধিকারী ও ঈমানদার তারা সবাই সেই শিক্ষার প্রতি ঈমান আনে, যা তোমার প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছিল। এ ধরনের ঈমানদার নিয়মিতভাবে নামায কায়েমকারী, যাকাত আদায়কারী এবং আল্লাহ‌ ও পরকালে বিশ্বাসী লোকদেরকে আমি অবশ্যি মহাপুরস্কার দান করবো।
(১৬৪) এর পূর্বে যেসব নবীর কথা তোমাকে বলেছি তাদের কাছেও আমি অহী পাঠিয়েছি এবং যেসব নবীর কথা তোমাকে বলিনি তাদের কাছেও। আমি মূসার সাথে কথা বলেছি ঠিক যেমনভাবে কথা বলা হয়। (১৬৫) এই সমস্ত রসূলকে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছিল, যাতে তাদেরকে রসূল বানিয়ে পাঠাবার পর লোকদের কাছে আল্লাহর মোকাবিলায় কোন প্রমাণ না থাকে। আর আল্লাহ‌ সর্বাবস্থায়ই প্রবল পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।

সুরহ মা-ইদাহঃ


(২০) স্মরণ করো যখন মূসা তাঁর জাতিকে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা আল্লাহর সেই নিয়ামতের কথা মনে করো, যা তিনি তোমাদের দান করেছিলেন। তিনি তোমাদের মধ্যে বহু নবীর জন্ম দিয়েছেন, তোমাদেরকে শাসকে পরিণত করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন সব জিনিস দিয়েছেন, যা দুনিয়ায় আর কাউকে দেননি। (২১) হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! সেই পবিত্র ভূখণ্ডে প্রবেশ করো, যা আল্লাহ‌ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন। পিছনে হটো না। পিছনে হটলে তোমরা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (২২) তারা জবাব দিল, “হে মূসা! সেখানে একটা অতীব দুর্ধর্ষ জাতি বাস করে। তারা সেখান থেকে বের হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা কখনই সেখানে যাবো না। হ্যাঁ, যদি তারা বের হয়ে যায় তাহলে আমরা সেখানে প্রবেশ করতে প্রস্তুত আছি।” (২৩) ঐ ভীরু লোকদের মধ্যে দু’জন এমন লোকও ছিল যাদের প্রতি আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ বর্ষণ করেছিলেন। তারা বললো, “এ শক্তিশালী লোকদের মোকাবিলা করে দরজার মধ্যে ঢুকে পড়ো। ভেতরে প্রবেশ করলে তোমরাই জয়ী হবে। আর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো তাহলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করো।” (২৪) কিন্তু তারা আবার সেই একই কথা বললোঃ “হে মূসা! যতক্ষণ তারা সেখানে অবস্থান করবে আমরা ততক্ষণ কোনক্রমেই সেখানে যাবো না। কাজেই তুমি ও তোমার রব, তোমরা দু’জনে সেখানে যাও এবং লড়াই করো, আমরা তো এখানে বসেই রইলাম।” (২৫) এ কথায় মূসা বললো, “হে আমার রব! আমার ও আমার ভাই ছাড়া আর কারোর ওপর আমার কোন ইখতিয়ার নেই। কাজেই তুমি এ নাফরমান লোকদের থেকে আমাকে আলাদা করে দাও।” (২৬) আল্লাহ জবাব দিলেনঃ ঠিক আছে, তাহলে ঐ দেশটি চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্য হারাম। তারা পৃথিবীতে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াবে, এ নাফরমানদের প্রতি কখনো সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করো না।

সুরহ আনআমঃ 


১৫৪) তারপর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যা সৎকর্মশীল মানুষের প্রতি নিয়ামতের পূর্ণতা এবং প্রত্যেকটি জিনিসের বিশদ বিবরণ, সরাসরি পথ নির্দেশ ও রহমত ছিল, (এবং তা এ জন্য বনী ইসরাঈলকে দেয়া হয়েছিল যে,) সম্ভবত লোকেরা নিজেদের রবের সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান আনবে।

সুরহ আল আরফঃ

 
(৬) কাজেই যাদের কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং রসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করবো (তারা পয়গাম পৌঁছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন করেছে এবং এর কি জবাব পেয়েছে) ।

 (১০৩) তারপর এ জাতিগুলোর পর (যাদের কথা ওপরে বলা হয়েছে) আমার নিদর্শনসমূহ সহকারে মূসাকে পাঠাই ফেরাউন ও তার জাতির প্রধানদের কাছে। কিন্তু তারাও আমার নিদর্শনসমূহের ওপর জুলুম করে। ফলতঃ এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল একবার দেখো। (১০৪) মূসা বললোঃ “হে ফেরাউন! আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট থেকে প্রেরিত। (১০৫) আমার দায়িত্বই হচ্ছে, আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবো না। আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিযুক্তির সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছি। কাজেই তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।” (১০৬) ফেরাউন বললোঃ “তুমি যদি কোন প্রমাণ এনে থাকো এবং নিজের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও, তাহলে তা পেশ করো।” (১০৭) মূসা নিজের লাঠিটি ছুড়ে দিল। অমনি তা একটি জ্বলজ্যান্ত অজগরের রূপ ধারণ করলো। (১০৮) সে নিজের হাত বের করলো, তৎক্ষণাত দেখা গেলো সেটি দর্শকদের সামনে চমকাচ্ছে। (১০৯) এ দৃশ্য দেখে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানরা পরস্পরকে বললোঃ “নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি একজন অত্যন্ত দক্ষ যাদুকর, (১১০) তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বে-দখল করতে চায়। এখন তোমরা কি বলবে বলো?" (১১১) তখন তারা সবাই ফেরউনকে পরামর্শ দিলো, তাকে ও তার ভাইকে অপেক্ষারত রাখুন এবং নগরে নগরে সংগ্রাহক পাঠান। (১১২) তারা প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে আপনার কাছে নিয়ে আসবে। (১১৩) অবশেষে যাদুকরেরা ফেরাউনের কাছে এলো। তারা বললোঃ “যদি আমরা বিজয়ী হই, তাহলে অবশ্যি এর প্রতিদান পাবো তো?” (১১৪) ফেরাউন জবাব দিলোঃ “হ্যাঁ, তাছাড়া তোমরা আমার দরবারের ঘনিষ্ঠ জনেও পরিণত হবে।” (১১৫) তখন তারা মূসাকে বললোঃ “তুমি ছুড়ঁবে না, না আমরা ছুঁড়বো?” (১১৬) মূসা জবাব দিলোঃ “তোমরাই ছোঁড়ো।” তারা যখনই নিজেদের যাদুর বাণ ছুঁড়লো তখনই তা লোকদের চোখে যাদু করলো, মনে আতঙ্ক ছড়ালো এবং তারা বড়ই জবরদস্ত যাদু দেখালো। (১১৭) মূসাকে আমি ইঙ্গিত করলাম, তোমর লাঠিটা ছুঁড়ে দাও। তার লাঠি ছোঁড়ার সাথে সাথেই তা এক নিমিষেই তাদের মিথ্যা যাদু কর্মগুলোকে গিলে ফেলতে লাগলো। (১১৮) এভাবে যা সত্য ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো এবং যা কিছু তারা বানিয়ে রেখেছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো। (১১৯) ফেরাউন ও তার সাথীরা মোকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং (বিজয়ী হবার পরিবর্তে) উল্টো তারা লাঞ্ছিত হলো। (১২০) আর যাদুকরদের অবস্থা হলো এই-যেন কোন জিনিস ভিতর থেকে তাদেরকে সিজদাবনত করে দিলো। (১২১) তারা বলতে লাগলোঃ “আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজাহানের রবের প্রতি, (১২২) যিনি মূসা ও হারুণেরও রব।” (১২৩) ফেরাউন বললোঃ “আমার অনুমতি দেবার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয়ই এটা কোন গোপন চক্রান্ত ছিল। তোমরা এ রাজধানীতে বসে এ চক্রান্ত এঁটেছো এর মালিকদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। বেশ, এখন এর পরিণাম তোমরা জানতে পারবে। (১২৪) তোমাদের হাত-পা আমি কেটে ফেলবো বিপরীত দিক থেকে এবং তারপর তোমাদের সবাইকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করবো।” (১২৫) তারা জবাব দিলোঃ “সে যাই হোক আমাদের রবের দিকেই তো আমাদের ফিরতে হবে। (১২৬) তুমি যে ব্যাপারে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছো, তা এছাড়া আর কিছুই নয় যে, আমাদের রবের নিদর্শসমূহ যখন আমাদের সামনে এসেছে তখন আমরা তা মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করো এবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও।” (১২৭) ফেরাউনকে তার জাতির প্রধানরা বললোঃ “তুমি কি মূসা ও তার জাতিকে এমনিই ছেড়ে দেবে যে, তারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াক এবং তোমার ও তোমার মাবুদের বন্দেগী পরিত্যাগ করুক?” ফেরআউন জবাব দিলঃ “আমি তাদের পুত্রদের হত্যা করবো এবং তাদের কন্যাদের জীবিত রাখবো। আমরা তাদের ওপর প্রবল কর্তৃত্বের অধিকারী।” (১২৮) মূসা তার জাতিকে বললোঃ “আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং সবর করো। এ পৃথিবী তো আল্লাহরই। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাকে এর উত্তরাধিকারী করেন। আর যারা তাঁকে ভয় করে কাজ করে চূড়ান্ত সাফল্য তাদের জন্য নির্ধারিত।” (১২৯) তার জাতির লোকেরা বললোঃ “তোমার আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং এখন তোমার আসার পরেও নির্যাতিত হচ্ছি।” সে জবাব দিলঃ “শীঘ্রই তোমাদের রব তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দেবেন এবং পৃথিবীতে তোমাদেরকে খলীফা করবেন, তারপর তোমরা কেমন কাজ করো তা তিনি দেখবেন।” (১৩০) ফেরাউনের লোকদেরকে আমি কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও ফসলহানিতে আক্রান্ত করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, হয়তো তাদের চেতনা ফিরে আসবে। (১৩১) কিন্তু তাদের এমনি অবস্থা ছিল যে, ভাল সময় এলে তারা বলতো এটা তো আমাদের প্রাপ্য। আর খারাপ সময় এলে মূসা ও তার সাথীদেরকে নিজেদের জন্য কূলক্ষুণে গণ্য করতো। অথচ তাদের কুলক্ষণ তো আল্লাহর কাছে ছিল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই ছিল অজ্ঞ। (১৩২) তারা মূসাকে বললোঃ আমাদের যাদু করার জন্য তুমি যে কোন নিদর্শনই আনো না কেন, আমরা তোমার কথা মেনে নেবো না।৯৪ (১৩৩) অবশেষে আমি তাদের ওপর দুর্যোগ পাঠালাম, পংগপাল ছেড়ে দিলাম, উকুন ছড়িয়ে দিলাম, ব্যাঙের উপদ্রব সৃষ্টি করলাম এবং রক্ত বর্ষণ করলাম। এসব নিদর্শন আলাদা আলাদা করে দেখালাম। কিন্তু তারা অহংকারে মেতে রইলো এবং তারা ছিল বড়ই অপরাধ প্রবণ সম্প্রদায়। (১৩৪) যখনই তাদের ওপর বিপদ আসতো তারা বলতোঃ” হে মূসা! তোমার রবের কাছে তুমি যে মর্যাদার অধিকারী তার ভিত্তিতে তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো। যদি এবার তুমি আমাদের ওপর থেকে এ দুর্যোগ হটিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কথা মেনে নেবো এবং বনী ইসরাঈলকে তোমার সাথে পাঠিয়ে দেবো। (১৩৫) কিন্তু যখনই তাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে নিতাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, অমনি তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করতো। (১৩৬) তাই আমি তাদের থেকে বদলা নিয়েছি এবং তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছি। কারণ তারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলেছিল এবং সেগুলোর ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল। (১৩৭) আর তাদের জায়গায় আমি প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম দুর্বল ও অধোপতিত করে রাখা মানব গোষ্ঠীকে। অতঃপর যে ভূখণ্ডে আমি প্রাচুর্যে ভরে দিয়েছিলাম, তার পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে তাদেরই করতল গত করে দিয়েছিলাম। এভাবে বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার রবের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে। কারণ তারা সবর করেছিল। আর ফেরাউন ও তার জাতি যা কিছু তৈরী করছিল ও উঁচু করছিল তা সব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। (১৩৮) বনী ইসরাঈলকে আমি সাগর পার করে দিয়েছি। তারপর তারা চলতে চলতে এমন একটি জাতির কাছে উপস্থিত হলো, যারা নিজেদের কতিপয় মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল। বনী ইসরাঈল বলতে লাগলোঃ “হে মূসা! এদের মাবূদদের মত আমাদের জন্যও একটা মাবূদ বানিয়ে দাও।” মূসা বললোঃ “তোমরা বড়ই অজ্ঞের মত কথা বলছো। (১৩৯) এরা যে পদ্ধতির অনুসরণ করছে তাতে ধ্বংস হবে এবং যে কাজ এরা করেছে তা সম্পূর্ণ বাতিল।” (১৪০) মূসা আরো বললোঃ “আমি কি তোমাদের জন্য আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ খুজবো? অথচ আল্লাহই সারা দুনিয়ার সমস্ত জাতি গোষ্ঠির ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (১৪১) আর (আল্লাহ বলেন) ঃ সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন আমি ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতো, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো। আর এর মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য ছিল মহা পরীক্ষা। (১৪২) মূসাকে আমি তিরিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের ওপর) ডাকলাম এবং পরে দশ দিন আরো বাড়িয়ে দিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো। যাওয়ার সময় মূসা তার ভাই হারুনকে বললোঃ আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জাতির মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সঠিক কাজ করতে থাকবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথে চলবে না। (১৪৩) অতঃপর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন তখন সে আকূল আবেদন জানালো, “হে প্রভু! আমাকে দর্শনের শক্তি দাও, “আমি তোমাকে দেখবো।” তিনি বললেনঃ “তুমি আমাকে দেখতে পারো না। হ্যাঁ,, সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও। সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে।” কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো। সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে মূসা বললোঃ “পাক-পবিত্র তোমার সত্তা। আমি তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন।” (১৪৪) বললেনঃ “হে মূসা! আমি সমস্ত লোকদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে তোমাকে নির্বাচিত করেছি, যেন আমার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে পারো এবং আমার সাথে কথা বলতে পারো। কাজেই আমি তোমাকে যা কিছু দেই তা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (১৪৫) এরপর আমি মূসাকে কতকগুলো ফলকে জীবনের সকল বিভাগ সম্পর্কে উপদেশ এবং প্রত্যেকটি দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ লিখে দিলাম এবং তাকে বললামঃ “এগুলো শক্ত হাতে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার জাতিকে এর উত্তম তাৎপর্যের অনুসরণ করার হুকুম দাও। শীঘ্রই আমি তোমাদের দেখাবো ফাসেকদের গৃহ।” (১৪৬) কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে বড়াই করে বেড়ায়, শীঘ্রই আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবো। তারা আমার যে কোন নিদর্শন দেখলেও তার প্রতি ঈমান আনবে না। তাদের সামনে যদি সোজা পথ এসে যায় তাহলে তারা তা গ্রহণ করবেনা। আর যদি বাঁকা পথ দেখতে পায় তাহলে তার ওপর চলতে আরম্ভ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং সেগুলোর ব্যাপারে বেপরোয়া থেকেছে। (১৪৭) আমার নিদর্শনসমূহকে যারাই মিথ্যা বলছে এবং আখেরাতের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছে, তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে। যেমন কর্ম তেমন ফল-এছাড়া লোকেরা কি আর কোন প্রতিদান পেতে পারে? (১৪৮) মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলংকার দিয়ে বাছুরের মূর্তি তৈরী করলো। তার মুখ দিয়ে গরুর মত 'হাম্বা' রব বের হতো। তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথাও বলে না আর কোন ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনাও দেয় না? কিন্তু এরপরও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত তারা ছিল বড়ই জালেম। (১৪৯) তারপর যখন তাদের প্রতারণার জাল ছিন্ন হয়ে গেলো এবং তারা দেখতে পেলো যে, আসলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তখন বলতে লাগলোঃ “যদি আমাদের রব আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।” (১৫০) ওদিকে মূসা ফিরে এলেন তার জাতির কাছে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়। এসেই বললেনঃ “আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বড়ই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছো! তোমরা কি নিজেদের রবের হুকুমের অপেক্ষা করার মত এতটুকু সবরও করতে পারলে না?” সে ফলকগুলো ছুঁড়ে দিল এবং নিজের ভাইয়ের (হারুন) মাথার চুল ধরে টেনে আনলো। হারুন বললোঃ “হে আমার সহোদর! এ লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল। কাজেই তুমি শত্রুর কাছে আমাকে হাস্যাম্পদ করো না এবং আমাকে এ জালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না। (১৫১) তখন মূসা বললোঃ “হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং তোমার অনুগ্রহের মধ্যে আমাদের দাখিল করে নাও, তুমি সবচাইতে বেশী অনুগ্রহকারী।” (১৫২) (জওয়াবে বলা হলো) “যারা বাছুরকে মাবুদ বানিয়েছে তারা নিশ্চয়ই নিজেদের রবের ক্রোধের শিকার হবেই এবং দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত হবে। মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এমনি ধরনের শাস্তিই দিয়ে থাকি। (১৫৩) আর যারা খারাপ কাজ করে তারপর তাওবা করে নেয় এবং ঈমান আনে, এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে এ তাওবা ও ঈমানের পর তোমার রব ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (১৫৪) তারপর মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলে সে ফলকগুলি উঠিয়ে নিল। যারা নিজেদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য ঐ সব ফলকে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত। (১৫৫) আর মূসা (তার সাথে) আমার নির্ধারিত সময়ে হাযির হবার জন্য নিজের জাতির সত্তর জন লোককে নির্বাচিত করলো। যখন তারা একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলো তখন মূসা বললোঃ “হে প্রভু! তুমি চাইলে আগেই এদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করে দিতে পারতে। আমাদের মধ্য থেকে কিছু নির্বোধ লোক যে অপরাধ করেছিল সেজন্য কি তুমি আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে? এটি তো ছিল তোমার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা, এর মাধ্যমে তুমি যাকে চাও পথভ্রষ্ট করো আবার যাকে চাও হেদায়াত দান করো। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। কাজেই আমাদের মাফ করে দাও এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো। ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ।
(১৫৭) (আজ তারাই এ রহমতের অংশীদার) যারা এ প্রেরিত উম্মী নবীর আনুগত্য করে, যার উল্লেখ নিকট এখানে তাওরাত ও ইনজীলে লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে তাদের সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য পাক পবিত্র জিনিসগুলো হালাল ও নাপাক জিনিসগুলো হারাম করে এবং তাদের ওপর থেকে এমন সব বোঝা নামিয়ে দেয়। যা তাদের ওপর চাপানো ছিল আর এমন সব বাঁধন থেকে তাদেরকে মুক্ত করে যাতে তারা আবদ্ধ ছিল। কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সাহায্য সহায়তা দান করে এবং তার সাথে অবতীর্ণ আলোক রশ্মির অনুসরণ করে তারাই সফলতা লাভের অধিকারী। 


(১৫৯) মূসার জাতির মধ্যে এমন একটি দলও ছিল, যারা সত্য অনুযায়ী পথনির্দেশ দিতো এবং সত্য অনুযায়ী ইনসাফ করতো। (১৬০) আর তার জাতিকে আমি বারোটি পরিবারে বিভক্ত করে তাদেরকে স্বতন্ত্র গোত্রের রূপ দিয়েছিলাম। আর যখন মূসার কাছে তার জাতি পানি চাইলো তখন আমি তাকে ইঙ্গিত করলাম, অমুক পাথরে তোমরা লাঠি দিয়ে আঘাত করো। ফলে সেই পাথরটি থেকে অকস্মাত বারোটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হলো এবং প্রত্যেকটি দল তাদের পানি গ্রহণ করার জায়গা নির্দিষ্ট করে নিল। আমি তাদের ওপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম এবং তাদের ওপর অবতীর্ণ করলাম মান্না ও সালওয়া -যেসব ভাল ও পাক জিনিস তোমাদের দিয়েছি সেগুলো খাও। কিন্তু এরপর তারা যা কিছু করেছে তাতে আমার ওপর জুলুম করেনি বরং নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে। (১৬১) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, এ জনপদে গিয়ে বসবাস করো, সেখানে উৎপাদিত ফসল থেকে নিজেদের ইচ্ছামত আহার্য সংগ্রহ করো, ‘হিত্তাতুন’ ‘হিত্তাতুন’ বলতে বলতে যাও এবং শহরের দরজা দিয়ে সিজদাবনত হয়ে প্রবেশ করতে থাকো। তাহলে আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মপরায়ণদেরকে অতিরিক্ত অনুগ্রহ দান করবো। (১৬২) কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জালেম ছিল তারা তাদেরকে যে কথা বলা হয়েছিল তা পরিবর্তিত করে ফেললো। এর ফলে তাদের জুলুমের বদলায় আমি আকাশ থেকে তাদের প্রতি আযাব পাঠিয়ে দিলাম। (১৬৩) আর সমুদ্রের তীরে যে জনপদটি অবস্থিত ছিল তার অবস্থা সম্পর্কেও তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস করো। তাদের সেই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দাও যে, সেখানকার লোকেরা শনিবারে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতো এবং শনিবারেই মাছেরা পানিতে ভেসে ভেসে তাদের সামনে আসতো।  অথচ শনিবার ছাড়া অন্য দিন আসতো না। তাদের নাফরমানীর কারণে তাদেরকে আমি ক্রমাগত পরীক্ষার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছিলাম বলেই এমনটি হতো। (১৬৪) আর তাদের একথাও স্মরণ করিয়ে দাও, যখন তাদের একটি দল অন্য দলকে বলেছিল, “তোমরা এমন লোকদের উপদেশ দিচ্ছো কেন যাদেরকে আল্লাহ‌ ধ্বংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন?” জবাবে তারা বলেছিল, “এসব কিছু এ জন্যই করছি যেন আমরা তোমাদের রবের সামনে নিজেদের ওযর পেশ করতে পারি এবং এ আশায় করছি যে, হয়তো এ লোকেরা তাঁর নাফরমানী করা ছেড়ে দেবে।” (১৬৫) শেষ পর্যন্ত তাদেরকে যে সমস্ত হেদায়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিল তারা যখন সেগুলো সম্পূর্ণ ভুলে গেলো, তখন যারা খারাপ কাজে বাধা দিতো তাদেরকে আমি বাঁচিয়ে নিলাম এবং বাকি সমস্ত লোক যারা দোষী ছিল তাদের নাফরমানীর জন্য তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিলাম। (১৬৬) তারপর যে কাজ থেকে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়েছিল, তাই যখন তারা পূর্ণ ঔদ্ধত্যসহকারে করে যেতে লাগলো তখন আমি বললাম, তোমরা লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত বানর হয়ে যাও। (১৬৭) আর স্মরণ করো যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন কিয়ামত পর্যন্ত তিনি সবসময় বনী ইসরাঈলীদের ওপর এমন সব লোককে চাপিয়ে দিয়ে যেতে থাকবেন যারা তাদেরকে দেবে কঠিনতম শাস্তি।” নিঃসন্দেহে তোমাদের রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চিতভাবেই তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়ও। (১৬৮) আমি তাদেরকে পৃথিবীতে খন্ড বিখন্ড করে বহু সংখ্যক জাতিতে বিভক্ত করে দিয়েছি। তাদের মধ্যে কিছু লোক ছিল সৎ এবং কিছু লোক অন্য রকম। আর আমি ভাল ও খারাপ অবস্থায় নিক্ষেপ করার মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষা করতে থাকি, হয়তো তারা ফিরে আসবে। (১৬৯) তারপর পরবর্তী বংশধরদের পর এমন কিছু অযোগ্য লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়, যারা আল্লাহর কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়ে এ তুচ্ছ দুনিয়ার স্বার্থ আহরণে লিপ্ত হয় এবং বলতে থাকে আশা করা যায়, আমাদের ক্ষমা করা হবে। পরক্ষনেই সেই ধরনের পার্থিব সামগ্রী যদি আবার তাদের সামনে এসে যায়, তাহলে তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গিয়ে তা লুফে নেয়। তাদের কাছ থেকে কি কিতাবের অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর নামে কেবলমাত্র সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবে না? আর কিতাবে যা লেখা আছে তাতো তারা নিজেরাই পড়ে নিয়েছে। আখেরাতের আবাস তো আল্লাহর ভয়ে ভীত লোকদেরই জন্য ভাল -এতটুকু কথাও কি তোমরা বুঝো না?

সুরহ ইউনুসঃ

(৭৫) তারপর মুসা ও হারুনকে আমি তাদের পরে আমার নিদর্শনসহ ফেরাউন ও তার সরদারদের কাছে পাঠাই। কিন্তু তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত হয় এবং তারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়। (৭৬) পরে যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের সামনে আসে, তারা বলে দেয়, এ তো সুস্পষ্ট যাদু। (৭৭) মুসা বললো, সত্য, যখন তোমাদের সামনে এলো তখন তোমরা তার সম্পর্কে এমন (কথা) বলছো? এ কি যাদু? অথচ যাদুকর সফলকাম হয় না। (৭৮) তারা জবাবে বললো, “তুমি কি যে পথে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি সে পথ থেকে আমাদের ফিরিয়ে দিতে এবং যাতে যমীনে তোমাদের দু’জনের প্রাধান্য কায়েম হয়ে যায়, সেজন্য এসেছো? তোমাদের কথা তো আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।” (৭৯) আর ফেরাউন (নিজের লোকদের) বললো, সকল দক্ষ ও অভিজ্ঞ যাদুকরকে আমার কাছে হাযির করো। (৮০) -যখন যাদুকররা সে গেলো, মুসা তাদেরকে বললো, যা কিছু তোমাদের নিক্ষেপ করার আছে নিক্ষেপ করো। (৮১) তারপর যখন তারা নিজেদের ভোজবাজি, নিক্ষেপ করলো, মুসা, বললো, তোমরা এই যা কিছু নিক্ষেপ করেছো এগুলো যাদু। আল্লাহ এখনই একে ব্যর্থ করে দেবেন। ফাসাদ সৃষ্টিকরীদের কাজকে আল্লাহ‌ সার্থক হতে দেন না। (৮২) আর অপরাধীদের কাছে যতই বিরক্তিকর হোক না কেন আল্লাহ‌ তার ফরমানের সাহায্যে সত্যকে সত্য করেই দেখিয়ে দেন। (৮৩) (তারপর দেখো) মুসাকে তার কওমের কতিপয় নওজোয়ান ছাড়া কেউ মেনে নেয়নি, ফেরাউনের ভয়ে এবং তাদের নিজেদেরই কওমের নেতৃস্থানীয় লোকদের ভয়ে। (তাদের আশঙ্কা ছিল) ফেরাউন তাদের ওপর নির্যাতন চালাবে। আর প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ফেরাউন দুনিয়ায় পরাক্রমশালী ছিল এবং সে এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা কোন সীমানা মানে না। (৮৪) মুসা তার কওমকে বললো, হে লোকেরা! যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে থাকো তাহলে তার ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা মুসলিম-আত্মসর্ম্পণনকারী হও। (৮৫) তারা জবাব দিল, আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালেমদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না। (৮৬) এবং তোমার রহমতের সাহায্যে কাফেরদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো।" (৮৭) আর আমি মূসা ও তার ভাইকে ইশারা করলাম এই বলে যে, "মিসরে নিজের কওমের জন্য কতিপয় গৃহের সংস্থান করো, নিজেদের ঐ গৃহগুলোকে কিবলায় পরিণত করো এবং নামায কায়েম করো। আর ঈমানদারদেরকে সুখবর দাও।" (৮৮) মুসা দোয়া করলো, "হে আমাদের রব! তুমি ফেরাউন ও তার সরদারদেরকে দুনিয়ার জীবনের শোভা-সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছো। হে আমাদের রব! একি এ জন্য যে, তারা মানুষকে তোমার পথ থেকে বিপথে সরিয়ে দেবে? হে আমাদের রব! এদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং এদের অন্তরে এমনভাবে মোহর মেরে দাও যাতে মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত যেন এরা ঈমান না আনে।" (৮৯) আল্লাহ জবাবে বললেন, "তোমাদের দু’জনের দোয়া কবুল করা হলো। তোমরা দু’জন অবিচল থাকো এবং মূর্খদের পথ কখনো অনুসরণ করো না।" (৯০) আর আমি বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করে নিয়ে গেলাম। তারপর ফেরাউন ও তার সেনাদল জুলুম নির্যাতন ও সীমালঙ্ঘন করার উদ্দেশ্য তাদের পেছনে চললো। অবশেষে যখন ফেরাউন ডুবতে থাকলো তখন বলে উঠলো, আমি মেনে নিলাম, নবী ইসরাঈল যার উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই এবং আমিও আনুগত্যের শির নতকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (৯১) (জবাব দেয়া হলো) "এখন ঈমান আনছো! অথচ এর আগে পর্যন্ত তুমি নাফরমানী চালিয়ে এসেছো এবং তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন ছিলে। (৯২) এখন তো আমি কেবল তোমার লাশটাকেই রক্ষা করবো যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য শিক্ষণীয় নিদর্শন হয়ে থাকো। যদিও অনেক মানুষ এমন আছে যারা আমার নিদর্শনসমূহ থেকে উদাসীন। (৯৩) বনী ইসরাঈলকে আমি খুব ভালো আবাসভূমি দিয়েছি এবং অতি উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ তাদেরকে দান করেছি। তারপর যখন তাদের কাছে জ্ঞান এসে গেলো, তখনই তারা পরস্পরে মতভেদ করলো নিশ্চয়ই তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সেই জিনিসের ফায়সালা করে দেবেন, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত ছিল। (৯৪) এখন যদি তোমার সেই হিদায়াতের ব্যাপারে সমান্যও সন্দেহ থেকে থাকে যা আমি তোমার ওপর নাযিল করেছি তাহলে যারা আগে থেকেই কিতাব পড়ছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। প্রকৃতপক্ষে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার কাছে এ কিতাব মহাসত্য হয়েই এসেছে। (৯৫) কাজেই তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না এবং যারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলেছে তাদের মধ্যেও শামিল হয়ো না, তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হবে।

সুরহ হুদঃ

(৯৬) আর মূসাকে আমি নিজের নিদর্শনাবলী ও স্পষ্ট নিয়োগপত্রসহ ফেরাউন ও তার রাজ্যের প্রধান কর্মকর্তাদের কাছে পাঠালাম। (৯৭) কিন্তু তারা ফেরাউনের নির্দেশ মেনে চললো। অথচ ফেরাউনের নির্দেশ সত্যাশ্রয়ী ছিল না। (৯৮) কিয়ামতের দিন সে নিজের কওমের অগ্রবর্তী হবে এবং নিজের নেতৃত্বে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। অবস্থানের জন্য কেমন নিকৃষ্ট স্থান সেটা! (৯৯) আর তাদের ওপর এ দুনিয়ায় লানত পড়েছে এবং কিয়ামতের দিনও পড়বে। কত নিকৃষ্ট প্রতিদান সেটা, যা কেউ লাভ করবে! (১০০) এগুলো কতক জনপদের খবর, যা আমি তোমাকে শুনাচ্ছি। এদের কোনটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আবার কোনটার ফসল কাটা হয়ে গেছে। (১০১) আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি, তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছে আর যখন আল্লাহর হুকুম এসে গেলো তখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা নিজেদের যেসব মাবুদকে ডাকতো তারা তাদের কোন কাজে লাগলো না এবং তারা ধ্বংস ছাড়া তাদের আর কোন উপকার করতে পারলো না। (১০২) আর তোমার রব যখন কোন অত্যাচারী জনপদকে পাকড়াও করেন তখন তার পাকড়াও এমনি ধরনেরই হয়। প্রকৃতপক্ষে তাঁর পাকড়াও হয় বড়ই কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক। (১০৩) আসলে এর মধ্যে একটি নিশানী আছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আখেরাতের আযাবের ভয় করে। তা হবে এমন একটি দিন যেদিন সমস্ত লোক একত্র হবে এবং তারপর সেদিন যা কিছু হবে সবার চোখের সামনে হবে। (১০৪) তাকে আনার ব্যাপারে আমি কিছু বেশী বিলম্ব করছি না, হাতে গোনা একটি সময়কাল মাত্র তার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে। (১০৫) সেদিন যখন আসবে তখন কারোর কথা বলার সামর্থ্য থাকবে না, তবে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কেউ কথা বলতে পারবে। তারপর আবার সেদিন কিছু লোক হবে হতভাগ্য এবং কিছু লোক ভাগ্যবান। (১০৬) হতভাগ্যরা জাহান্নামে যাবে (যেখানে অত্যধিক গরমে ও পিপাসায়) তারা হ্যাঁ,পাতে ও আর্তচীৎকার করতে থাকবে। (১০৭) আর এ অবস্থায় তারা চিরকাল থাকবে যতদিন আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তবে যদি তোমার রব অন্য কিছু করতে চান। অবশ্যি তোমার রব যা চান তা করার পূর্ণ ইখতিয়ার রাখেন। (১০৮) আর যারা ভাগ্যবান হবে, তারা জান্নাতে যাবে এবং সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন পৃথিবী ও আকাশ প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তবে যদি তোমার রব অন্য কিছু করতে চান। এমন পুরস্কার তারা পাবে যার ধারাবাহিকতা কখনো ছিন্ন হবে না। (১০৯) কাজেই হে নবী! এরা যেসব মাবুদের ইবাদাত করছে তাদের ব্যাপারে তুমি কোন প্রকার সন্দেহের মধ্যে থেকো না। এরা তো (নিছক গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছে। ) ঠিক তেমনিভাবে পূজা-অর্চনা করে যাচ্ছে যেমন পূর্বে এদের বাপ-দাদারা করতো। আর আমি কিছু কাটছাঁটা না করেই তাদের অংশ তাদেরকে পুরোপুরি দিয়ে দেবো। (১১০) আমি এর আগে মূসাকেও কিতাব দিয়েছি এবং সে সম্পর্কে মতভেদ করা হয়েছিল (যেমন আজ তোমাদের এই যে কিতাব দেয়া হয়েছে এ সম্পর্কে করা হচ্ছে)। যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে একটি কথা প্রথমেই স্থির করে না দেয়া হতো তাহলে এ মতভেদকারীদের মধ্যে কবেই ফায়সালা করে দেয়া হয়ে যেতো। একথা সত্যি যে, এরা তার ব্যাপারে সন্দেহ ও পেরেশানীর মধ্যে পড়ে রয়েছে। (১১১) আর একথাও সত্যি যে, তোমার রব তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের পুরোপুরি বদলা দিয়েই তবে ক্ষান্ত হবেন। অবশ্যই তিনি তাদের সবার কার্যকলাপের খবর রাখেন। (১১২) কাজেই হে মুহাম্মাদ! তুমি ও তোমার সাথীরা যারা (কুফরী ও বিদ্রোহ থেকে ঈমান ও আনুগত্যের দিকে) ফিরে এসেছে সত্য সঠিক পথে অবিচল থাকো যেমন তোমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে এবং বন্দেগীর সীমানা অতিক্রম করো না। তোমরা যা কিছু করছো তার ওপর তোমাদের রব দৃষ্টি রাখেন। 

সুরহ ইবরহিমঃ

(৬) স্মরণ করো যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বললো, “আল্লাহর সেই অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো যা তিনি তোমাদের প্রতি করেছেন। তিনি তোমাদের ফিরাউনী সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্ত করেছেন, যারা তোমাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালাতো, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করতো এবং তোমাদের মেয়েদের জীবিত রাখতো। এর মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মহা পরীক্ষা ছিল। (৭) আর স্মরণ করো, তোমাদের রব এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যদি কৃতজ্ঞ থাকো তাহলে আমি তোমাদের আরো বেশী দেবো আর যদি নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে আমার শাস্তি বড়ই কঠিন। (৮) আর মূসা বললো, “যদি তোমরা কুফরী করো এবং পৃথিবীর সমস্ত অধিবাসীও কাফের হয়ে যায় তাহলে আল্লাহর কিছুই আসে যায় না এবং তিনি আপন সত্তায় আপনি প্রশংসিত।” (৯) তোমাদের কাছে কি তোমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত জাতিগুলোর বৃত্তান্ত পৌঁছেনি? নূহের জাতি, আদ, সামূদ এবং তাদের পরে আগমনকারী বহু জাতি, যাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ‌ জানেন? তাদের রসূলরা যখন তাদের কাছে দ্ব্যর্থহীন কথা ও সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসেন তখন তারা নিজেদের মুখে হাত চাপা দেয় এবং বলে, “যে বার্তা সহকারে তোমাদের পাঠানো হয়েছে আমরা তা মানি না এবং তোমরা আমাদের যে জিনিসের দাওয়াত দিচ্ছো তার ব্যাপারে আমরা যুগপৎ উদ্বেগ ও সংশয়ের মধ্যে আছি।” (১০) তাদের রসূলরা বলে, “আল্লাহর ব্যাপারে কি সন্দেহ আছে, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা? তিনি তোমাদের ডাকছেন তোমাদের গুনাহ মাফ করার এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের অবকাশ দেয়ার জন্য।” তারা জবাব দেয়, “তোমরা আমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও। বাপ-দাদাদের থেকে যাদের ইবাদাত চলে আসছে তোমরা তাদের ইবাদাত থেকে আমাদের ফেরাতে চাও। ঠিক আছে তাহলে আনো কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ।” (১১) তাদের রসূলুরা তাদেরকে বলে, “যথার্থই আমরা তোমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নই। কিন্তু আল্লাহ‌ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আর তোমাদের কোন প্রমাণ এনে দেবো, এ ক্ষমতা আমাদের নেই। প্রমাণ তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে আসতে পারে এবং ঈমানদারদের আল্লাহরই ওপর ভরসা রাখা উচিত। (১২) আর আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করবো না কেন, যখন আমাদের জীবনের পথে তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন? তোমরা আমাদের যে যন্ত্রণা দিচ্ছো তার ওপর আমরা সবর করবো এবং ভরসাকারীদের ভরসা আল্লাহরই ওপর হওয়া উচিত।

সুরহ বানি ইসরঈলঃ

(২) আমি ইতিপূর্বে মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তাঁকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশনার মাধ্যম করেছিলাম এ তাগিদ সহকারে যে, আমাকে ছাড়া আর কাউকে নিজের অভিভাবক করো না। (৩) তোমরা তাদের আওলাদ যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় উঠিয়েছিলাম এবং নূহ একজন কৃতজ্ঞ বান্দা ছিল। (৪) তারপর আমি নিজের কিতাবে বনী ইস্রাঈলকে এ মর্মে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, তোমরা দু’বার পৃথিবীতে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ভীষণ বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে। (৫) শেষ পর্যন্ত যখন এদের মধ্য থেকে প্রথম বিদ্রোহের সময়টি এলো তখন হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের মুকাবিলায় নিজের এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটালাম, যারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তারা তোমাদের দেশে প্রবেশ করে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, যা পূর্ণ হওয়াই ছিল অবধারিত।  (৬) এরপর আমি তোমাদেরকে তাদের ওপর বিজয় লাভের সুযোগ করে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে সাহায্য করেছি অর্থ ও সন্তানের সাহায্যে আর তোমাদের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছি। (৭) দেখো, তোমরা ভাল কাজ করে থাকলে তা তোমাদের নিজেদের জন্যই ভাল ছিল আর খারাপ কাজ করে থাকলে তোমাদের নিজেদেরই জন্য তা খারাপ প্রমাণিত হবে। তারপর যখন পরবর্তী প্রতিশ্রুতির সময় এসেছে তখন আমি অন্য শত্রুদেরকে তোমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয় এবং (বায়তুল মাক্দিসের) মসজিদে এমনভাবে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার শত্রুরা ঢুকে পড়েছিল আর যে জিনিসের ওপরই তাদের হাত পড়ে তাকে ধ্বংস করে রেখে দেয়। (৮) এখন তোমাদের রব তোমাদের প্রতি করুণা করতে পারেন। কিন্তু যদি তোমরা আবার নিজেদের আগের আচরণের পুনরাবৃত্তি করো তাহলে আমিও আবার আমার শাস্তির পুনরাবৃত্তি করবো। আর নিয়ামত অস্বীকারকারীদের জন্য আমি জাহান্নামকে কয়েদখানা বানিয়ে রেখেছি।
(১০১) আমি মূসাকে নয়টি নিদর্শন দিয়েছিলাম, সেগুলো সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। এখন নিজেরাই তোমরা বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখে নাও যখন সেগুলো তাদের সামনে এলো তখন ফেরাউন তো একথাই বলেছিল, “হে মূসা! আমার মতে তুমি অবশ্যই একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি।” (১০২) মূসা এর জবাবে বললো, “তুমি খুব ভাল করেই জানো এ প্রজ্ঞাময় নিদর্শনগুলো আকাশ ও পৃথিবীর রব ছাড়া আর কেউ নাযিল করেননি আর আমার মনে হয় হে ফেরাউন! তুমি নিশ্চয়ই একজন হতভাগা ব্যক্তি। (১০৩) শেষ পর্যন্ত ফেরাউন মূসা ও বনী ইস্রাঈলকে দুনিয়ার বুক থেকে উৎখাত করার সংকল্প করলো। কিন্তু আমি তাকে ও তার সঙ্গী-সাথীদেরকে এক সাথে ডুবিয়ে দিলাম (১০৪) এবং এরপর বনী ইস্রাঈলকে বললাম, এখন তোমরা পৃথিবীতে বসবাস করো, তারপর যখন আখেরাতের প্রতিশ্রুতির সময় এসে যাবে তখন আমি তোমাদের সবাইকে এক সাথে হাযির করবো। (১০৫) এ কুরআনকে আমি সত্য সহকারে নাযিল করেছি এবং সত্য সহকারেই এটি নাযিল হয়েছে। আর হে মুহাম্মাদ! তোমাকে আমি এছাড়া আর কোন কাজে পাঠাইনি যে, (যে মেনে নেবে তাকে) সুসংবাদ দিয়ে দেবে এবং (যে মেনে নেবে না তাকে) সাবধান করে দেবে।

সুরহ আল কাহাফঃ

 
(৬০) (এদেরকে সেই ঘটনাটি একটু শুনিয়ে দাও যা মূসার সাথে ঘটেছিল) যখন মূসা তার খাদেমকে বলেছিল, দুই দরিয়ার সঙ্গমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি সফর শেষ করবো না, অন্যথায় আমি দীর্ঘকাল ধরে চলতেই থাকবো।” (৬১) সে অনুসারে যখন তারা তাদের সঙ্গমস্থলে পৌঁছে গেলো তখন নিজেদের মাছের ব্যাপারে গাফেল হয়ে গেলো এবং সেটি বের হয়ে সুড়ংগের মতো পথ তৈরি করে দরিয়ার মধ্যে চলে গেলো। (৬২) সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর মূসা তাঁর খাদেমকে বললো, “আমাদের নাশতা আনো, আজকের সফরে তো আমরা ভীষণভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।” (৬৩) খাদেম বললো, “আপনি কি দেখেছেন, কি ঘটে গেছে? যখন আমরা সেই পাথরটার পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমার মাছের কথা মনে ছিল না এবং শয়তান আমাকে এমন গাফেল করে দিয়েছিল যে, আমি (আপনাকে) তার কথা বলতে ভুলে গেছি। মাছ তো অদ্ভূতভাবে বের হয়ে দরিয়ার মধ্যে চলে গেছে।” (৬৪) মূসা বললো, “আমরা তো এরই খোঁজে ছিলাম। কাজেই তারা দু’জন নিজেদের পদরেখা ধরে পেছনে ফিরে এলো (৬৫) এবং সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে পেলো, যাকে আমি নিজের অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলাম। (৬৬) মূসা তাকে বললো, “আমি কি আপনার সাথে থাকতে পারি, যাতে আপনাকে যে জ্ঞান শেখানো হয়েছে তা থেকে আমাকেও কিছু শেখাবেন?” (৬৭) সে বললো, “আপনি আমার সাথে সবর করতে পারবেন না। (৬৮) আর তাছাড়া যে ব্যাপারের আপনি কিছুই জানেন না সে ব্যাপারে আপনি সবর করবেনই বা কেমন করে।” (৬৯) মূসা বললো, “ইন্শাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারী হিসেবেই পাবেন এবং কোন ব্যাপারেই আমি আপনার হুকুম অমান্য করবো না।” (৭০) সে বললো, আচ্ছা, “যদি আপনি আমার সাথে চলেন তাহলে আমাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজে সে সম্পর্কে আপনাকে বলি।” (৭১) অতঃপর তারা দু’জন রওয়ানা হলো। শেষ পর্যন্ত যখন তারা একটি নৌকায় আরোহণ করলো তখন ঐ ব্যক্তি নৌকা ছিদ্র করে দিল। মূসা বললো, “আপনি কি নৌকার সকল আরোহীকে ডুবিয়ে দেবার জন্য তাতে ছিদ্র করলেন? এতো আপনি বড়ই মারাত্মক কাজ করলেন।” (৭২) সে বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না?” (৭৩) মূসা বললো, “ভুল চুকের জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না, আমার ব্যাপারে আপনি কঠোর নীতি অবলম্বন করবেন না।” (৭৪) এরপর তারা দু’জন চললো। চলতে চলতে তারা একটি বালকের দেখা পেলো এবং ঐ ব্যক্তি তাকে হত্যা করলো। মূসা বললো, “আপনি এক নিরপরাধকে হত্যা করলেন অথচ সে কাউকে হত্যা করেনি? এটা তো বড়ই খারাপ কাজ করলেন।” (৭৫) সে বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না?” (৭৬) মূসা বললো, “এরপর যদি আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করি তাহলে আপনি আমাকে আপনার সাথে রাখবেন না। এখন তো আমার পক্ষ থেকে আপনি ওজর পেয়ে গেছেন।” (৭৭) তারপর তারা সামনের দিকে চললো। চলতে চলতে একটি জনবসতিতে প্রবেশ করলো এবং সেখানে লোকদের কাছে খাবার চাইলো। কিন্তু তারা তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো। সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। সে দেয়ালটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিল। মূসা বললো, “আপনি চাইলে এ কাজের পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।” (৭৮) সে বললো, “ব্যাস, তোমার ও আমার সঙ্গ শেষ হয়ে গেলো। এখন আমি যে কথাগুলোর ওপর তুমি সবর করতে পারোনি সেগুলোর তাৎপর্য তোমাকে বলবো। (৭৯) সেই নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন গরীব লোকের, তারা সাগরে মেহনত মজদুরী করতো। আমি সেটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ সামনের দিকে ছিল এমন বাদশাহর এলাকা যে প্রত্যেকটি নৌকা জবরদস্তি ছিনিয়ে নিতো। (৮০) আর ঐ বালকটির ব্যাপার হচ্ছে এই যে, তার বাপ-মা ছিল মু’মিন। আমাদের আশঙ্কা হলো, এ বালক তার বিদ্রোহাত্মক আচরণ ও কুফরীর মাধ্যমে তাদেরকে বিব্রত করবে। (৮১) তাই আমরা চাইলাম তাদের রব তার বদলে তাদেরকে যেন এমন একটি সন্তান দেন যে চরিত্রের দিক দিয়েও তার চেয়ে ভাল হবে এবং যার কাছ থেকে সদয় আচরণও বেশী আশা করা যাবে। (৮২) এবার থাকে সেই দেয়ালের ব্যাপারটি। সেটি হচ্ছে এ শহরে অবস্থানকারী দু’টি এতীম বালকের। এ দেয়ালের নীচে তাদের জন্য সম্পদ লুকানো আছে এবং তাদের পিতা ছিলেন একজন সৎলোক। তাই তোমার রব চাইলেন এ কিশোর দু’টি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাক এবং তারা নিজেদের গুপ্তধন বের করে নিক। তোমার রবের দয়ার কারণে এটা করা হয়েছে। নিজ ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে আমি এটা করিনি। তুমি যেসব ব্যাপারে সবর করতে পারোনি এ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা।

সুরহ তহাঃ

(৯) আর তোমার কাছে কি মূসার খবর কিছু পৌঁছেছে? (১০) যখন সে একটি আগুন দেখলো এবং নিজের পরিবারের লোকদেরকে বললো, “একটু দাঁড়াও, আমি একটি আগুন দেখেছি, হয়তো তোমাদের জন্য এক আধটি অংগার আনতে পারবো অথবা এ আগুনের নিকট আমি কোনো পথের দিশা পাবো।” (১১) সেখানে পৌঁছলে তাকে ডেকে বলা হলো, “হে মূসা! আমিই তোমার রব, জুতো খুলে ফেলো, (১২) তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় আছো। (১৩) এবং আমি তোমাকে বাছাই করে নিয়েছি, শোনো যা কিছু অহী করা হয়। (১৪) আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো। (১৫) কিয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তার সময়টা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেকটি প্রাণসত্তা তার প্রচেষ্টা অনুযায়ী প্রতিদান লাভ করতে পারে। (১৬) কাজেই যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান আনে না এবং নিজের প্রবৃত্তির দাস হয়ে গেছে সে যেন তোমাকে সে সময়ের চিন্তা থেকে নিবৃত্ত না করে। অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। (১৭) - আর হে মূসা! এ তোমার হাতে এটা কি?” (১৮) মূসা জবাব দিল, “এ আমার লাঠি। এর ওপর ভর দিয়ে আমি চলি, নিজের ছাগলগুলোর জন্য এর সাহায্যে পাতা পাড়ি এবং এর সাহায্যে আরো অনেক কাজ করি।” (১৯) বললেন, “একে ছুঁড়ে দাও হে মূসা”! (২০) সে ছুঁড়ে দিল এবং অকস্মাৎ সেটা হয়ে গেলো একটা সাপ, যা দৌড়াচ্ছিল। (২১) বললেন, “ধরে ফেলো ওটা এবং ভয় করো না, আমি ওকে আবার ঠিক তেমনটিই করে দেবো যেমনটি সে আগে ছিল। (২২) আর তোমার হাতটি একটু বগলের মধ্যে রাখো, তা কোন প্রকার ক্লেশ ছাড়াই উজ্জ্বল হয়ে বের হয়ে আসবে, এটা দ্বিতীয় নিদর্শন। (২৩) এজন্য যে, আমি তোমাকে নিজের বৃহৎ নিদর্শনগুলো দেখাবো। (২৪) এখন তুমি যাও ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।” (২৫) মূসা বললো, “হে আমার রব! আমার বুক প্রশস্ত করে দাও। (২৬) এবং আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও (২৭) এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, (২৮) যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে। (২৯) আর আমার জন্য নিজের পরিবার থেকে সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দাও (৩০) আমার ভাই হারুনকে। (৩১) তার মাধ্যমে আমার হাত মজবুত করো (৩২) এবং তাকে আমার কাজে শরীক করে দাও, (৩৩) যাতে আমরা খুব বেশী করে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করতে পারি, (৩৪) এবং খুব বেশী করে তোমার চর্চা করি। (৩৫) তুমি সব সময় আমাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক।” (৩৬) বললেন, “হে মূসা! তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেয়া হলো। (৩৭) আমি আর একবার তোমার প্রতি অনুগ্রহ করলাম। (৩৮) সে সময়ের কথা মনে করো যখন আমি তোমার মাকে ইশারা করেছিলাম, এমন ইশারা যা অহীর মাধ্যমে করা হয়, (৩৯) এই মর্মে যে, এ শিশুকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং সিন্দুকটি দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, দরিয়া তাকে তীরে নিক্ষেপ করবে এবং আমার শত্রু ও এ শিশুর শত্রু একে তুলে নেবে। আমি নিজের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করেছিলাম এবং এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও। (৪০) স্মরণ করো, যখন তোমার বোন চলছিল, তারপর গিয়ে বললো, “আমি কি তোমাদের তার সন্ধান দেবো, যে এ শিশুকে ভালোভাবে লালন করবে?” এভাবে আমি তোমাকে আবার তোমার মায়ের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি, যাতে তার চোখ শীতল থাকে এবং সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়। এবং (এটাও স্মরণ করো) তুমি একজনকে হত্যা করে ফেলেছিলে, আমি তোমাকে এ ফাঁদ থেকে বের করেছি এবং তোমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিয়ে এসেছি, আর তুমি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে কয়েক বছর অবস্থান করেছিলে। তারপর এখন তুমি ঠিক সময়েই এসে গেছো। হে মূসা! (৪১) আমি তোমার নিজের জন্য তৈরী করে নিয়েছি। (৪২) যাও, তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনগুলোসহ এবং দেখো আমার স্মরণে ভুল করো না। (৪৩) যাও, তোমরা দু’জন ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে। (৪৪) তার সাথে কোমলভাবে কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীত হবে।” (৪৫) উভয়েই বললো, “হে আমাদের রব! আমাদের ভয় হয়, সে আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে অথবা আমাদের ওপর চড়াও হবে।” (৪৬) বললেন, “ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, সবকিছু শুনছি ও দেখছি। (৪৭) যাও তার কাছে এবং বলো, আমরা তোমার রবের প্রেরিত, বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না। আমরা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি তোমার রবের নিদর্শন এবং শান্তি তার জন্য যে সঠিক পথ অনুসরণ করে। (৪৮) আমাদের অহীর সাহায্যে জানানো হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (৪৯) ফেরাউন বললো, “আচ্ছা, তাহলে তোমাদের দু’জনের রব কে হে মূসা?” (৫০) মূসা জবাব দিল, “আমাদের রব তিনি যিনি প্রত্যেক জিনিসকে তার আকৃতি দান করেছেন তারপর তাকে পথ নির্দেশ দিয়েছেন। (৫১) ফেরাউন বললো, “আর পূর্ববর্তী বংশধর যারা অতীত হয়ে গেছে তাদের তাহলে কি অবস্থা ছিল?” (৫২) মূসা বললো “সে জ্ঞান আমার রবের কাছে লিপিবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত আছে। আমার রব ভুলও করেন না, বিস্মৃতও হন না।” (৫৩) --তিনিই তোমাদের জন্য যমীনের বিছানা বিছিয়েছেন, তার মধ্যে তোমাদের চলার পথ তৈরী করেছেন এবং উপর থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর তার মাধ্যমে আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করি। (৫৪) খাও এবং তোমাদের পশুও চরাও। অবশ্যই এর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য বহু নিদর্শনাবলী। (৫৫) এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরই মধ্যে আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং এ থেকেই আবার তোমাদেরকে বের করবো। (৫৬) আমি ফেরাউনকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখালাম কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করতে থাকলো এবং মেনে নিল না। (৫৭) বলতে লাগলো, “হে মূসা! তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্য এসেছো যে, নিজের যাদুর জোরে আমাদের দেশ থেকে আমাদের বের করে দেবে? (৫৮) বেশ, আমরাও তোমার মোকাবিলায় অনুরূপ যাদু আনছি, ঠিক করো কবে এবং কোথায় মোকাবিলা করবে, আমরাও এ চুক্তির অন্যথা করবো না, তুমিও না। খোলা ময়দানে সামনে এসে যাও।” (৫৯) মূসা বললো, “উৎসবের দিন নির্ধারিত হলো এবং পূর্বাহ্নে লোকদেরকে জড়ো করা হবে। (৬০) ফেরাউন পেছনে ফিরে নিজের সমস্ত কলাকৌশল একত্র করলো এবং তারপর মোকাবিলায় এসে গেলো। (৬১) মূসা (যথা সময় প্রতিপক্ষ দলকে সম্বোধন করে) বললো, “দুর্ভাগ্যপীড়িতরা! আল্লাহর প্রতি অপবাদ দিয়ো না, অন্যথায় তিনি কঠিন আযাব দিয়ে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন। যে-ই মিথ্যা রটনা করেছে সে-ই ব্যর্থ হয়েছে।” (৬২) একথা শুনে তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়ে গেলো এবং তারা চুপিচুপি পরামর্শ করতে লাগলো। (৬৩) শেষ কিছু লোক বললো, “এরা দু’জন তো নিছক যাদুকর, নিজেদের যাদুর জোরে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে উৎখাত করা এবং তোমাদের আদর্শ জীবন যাপন পদ্ধতি ধ্বংস করে দেয়াই এদের উদ্দেশ্য। (৬৪) আজ নিজেদের সমস্ত কলাকৌশল একত্র করে নাও এবং একজোট হয়ে ময়দানে এসো। ব্যস, জেনে রাখো, আজকে যে প্রাধান্য লাভ করবে সেই জিতে গেছে।” (৬৫) যাদুকররা বললো,৩৯ “হে মূসা! তুমি নিক্ষেপ করবে, নাকি আমরাই আগে নিক্ষেপ করবো?” (৬৬) মূসা বললো, “না তোমরাই নিক্ষেপ করো।” অকস্মাৎ তাদের যাদুর প্রভাবে তাদের দড়িদড়া ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে বলে মূসার মনে হতে লাগলো (৬৭) এবং মূসার মনে ভীতির সঞ্চার হলো (৬৮) আমি বললাম, “ভয় পেয়ো না, তুমিই প্রাধান্য লাভ করবে। (৬) ছুঁড়ে দাও তোমার হাতে যা কিছু আছে, এখনি এদের সব বানোয়াট জিনিসগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে, এরা যা কিছু বানিয়ে এনেছে এতো যাদুকরের প্রতারণা এবং যাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন কখনো সফল হতে পারে না।” (৭০) শেষ পর্যন্ত এই হলো যে, সমস্ত যাদুকরকে সিজদাবনত করে দেয়া হলো এবং তারা বলে উঠলোঃ “আমরা মেনে নিলাম হারুন ও মূসার রবকে।” (৭১) ফেরাউন বললো, “তোমরা ঈমান আনলে, আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই? দেখছি, এ তোমাদের গুরু, এ-ই তোমাদের যাদুবিদ্যা শিখিয়েছিল। এখন আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কাটাচ্ছি এবং খেজুর গাছের কাণ্ডে তোমাদের শুলিবিদ্ধ করছি এরপর তোমরা জানতে পারবে আমাদের দু’জনের মধ্যে কার শাস্তি বেশী কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী।” (অর্থাৎ আমি না মূসা, কে তোমাদের বেশী কঠিন শাস্তি দিতে পারে) । (৭২) যাদুকররা জবাব দিল, “সেই সত্তার কসম! যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, উজ্জ্বল সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সামনে এসে যাওয়ার পরও আমরা (সত্যের ওপর) তোমাকে প্রাধান্য দেবো, এটা কখনো হতে পারে না। তুমি যা কিছু করতে চাও করো। তুমি বড়জোর এ দুনিয়ার জীবনের ফায়সালা করতে পারো। (৭৩) আমরা তো তোমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে দেন এবং এ যাদু বৃত্তিকেও ক্ষমা করে দেন, যা করতে তুমি আমাদের বাধ্য করেছিলে। আল্লাহই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই স্থায়িত্ব লাভকারী।” (৭৪) --প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি অপরাধী হয়ে নিজের রবের সামনে হাযির হবে তার জন্য আছে জাহান্নাম, যার মধ্যে সে না জীবিত থাকবে, না মরবে। (৭৫) আর যারা তার সামনে মু’মিন হিসেবে সৎকাজ করে হাযির হবে তাদের জন্য রয়েছে সুমহান মর্যাদা, (৭৬) চির হরিৎ উদ্যান, যার পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদী, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এ হচ্ছে পুরস্কার সেই ব্যক্তির যে পবিত্রতা অবলম্বন করে। (৭৭) আমি মূসার কাছে অহী পাঠালাম যে, এবার রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে পড়ো এবং তাদের জন্য সাগরের বুকে শুকনা সড়ক বানিয়ে নাও। কেউ তোমাদের পিছু নেয় কিনা সে ব্যাপারে একটুও ভয় করো না এবং (সাগরের মাঝখান দিয়ে পার হতে গিয়ে) শংকিত হয়ো না। (৭৮) পিছন থেকে ফেরাউন তার সেনাবাহিনী নিয়ে পৌঁছলো এবং তৎক্ষণাত সমুদ্র তাদের উপর ছেয়ে গেলো যেমন ছেয়ে যাওয়া সমীচীন ছিল। (৭৯) ফেরাউন তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করেছিল, কোন সঠিক পথ দেখায়নি। (৮০) হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি এবং তূরের ডান পাশে তোমাদের উপস্থিতির জন্য সময় নির্ধারণ করেছি আর তোমাদের প্রতি মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করেছি (৮১) --খাও আমার দেওয়া পবিত্র রিযিক এবং তা খেয়ে সীমালংঘন করো না, অন্যথায় তোমাদের ওপর আমার গযব আপতিত হবে। আর যার ওপর আমার গযব আপতিত হয়েছে তার পতন অবধারিত। (৮২) তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তারপর সোজা-সঠিক পথে চলতে থাকে তার জন্য আমি অনেক বেশী ক্ষমাশীল। (৮৩) আর কোন জিনিসটি তোমাকে তোমার সম্প্রদায়ের আগে নিয়ে এলো হে মূসা” (৮৪) সে বললো, “তারা তো ব্যস আমার পেছনে এসেই যাচ্ছে। আমি দ্রুত তোমার সামনে এসে গেছি, হে আমার রব! যাতে তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও।” (৮৫) তিনি বললেন, “ভালো কথা, তাহলে শোনো, আমি তোমার পেছনে তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছি এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে।” (৮৬) ভীষণ ক্রোধ ও মর্মজ্বালা নিয়ে মূসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলো। সে বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমাদের রব কি তোমাদের সাথে ভালো ভালো ওয়াদা করেননি? তোমাদের কি দিনগুলো দীর্ঘতর মনে হয়েছে? অথবা তোমরা নিজেদের রবের গযবই নিজেদের ওপর আনতে চাচ্ছিলে, যে কারণে তোমরা আমার সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করলে? (৮৭) তারা জবাব দিল, “আমারা স্বেচ্ছায় আপনার সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করিনি। ব্যাপার হলো, লোকদের অলংকারের বোঝায় আমরা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম এবং আমরা স্রেফ সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।” -তারপর এভাবে সামেরীও কিছু ছুঁড়ে ফেললো। (৮৮) এবং তাদের জন্য একটি বাছুরের মূর্তি বানিয়ে নিয়ে এলো, যার মধ্য থেকে গরুর মতো আওয়াজ বের হতো। লোকেরা বলে উঠলো, “এ-ই তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, মূসা একে ভুলে গিয়েছে।” (৮৯) তারা কি দেখছিল না যে, সে তাদের কথারও জবাব দেয় না এবং তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোন ক্ষমতাও রাখে না? (৯০) (মূসার আসার) আগেই হারুন তাদের বলেছিল, “হে লোকেরা! এর কারণে তোমরা পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়েছো। তোমাদের রব তো করুণাময়, কাজেই তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার কথা মেনে নাও।” (৯১) কিন্তু তারা তাকে বলে দিল, “মূসার না আসা পর্যন্ত আমরা তো এরই পূজা করতে থাকবো।” (৯২) মূসা (তার সম্প্রদায়কে ধমকাবার পর হারুনের দিকে ফিরে) বললো, “হে হারুন! তুমি যখন দেখলে এরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন আমার পথে চলা থেকে কিসে তোমাকে বিরত রেখেছিল? (৯৩) তুমি কি আমার হুকুম অমান্য করেছো? (৯৪) হারুন জবাব দিল, “হে আমার সহোদর ভাই! আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরে টেনো না। আমার আশঙ্কা ছিল, তুমি এসে বলবে যে, তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছো এবং আমার কথা রক্ষা করোনি।” (৯৫) মূসা বললো, “আর হে সামেরী তোমার কি ব্যাপার? (৯৬) সে জবাব দিল, “আমি এমন জিনিস দেখেছি যা এরা দেখেনি, কাজেই আমি রসূলের পদাংক থেকে এক মুঠো তুলে নিয়েছি এবং তা নিক্ষেপ করেছি, আমার মন আমাকে এমনি ধারাই কিছু বুঝিয়েছে। (৯৭) মূসা বললো, “বেশ, তুই দুর হয়ে যা, এখন জীবনভর তুই শুধু একথাই বলতে থাকবি, আমাকে ছুঁয়ো না। আর তোর জন্য জবাবদিহির একটি সময় নির্ধারিত রয়েছে যা কখনোই তোর থেকে দূরে সরে যাবে না। আর দেখ, তোর এই ইলাহর প্রতি, যার পূজায় তুই মত্ত ছিলি, এখন আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেবো এবং তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেবো। (৯৮) হে লোকেরা! এক আল্লাহই তোমাদের ইলাহ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, প্রত্যেক জিনিসের ওপর তাঁর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত। (৯৯) হে মুহাম্মাদ! এভাবে আমি অতীতে যা ঘটে গেছে তার অবস্থা তোমাকে শুনাই এবং আমি বিশেষ করে নিজের কাছ থেকে তোমাকে একটি ‘যিকির’(উপদেশমালা) দান করেছি। (১০০) যে ব্যক্তি এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে কিয়ামতের দিন কঠিন গোনাহের বোঝা উঠাবে। (১০১) আর এ ধরনের লোকেরা চিরকাল এ দুর্ভাগ্য পীড়িত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য (এই অপরাধের দায়ভার) বড়ই কষ্টকর বোঝা হবে।

 সুরহ আমবিইয়াঃ 


(৪৮) পূর্বে আমি মূসা ও হারুনকে দিয়েছিলাম ফুরকান, জ্যোতি ও ‘যিকির’ এমনসব মুত্তাকীদের কল্যাণার্থে (৪৯) যারা না দেখে তাদের রবকে ভয় করে এবং যারা (হিসেবে-নিকেশের) সে সময়ের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। (৫০) আর এখন এ বরকত সম্পন্ন “যিকির” আমি (তোমাদের জন্য) নাযিল করেছি। তবুও কি তোমরা একে মেনে নিতে অস্বীকার করো?

সুরহ মুউমিনুনঃ

(৪৪) তারপর আমি একের পর এক নিজের রসূল পাঠিয়েছি। যে জাতির কাছেই তার রসূল এসেছে সে-ই তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, আর আমি একেরপর এক জাতিকে ধ্বংস করে গেছি এমনকি তাদেরকে স্রেফ কাহিনীই বানিয়ে ছেড়েছি,--অভিসম্পাত তাদের প্রতি যারা ঈমান আনে না। (৪৫) তারপর আমি মূসা ও তার ভাই হারুনকে নিজের নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে ফেরাউন ও তার রাজ পারিষদদের কাছে পাঠালাম।  (৪৬) কিন্তু তারা অহংকার করলো এবং তারা ছিল বড়ই আস্ফালনকারী। (৪৭) তারা বলতে লাগলো, “আমরা কি আমাদেরই মতো দু’জন লোকের প্রতি ঈমান আনবো? আর তারা আবার এমন লোক যাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস।” (৪৮) কাজেই তারা উভয়কে প্রত্যাখ্যান করলো এবং ধ্বংসপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হলো। (৪৯) আর মুসাকে আমি কিতাব দান করেছি যাতে লোকেরা তার সাহায্যে পথের দিশা পায়।

সুরহ ফুরকনঃ

(৩৫) আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তাঁর সাথে তাঁর ভাই হারুনকে সাহায্যকারী হিসেবে লাগিয়েছিলাম (৩৬) আর তাদের বলেছিলাম, যাও সেই সম্প্রদায়ের কাছে যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের আমি ধ্বংস করে দিলাম।

সুরহ আশ শুআরহঃ

(১০) তাদেরকে সে সময়ের কথা শুনাও যখন তোমার রব মূসাকে ডেকে বলেছিলেন, “জালেম সম্প্রদায়ের কাছে যাও- (১১) ফেরাউনের সম্প্রদায়ের কাছে  --- তারা কি ভয় করে না?” (১২) সে বললো, “হে আমার রব! আমার ভয় হয় তারা আমাকে মিথ্যা বলবে, (১৩) আমার বক্ষ সংকুচিত হচ্ছে এবং আমার জিহ্বা সঞ্চালিত হচ্ছে না। আপনি হারুনের প্রতি রিসালাত পাঠান। (১৪) আর আমার বিরুদ্ধে তো তাদের একটি অভিযোগও আছে। তাই আমার আশঙ্কা হয় তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে।” (১৫) আল্লাহ্ বললেন, “কখখনো না, তোমরা দু’জন যাও আমার নিদর্শনগুলো নিয়ে, আমি তোমাদের সাথে সবকিছু শুনতে থাকবো। (১৬) ফেরাউনের কাছে যাও এবং তাকে বলো, রব্বুল আলামীন আমাদের পাঠিয়েছেন, (১৭) যাতে তুমি বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দাও সে জন্য।” (১৮) ফেরাউন বললো, “আমরা কি তোমাকে আমাদের এখানে প্রতিপালন করিনি যখন ছোট্ট শিশুটি ছিলে? বেশ ক’টি বছর আমাদের এখানে কাটিয়েছো, (১৯) এবং তারপর তুমি যে কর্মটি করেছ তাতো করেছোই; তুমি বড়ই অকৃতজ্ঞ।” (২০) মূসা জবাব দিল, “সে সময় অজ্ঞতার মধ্যে আমি সে কাজ করেছিলাম। (২১) তারপর তোমাদের ভয়ে আমি পালিয়ে গেলাম। এরপর আমার রব আমাকে “হুকুম” দান করলেন এবং আমাকে রসূলদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন। (২২) আর তোমার অনুগ্রহের কথা যা তুমি আমার প্রতি দেখিয়েছো, তার আসল কথা হচ্ছে এই যে, তুমি বনী ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করেছিলে।”  (২৩) ফেরাউন বললো, “রব্বুল আলামীন আবার কে?” (২৪) মূসা জবাব দিল, “আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রব এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে যা কিছু আছে তাদেরও রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপনকারী হও।” (২৫) ফেরাউন তার আশপাশের লোকদের বললো, “তোমরা শুনছো তো?” (২৬) মূসা বললো, “তোমাদেরও রব এবং তোমাদের বাপ-দাদাদেরও রব যারা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।” (২৭) ফেরাউন (উপস্থিত লোকদের) বললো, “তোমাদের কাছে প্রেরিত তোমাদের এ রসূল সাহেবটি তো দেখছি একেবারেই পাগল।” (২৮) মূসা বললো, “পূর্ব ও পশ্চিম এবং যা কিছু তার মাঝখানে আছে সবার রব, যদি তোমরা কিছু বুদ্ধি-জ্ঞানের অধিকারী হতে।” (২৯) ফেরাউন বললো, “যদি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে মেনে নাও, তাহলে কারাগারে যারা পচে মরছে তোমাকেও তাদের দলে ভিড়িয়ে দেবো।” (৩০) মূসা বললো, “আমি যদি তোমার সামনে একটি সুস্পষ্ট জিনিস আনি তবুও?" (৩১) ফেরাউন বললো, “বেশ তুমি আনো যদি তুমি সত্যবাদী হও।” (৩২) (তার মুখ থেকে একথা বের হতেই) মূসা নিজের লাঠিটি ছুঁড়ে মারলো। তৎক্ষনাৎ সেটি হলো একটি সাক্ষাত অজগর। (৩৩) তারপর সে নিজের হাত (বগলের ভেতর থেকে) টেনে বের করলো এবং তা সকল প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে চকমক্ করছিল। (৩৪) ফেরাউন তার চারপাশে উপস্থিত সরদারদেরকে বললো, “এ ব্যক্তি নিশ্চয়ই একজন দক্ষ যাদুকর। (৩৫) নিজের যাদুর জোরে সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এখন বলো তোমরা কী হুকুম দিচ্ছো?” (৩৬) তারা বললো, “তাঁকে ও তাঁর ভাইকে আটক করো এবং শহরে শহরে হরকরা পাঠাও। (৩৭) তারা প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে তোমার কাছে নিয়ে আসুক।” (৩৮) তাই একদিন নির্দিষ্ট সময়ে যাদুকরদেরকে একত্র করা হলো। (৩৯) এবং লোকদেরকে বলা হলো, “তোমরাও কি সমাবেশে যাবে? (৪০) হয়তো আমরা যাদুকরদের ধর্মের অনুসরণের ওপরই বহাল থাকবো, যদি তারা বিজয়ী হয়।” (৪১) যখন যাদুকররা ময়দানে এলো, তারা ফেরাউনকে বললো, “আমরা কি পুরস্কার পাবো, যদি আমরা বিজয়ী হই?” (৪২) সে বললো, “হ্যাঁ,, আর তোমরা তো সে সময় নিকটবর্তীদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে।” (৪৩) মূসা বললো, “তোমাদের যা নিক্ষেপ করার আছে নিক্ষেপ কর।” (৪৪) তারা তখনই নিজেদের দড়িদড়া ও লাঠিসোঁটা নিক্ষেপ করলো এবং বললো, “ফেরাউনের ইজ্জতের কসম, আমরাই বিজয়ী হবো।” (৪৫) তারপর মূসা নিজের লাঠিটি নিক্ষেপ করলো। অকস্মাত সে তাদের কৃত্রিম কীর্তিগুলো গ্রাস করতে থাকলো। (৪৬) তখন সকল যাদুকর স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিজদাবনত হয়ে পড়লো (৪৭) এবং বলে উঠলো, “মেনে নিলাম আমরা রব্বুল আলামীনকে--- (৪৮) -মূসা ও হারুনের রবকে।” (৪৯) ফেরাউন বললো, “তোমরা মূসার কথা মেনে নিলে আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই! নিশ্চয়ই এ তোমাদের প্রধান, যে তোমাদের যাদু শিখিয়েছে। বেশ, এখনই তোমরা জানবে। আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কর্তন করাবো এবং তোমাদের সবাইকে শূলবিদ্ধ করবো।” (৫০) তারা বলল, “কোন পরোয়া নেই, আমরা নিজেদের রবের কাছে পৌঁছে যাবো। (৫১) আর আমরা আশা করি আমাদের রব আমাদের গোনাহ্ মাফ করে দেবেন, কেননা, সবার আগে আমরা ঈমান এনেছি।” (৫২) আমি মূসার কাছে ওহী পাঠিয়েছি এই মর্মেঃ “রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে যাও, তোমাদের পিছু নেয়া হবে।” (৫৩) এর ফলে ফেরাউন (সৈন্য একত্র করার জন্য) নগরে নগরে নকীব পাঠালো (এবং বলে পাঠালোঃ) (৫৪) এরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক, (৫৫) এরা আমাদের নারাজ করেছে (৫৬) এবং আমরা একটি দল, সদা-সতর্ক থাকাই আমাদের রীতি।” (৫৭) এভাবে আমি তাদেরকে বের করে এনেছি তাদের বাগ-বাগীচা, নদী-নির্ঝরিনী, (৫৮) ধন-ভাণ্ডার ও সুরম্য আবাসগৃহসমূহ থেকে। (৫৯) এসব ঘটেছে তাদের সাথে আর (অন্যদিকে) আমি বনী ইসরাঈলকে ঐ সব জিনিসের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছি। (৬০) সকাল হতেই তারা এদের পিছু নিয়ে বের হয়ে পড়লো। (৬১) দু’দল যখন পরস্পরকে দেখতে পেলো তখন মূসার সাথীরা চিৎকার করে উঠলো, “আমরা তো পাকড়াও হয়ে গেলাম।” (৬২) মূসা বললো, “কখখনো না, আমার সাথে আছেন আমার রব, তিনি নিশ্চয়ই আমাকে পথ দেখাবেন।” (৬৩) আমি মূসাকে ওহীর মাধ্যমে হুকুম দিলাম, “মারো তোমার লাঠি সাগরের বুকে।” সহসাই সাগর দীর্ণ হয়ে গেলো এবং তার প্রত্যেকটি টুকরা হয়ে গেলো এক একটি বিশাল পাহাড়ের মতো। (৬৪) এ জায়গায়ই আমি দ্বিতীয় দলটিকেও নিকটে আনলাম। (৬৫) মূসা ও তাঁর সমস্ত লোককে যারা তার সঙ্গে ছিল আমি উদ্ধার করলাম (৬৬) এবং অন্যদেরকে ডুবিয়ে দিলাম। (৬৭) এ ঘটনার মধ্যে আছে একটি নিদর্শন। কিন্তু এদের অধিকাংশ মান্যকারী নয়। (৬৮) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালীও আবার দয়াময়ও।

সুরহ নামালঃ

(৭) (তাদেরকে সেই সময়ের কথা শুনাও) যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললো “আমি আগুনের মতো একটা বস্তু দেখেছি। এখনি আমি সেখান থেকে কোন খবর আনবো অথবা খুঁজে আনবো কোন অংগার, যাতে তোমরা উষ্ণতা লাভ করতে পারো।” (৮) সেখানে পৌঁছবার পর আওয়াজ এলো “ধন্য সেই সত্তা যে এ আগুনের মধ্যে এবং এর চারপাশে রয়েছে, পাক-পবিত্র আল্লাহ‌ সকল বিশ্ববাসীর প্রতিপালক। (৯) হে মূসা, এ আর কিছু নয়, স্বয়ং আমি আল্লাহ, পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী (১০) এবং তুমি তোমার লাঠিটি একটু ছুঁড়ে দাও।” যখনই মূসা দেখলো লাঠি সাপের মত মোচড় খাচ্ছে তখনই পেছন ফিরে ছুটতে লাগলো এবং পেছন দিকে ফিরেও দেখলো না। “হে মূসা! ভয় পেয়ো না, আমার সামনে রসূলরা ভয় পায় না। (১১) তবে হ্যাঁ, যদি কেউ ভুল-ত্রুটি করে বসে। তারপর যদি সে দুষ্কৃতির পরে সুকৃতি দিয়ে (নিজের কাজ) পরিবর্তিত করে নেয় তাহলে আমি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (১২) আর তোমার হাতটি একটু তোমার বক্ষস্থলের মধ্যে ঢুকাও তো, তা উজ্জ্বল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই। এ (দু’টি নিদর্শন) ন’টি নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত ফেরাউন ও তার জাতির কাছে (নিয়ে যাবার জন্য) তারা বড়ই বদকার।” (১৩) কিন্তু যখন আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের সামনে এসে গেলো তখন তারা বলল, এতো সুস্পষ্ট যাদু। (১৪) তারা একেবারেই অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্যের সাথে সেই নিদর্শনগুলো অস্বীকার করলো অথচ তাদের মন মগজ সেগুলোর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল। এখন এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল দেখে নাও। 

সুরহ কসসঃ

(৩) আমি মূসা ও ফেরাউনের কিছু যথাযথ বৃত্তান্ত তোমাকে শুনাচ্ছি এমনসব লোকদের সুবিধার্থে যারা ঈমান আনে। (৪) প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ফেরাউন পৃথিবীতে বিদ্রোহ করে এবং তার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়। তাদের মধ্য থেকে একটি দলকে সে লাঞ্ছিত করতো, তাদের ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো। আসলে সে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (৫) আমি সংকল্প করেছিলাম, যাদেরকে পৃথিবীতে লাঞ্ছিত করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবো, তাদেরকে নেতৃত্ব দান করবো, তাদেরকেই উত্তরাধিকারী করবো, (৬) পৃথিবীতে তাদেরকে কর্তৃত্ব দান করবো। এবং তাদের থেকে ফেরাউন, হামান ও তার সৈন্যদেরকে সে সবকিছুই দেখিয়ে দেবো, যার আশঙ্কা তারা করতো। (৭) আমি মূসার মাকে ইশারা করলাম, “একে স্তন্যদান করো, তারপর যখন এর প্রাণের ভয় করবে তখন একে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেবে এবং কোন ভয় ও দুঃখ করবে না, তাঁকে তোমারই কাছে ফিরিয়ে আনবো এবং তাঁকে রসূলদের অন্তর্ভুক্ত করবো।” (৮) শেষ পর্যন্ত ফেরাউনের পরিবারবর্গ তাকে (দরিয়া থেকে) উঠিয়ে নিল, যাতে সে তাদের শত্রু এবং তাদের দুঃখের কারণ হয়। যথার্থই ফেরাউন, হামান ও তার সৈন্যরা (তাদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে) ছিল বড়ই অপরাধী। (৯) ফেরাউনের স্ত্রী (তাকে) বললো, “এ শিশুটি আমার ও তোমার চোখ জুড়িয়েছে। কাজেই একে হত্যা করো না, বিচিত্র কি সে আমাদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হতে পারে অথবা আমরা তাঁকে সন্তান হিসেবেই গ্রহণ করতে পারি।” আর তারা (এর পরিণাম) জানতো না। (১০) ওদিকে মূসার মায়ের মন অস্থির হয়ে পড়েছিল। সে তার রহস্য প্রকাশ করে দিতো যদি আমি তার মন সুদৃঢ় না করে দিতাম, যাতে সে (আমার অঙ্গীকারের প্রতি) বিশ্বাস স্থাপনকারীদের একজন হয়। (১১) সে শিশুর বোনকে বললো, এর পিছনে পিছনে যাও। কাজেই সে তাদের (শত্রুদের) অজ্ঞাতসারে তাকে দেখতে থাকলো। (১২) আর আমি পূর্বেই শিশুর জন্য স্তন্য দানকারিনীদের স্তন পান হারাম করে রেখেছিলাম। (এ অবস্থা দেখে) সে মেয়েটি তাদেরকে বললো, “আমি তোমাদের এমন পরিবারের সন্ধান দেবো যারা এর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবে এবং এর কল্যাণকামী হবে?” (১৩) এভাবে আমি মূসাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনলাম, যাতে তার চোখ শীতল হয়, সে দুঃখ ভারাক্রান্ত না হয় এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য বলে জেনে নেয়। কিন্তু অধিকাংশ লোক একথা জানে না। (১৪) মূসা যখন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছে গেলো এবং তার বিকাশ পূর্ণতা লাভ করলো তখন আমি তাকে হুকুম ও জ্ঞান দান করলাম, সৎলোকদেরকে আমি এ ধরণেরই প্রতিদান দিয়ে থাকি। (১৫) (একদিন) সে শহরে এমন সময় প্রবেশ করলো যখন শহরবাসীরা উদাসীন ছিল। সেখানে সে দেখলো দু'জন লোক লড়াই করছে। একজন তার নিজের সম্প্রদায়ের এবং অন্যজন তার শত্রুসম্প্রদায়ের। তার সম্প্রদায়ের লোকটি শত্রুসম্প্রদায়ের লোকটির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার জন্য ডাক দিল। মূসা তাকে একটি ঘুষি মারলো এবং তাকে মেরে ফেললো। (এ কাণ্ড ঘটে যেতেই) মূসা বললো, “এটা শয়তানের কাজ, সে ভয়ংকর শত্রুএবং প্রকাশ্য পথভ্রষ্টকারী।” (১৬) তারপর সে বলতে লাগলো, “হে আমার রব! আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও? “ তখন আল্লাহ‌ তাঁকে ক্ষমা করে দিলেন তিনি ক্ষমাশীল মেহেরবান। (১৭) মূসা শপথ করলো, “হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি এই যে অনুগ্রহ করেছো এরপর আমি আর অপরাধীদের সাহায্যকারী হবো না।” (১৮) দ্বিতীয় দিন অতি প্রত্যুষে সে ভয়ে ভয়ে এবং সর্বদিক থেকে বিপদের আশঙ্কা করতে করতে শহরের মধ্যে চলছিল। সহসা দেখলো কি, সেই ব্যক্তি যে গতকাল সাহায্যের জন্য তাকে ডেকেছিল আজ আবার তাকে ডাকছে। মূসা বললো, “তুমি তো দেখছি স্পষ্টতই বিভ্রান্ত।” (১৯) তারপর মূসা যখন শত্রু সম্প্রদায়ের লোকটিকে আক্রমণ করতে চাইলো তখন সে চিৎকার করে উঠলো, “হে মূসা! তুমি কি আজকে আমাকে ঠিক তেমনিভাবে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছো যেভাবে গতকাল একজনকে হত্যা করেছিলে? তুমি তো দেখছি এদেশে স্বেচ্ছাচারী হয়ে থাকতে চাও, সংস্কারক হতে চাও না?” (২০) এরপর এক ব্যক্তি নগরীর দূর প্রান্ত থেকে ছুটে এলো এবং বললো, “হে মূসা! সরদারদের মধ্যে তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ চলছে। এখান থেকে বের হয়ে যাও। আমি তোমার মঙ্গলাকাংখী।” (২১) এ খবর শুনতেই মূসা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো এবং সে দোয়া করলো, “হে আমার রব! আমাকে জালেমদের হাত থেকে বাঁচাও।” (২২) (মিসর থেকে বের হয়ে) যখন মূসা মাদয়ানের দিকে রওয়ানা হলো তখন সে বললো, “আশা করি আমার রব আমাকে সঠিক পথে চালিত করবেন।” (২৩) আর যখন সে মাদয়ানের কুয়ার কাছে পৌঁছল, সে দেখলো, অনেক লোক তাদের পশুদের পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে একদিকে দু’টি মেয়ে নিজেদের পশুগুলো আগলে রাখছে। মূসা মেয়ে দু’টিকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের সমস্যা কি?” তারা বললো, “আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ না এ রাখালেরা তাদের জানোয়ারগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়, আর আমাদের পিতা একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি।” (২৪) একথা শুনে মূসা তাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করিয়ে দিল। তারপর সে একটি ছায়ায় গিয়ে বসলো এবং বললো, “হে আমার প্রতিপালক! যে কল্যাণই তুমি আমার প্রতি নাযিল করবে আমি তার মুখাপেক্ষী।” (২৫) (বেশিক্ষণ অতিবাহিত হয়নি এমন সময়) ঐ দু’টি মেয়ের মধ্য থেকে একজন লজ্জাজড়িত পদ বিক্ষেপে তার কাছে এলো এবং বলতে লাগলো, “আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, আপনি আমাদের জানোয়ারগুলোকে যে পানি পান করিয়েছেন আপনাকে তার পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য।” মূসা যখন তার কাছে পৌঁছল এবং নিজের সমস্ত কাহিনী তাকে শুনালো তখন সে বললো, “ভয় করো না, এখন তুমি জালেমদের হাত থেকে বেঁচে গেছো।” (২৬) মেয়ে দু'জনের একজন তার পিতাকে বললো, “আব্বাজান! একে চাকরিতে নিয়োগ করো, কর্মচারী হিসেবে ব্যক্তিই উত্তম হতে পারে যে বলশালী ও আমানতদার।” (২৭) তার পিতা (মূসাকে) বললো, ) “আমি আমার এ দু’মেয়ের মধ্য থেকে একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই। শর্ত হচ্ছে, তোমাকে আট বছর আমার এখানে চাকরি করতে হবে। আর যদি দশ বছর পুরো করে দাও, তাহলে তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমার ওপর কড়াকড়ি করতে চাই না। তুমি ইনশাআল্লাহ আমাকে সৎলোক হিসেবেই পাবে। (২৮) মূসা জবাব দিল, “আমার ও আপনার মধ্যে একথা স্থিরীকৃত হয়ে গেলো, এ দু’টি মেয়াদের মধ্য থেকে যেটাই আমি পূরণ করে দেবো তারপর আমার ওপর যেন কোন চাপ দেয়া না হয়। আর যা কিছু দাবী ও অঙ্গীকার আমরা করছি আল্লাহ‌ তার তত্বাবধায়ক।” (২৯) মূসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করে দিল। এবং নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে চললো তখন তূর পাহাড়ের দিক থেকে একটি আগুন দেখতে পেলো। সে তার পরিবারবর্গকে বললো, “থামো! আমি একটি আগুন দেখছি, হয়তো আমি সেখান থেকে কোন খবর আনতে পারি অথবা সেই আগুন থেকে কোন অংগারই নিয়ে আসতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পারো।” (৩০) সেখানে পৌঁছার পর উপত্যকার ডান কিনারায় পবিত্র ভূখণ্ডে একটি বৃক্ষ থেকে আহ্বান এলো, “হে মূসা! আমিই আল্লাহ, সমগ্র বিশ্বের অধিপতি।” (৩১) আর (হুকুম দেয়া হলো) ছুঁড়ে দাও তোমার লাঠিটি। যখনই মূসা দেখলো লাঠিটি সাপের মতো মোচড় খাচ্ছে তখনই সে পেছন ফিরে ছুটতে লাগলো এবং একবার ফিরেও তাকালো না। বলা হলো, “হে মূসা! ফিরে এসো এবং ভয় করো না, তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। (৩২) তোমার হাত বগলে রাখো উজ্জল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার কষ্ট ছাড়াই। এবং ভীতিমুক্ত হবার জন্য নিজের হাত দু’টি চেপে ধরো। এ দু’টি উজ্জল নিদর্শন তোমার রবের পক্ষ থেকে ফেরাউন ও তার সভাসদদের সামনে পেশ করার জন্য, তারা বড়ই নাফরমান।” (৩৩) মূসা নিবেদন করলো, “হে আমার প্রভু! আমি যে তাদের একজন লোককে হত্যা করে ফেলেছি, ভয় হচ্ছে, তারা আমাকে মেরে ফেলবে। (৩৪) আর আমার ভাই হারূন আমার চেয় বেশী বাকপটু, তাকে সাহায্যকারী হিসেবে আমার সাথে পাঠাও, যাতে সে আমাকে সমর্থন দেয়, আমার ভয় হচ্ছে, তারা আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে।” (৩৫) বললেন, তোমার ভাইয়ের সাহায্যে আমি তোমার শক্তি বৃদ্ধি করবো এবং তোমাদের দু’জনকে এমনই প্রতিপত্তি দান করবো যে, তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আমার নিদর্শনগুলোর জোরে তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরাই বিজয় লাভ করবে।” (৩৬) তারপর মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে পৌঁছলো তখন তারা বললো, এসব বানোয়াট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এসব কথা তো আমরা আমাদের বাপ দাদার কালে কখনো শুনিনি। (৩৭) মূসা জবাব দিল, “আমার রব তার অবস্থা ভালো জানেন, যে তার পক্ষ থেকে পথনির্দেশনা নিয়ে এসেছে এবং কার শেষ পরিণতি ভালো হবে তাও তিনিই ভালো জানেন, আসলে জালেম কখনো সফলকাম হয় না।” (৩৮) আর ফেরাউন বললো, “হে সভাসদবর্গ! তো আমি নিজেকে ছাড়া তোমাদের আর কোন প্রভু আছে বলে জানি না। ওহে হামান! আমার জন্য ইট পুড়িয়ে একটি উঁচু প্রাসাদ তৈরি করো, হয়তো তাতে উঠে আমি মূসার প্রভুকে দেখতে পাবো, আমিতো তাঁকে মিথ্যুক মনে করি।” (৩৯) সে এবং তার সৈন্যরা পৃথিবীতে কোন সত্য ছাড়াই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করলো এবং মনে করলো তাদের কখনো আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। (৪০) শেষে আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এখন এ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে দেখে নাও। (৪১) তাদেরকে আমি জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী নেতা করেছিলাম এবং কিয়ামতের দিন তারা কোথাও থেকে কোন সাহায্য লাভ করতে পারবে না। (৪২) এ দুনিয়ায় আমি তাদের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন তারা হবে বড়ই ঘৃণার্হ ও ধিকৃত। (৪৩) পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোকে ধ্বংস করার পর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম লোকদের জন্য আত্মজ্ঞান লাভের সহায়ক। পথনির্দেশনা ও রহমত হিসেবে, যাতে লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে। (৪৪) (হে মুহাম্মাদ!) তুমি সে সময় পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না। যখন আমি মূসাকে এ শরীয়াত দান করেছিলাম এবং তুমি সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না।  (৪৬) আর তুমি তূর পাহাড়ের পাশেও তখন উপস্থিত ছিলে না যখন আমি (মূসাকে প্রথমবার) ডেকেছিলাম। কিন্তু এটা তোমার রবের অনুগ্রহ (যার ফলে তোমাকে এসব তথ্য দেয়া হচ্ছে) যাতে তুমি তাদেরকে সতর্ক করো যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, হয়তো তারা সচেতন হয়ে যাবে। (৪৭) (আর আমি এজন্য করেছি যাতে) এমনটি যেন না হয় যে, তাদের নিজেদের কৃতকর্মের বদৌলতে কোন বিপদ তাদের ওপর এসে যায়, আর তারা বলে, “হে আমাদের রব! তুমি কেন আমাদের কাছে কোন রসূল পাঠাওনি? তাহলে তো আমরা তোমার আয়াত মেনে চলতাম এবং ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (৪৮) কিন্তু যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের কাছে পৌঁছে গেলো তখন তারা বলতে লাগলো, মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল কেন তাকে সেসব দেয়া হলো না? এর আগে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি? তারা বললো, “দু’টোই যাদু, যা একে অন্যকে সাহায্য করে।” আর বললো, “আমরা কোনটাই মানি না।” (৪৯) (হে নবী!) তাদেরকে বলো, “বেশ, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে আনো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব, যা এ দু’টির চাইতে বেশী হিদায়াতদানকারী হবে; আমি তারই অনুসরণ করবো।” (৫০) এখন যদি তারা তোমার এ দাবী পূর্ণ না করে, তাহলে জেনে রাখো, তারা আসলে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়াই নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে? আল্লাহ‌ এ ধরনের জালেমদেরকে কখনো হিদায়াত দান করেন না।

সুরহ আল আনকাবুতঃ

 
(৩৯) আর কারূন, ফেরাঊন ও হামানকে আমি ধ্বংস করি। মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসে কিন্তু তারা পৃথিবীতে অহংকার করে অথচ তারা অগ্রগমনকারী ছিল না। (৪০) শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে আমি তার গুনাহের জন্য পাকড়াও করি। তারপর তাদের মধ্য থেকে কারোর ওপর আমি পাথর বর্ষণকারী বাতাস প্রবাহিত করি এবং কাউকে একটি প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ আঘাত হানে আবার কাউকে আমি ভূগর্ভে প্রোথিত করি এবং কাউকে ডুবিয়ে দিই। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করছিল।

সুরহ সিজদাহঃ


(২৩) এর আগে আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, কাজেই সেই জিনিসই পাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। এ কিতাবকে আমি বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক করেছিলাম। (২৪) আর যখন তারা সবর করে এবং আমার আয়াতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করতে থাকে তখন তাদের মধ্যে এমন নেতা সৃষ্টি করে দেই যারা আমার হুকুম অনুসারে পথপ্রদর্শন করতো। (২৫) নিশ্চিতই তোমার রবই কিয়ামতের দিন সেসব কথার ফায়সালা করে দেবেন যেগুলোর ব্যাপারে তারা (বনী ইসরাঈল) পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত থেকেছে।

সুরহ সফফাতঃ

 
(১১৪) আমি অনুগ্রহ করেছি মূসা ও হারূনের প্রতি। (১১৫) তাঁদের উভয়কে ও তাঁদের জাতিকে উদ্ধার করেছি মহাক্লেশ থেকে। (১১৬) তাঁদেরকে সাহায্য করেছি, যার ফলে তাঁরাই বিজয়ী হয়েছে। (১১৭) তাঁদের উভয়কে অত্যন্ত সুস্পষ্ট কিতাব দান করেছি। (১১৮) উভয়কে সঠিক পথ দেখিয়েছি (১১৯) এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তাঁদের উভয়ের সম্পর্ক সুখ্যাতি অক্ষুণ্ন রেখেছি। (১২০) মূসা ও হারূনের প্রতি সালাম। (১২১) সৎকর্মশীলদের আমি অনুরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। (১২২) আসলে তাঁরা আমার মু’মিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সুরহ মুউমিনঃ

(২৩) আমি মূসাকে ফেরাউন, হামান ও কারূণের কাছে আমার নিদর্শনসমূহ এবং (২৪) আমার পক্ষ থেকে আদিষ্ট হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ সহ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বললোঃ জাদুকর, মিথ্যাবাদী। (২৫) অতঃপর যখন সে আমার পক্ষ থেকে সত্য এনে হাজির করলো তখন তারা বললো, যারা ঈমান এনে তার সাথে সামিল হয়েছে তাদের ছেলেদের হত্যা করো এবং মেয়েদের জীবিত রাখো। কিন্তু কাফেরদের চক্রান্ত ব্যর্থই হয়ে গেল। (২৬) একদিন ফেরাউন তার সভাসদদের বললোঃ আমাকে ছাড়ো, আমি এ মূসাকে হত্যা করবো। সে তার রবকে ডকে দেখুক। আমার আশঙ্কা হয়, সে তোমাদের দ্বীনকে পাল্টে দেবে কিংবা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।” (২৭) মূসা বললো, যেসব অহংকারী হিসেবের দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে না, তাদের প্রত্যেকের মোকাবিলায় আমি আমার ও তোমাদের রবের আশ্রয় গ্রহণ করেছি। (২৮) এ সময় ফেরাউনের দরবারের এক ব্যক্তি যে তার ঈমান গোপন রেখেছিলো- বললোঃ তোমরা কি এক ব্যক্তিকে শুধু এ কারণে হত্যা করবে যে, সে বলে, আল্লাহ‌ আমার রব? অথচ সে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। সে মিথাবাদী হয়ে থাকলে তার মিথ্যার দায়-দায়িত্ব তারই। কিন্তু সে যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে তাহলে যেসব ভয়ানক পরিণামের কথা সে বলছে তার কিছুটা তো অবশ্যই তোমাদের ওপর আসবে। আল্লাহ‌ কোন সীমালংঘনকারী মিথ্যাবাদী লোককে হিদায়াত দান করেন না। (২৯) হে আমার কওমের লোকেরা, আজ তোমরা বাদশাহীর অধিকারী এবং ভূ-ভাগের বিজয়ী শক্তি। কিন্তু আল্লাহর আযাব যদি আমাদের ওপর এসে পড়ে তাহলে আমাদেরকে সাহায্য করার মতো কে আছে? ফেরাউন বললো, আমি যা ভাল মনে করছি সে মতামতই তোমাদের সামনে পেশ করছি। আর আমি তোমাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনাই দিচ্ছি। (৩০) যে ব্যক্তি ঈমান এনেছিলো, বললোঃ হে আমার কওমের লোকেরা, আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের ওপরও সেদিনের মতো দিন এসে না যায়, যা এর আগে বহু দলের ওপর এসেছিলো।

সুরহ যুখরুফঃ

(৪৫) তোমার পূর্বে আমি যত রসূল পাঠিয়েছিলাম তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি উপাসনার জন্য রহমান খোদা ছাড়া আর কোন উপাস্য নির্দিষ্ট করেছিলাম কিনা? (৪৬) আমি মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহসহ ফেরাউন ও তার সভাসদদের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে গিয়ে তাদের বলেছিলোঃ আমি বিশ্ব-জাহানের রবের রসূল। (৪৭) অতঃপর সে যখন তাদের সামনে আমার নিদর্শনসমূহ পেশ করলো তখন তারা বিদ্রূপ করতে লাগলো। (৪৮) আমি তাদেরকে একের পর এক এমন সব নিদর্শন দেখাতে থাকলাম যা আগেরটার চেয়ে বড় হতো। আমি তাদেরকে আযাবের মধ্যে লিপ্ত করলাম যাতে তারা তাদের আচরণ থেকে বিরত থাকে। (৪৯) প্রত্যেক আযাবের সময় তারা বলতো, হে যাদুকর! তোমার রবের পক্ষ থেকে তুমি যে পদমর্যাদা লাভ করেছো তার ভিত্তিতে আমাদের জন্য তাঁর কাছে দোয়া করো। আমরা অবশ্যই সঠিক পথে এসে যাবো। (৫০) কিন্তু আমি যেই মাত্র তাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে দিতাম তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতো। (৫১) একদিন ফেরাউন তার কওমের মাঝে ঘোষণা করলোঃ হে জনগণ, মিসরের বাদশাহী কি আমার নয় এবং এসব নদী কি আমার অধীনে প্রবাহিত হচ্ছে না? তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না? (৫২) আমিই উত্তম না এই ব্যক্তি যে হীন ও নগণ্য এবং নিজের বক্তব্যও স্পষ্ট করে বর্ণনা করতে পারে না। (৫৩) তাঁর কাছে সোনার বালা কেন পাঠানো হলো না? অথবা তাঁর আরদালী হিসেবে একদল ফেরেশতা কেন আসলো না। (৫৪) সে তার জাতিকে হালকা ও গুরুত্বহীন মনে করেছে এবং তারাও তার আনুগত্য করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা ছিল ফাসেক। (৫৫) অবশেষে তারা যখন আমাকে ক্রোধান্বিত করলো তখন আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম, তাদের সবাইকে এক সাথে ডুবিয়ে মারলাম (৫৬) এবং পরবর্তীদের জন্য অগ্রবর্তী ও শিক্ষণীয় উদাহরণ বানিয়ে দিলাম।

সুরহ দুখনঃ

(১৭) আমি এর আগে ফেরাউনের কওমকেও এই পরীক্ষায় ফেলেছিলাম। তাদের কাছে একজন সম্ভ্রান্ত রসূল এসেছিলেন। (১৮) তিনি বললেনঃ আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার কাছে সোপর্দ করো। আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল। (১৯) আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না। আমি তোমাদের কাছে (আমার নিযুক্তির) স্পষ্ট সনদ পেশ করছি। (২০) তোমরা আমার ওপরে হামলা করে বসবে, এ ব্যাপার আমি আমার ও তোমাদের রবের আশ্রয় নিয়েছি। (২১) তোমরা যদি আমার কথা না মানো, তাহলে আমাকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকো।১৯ (২২) অবশেষে তিনি তাঁর রবকে ডেকে বললেন, এসব লোক অপরাধী। (২৩) (জবাব দেয়া হলো) বেশ তাহলে রাতের মধ্যেই আমার বান্দাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ো। তোমাদের পিছু ধাওয়া করা হবে। (২৪) সমুদ্রকে আপন অবস্থায় উন্মুক্ত থাকতে দাও। এই পুরো সেনাবাহিনী নিমজ্জিত হবে। (২৫) কত বাগ-বাগীচা, ঝর্ণাধারা, (২৬) ফসল ও জমকালো প্রাসাদ তারা ছেড়ে গিয়েছে। (২৭) তাদের পিছনে কত ভোগের উপকরণ পড়ে রইলো যা নিয়ে তারা ফুর্তিতে মেতে থাকতো। (২৮) এই হয়েছে তাদের পরিণাম। আমি অন্যদেরকে এসব জিনিসের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছি। (২৯) অতঃপর না আসমান তাদের জন্য কেঁদেছে না যমীন এবং সামান্যতম অবকাশও তাদের দেয়া হয়নি। (৩০) এভাবে আমি বন্দি বনী ইসরাঈলদের কঠিন অপমানজনক আযাব, ফেরাউন থেকে নাযাত দিয়েছিলাম। (৩১) সীমালংঘনকারীদের মধ্যে সে ছিল প্রকৃতই উচ্চ পর্যায়ের লোক। (৩২) তাদের অবস্থা জেনে শুনেই আমি দুনিয়ার অন্য সব জাতির ওপর তাদের অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। (৩৩) তাদেরকে এমন সব নিদর্শন দেখিয়েছিলাম যার মধ্যে সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল। (৩৪) এরা বলেঃ আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নেই। (৩৫) এরপর আমাদের পুনরায় আর উঠানো হবে না। (৩৬) “যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে আমাদের বাপ-দাদাদের জীবিত করে আনো।

সুরহ যারিইয়াতঃ

(৩৮) এছাড়া (তোমাদের জন্য নিদর্শন আছে) মূসার কাহিনীতে। আমি যখন তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের কাছে পাঠালাম (৩৯) তখন সে নিজের শক্তিমত্তার ওপর গর্ব প্রকাশ করলো এবং বললোঃ এ তো যাদুকর কিংবা পাগল। (৪০) অবশেষে আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সবাইকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। আর সে তিরস্কৃত ও নিন্দিত হলো।

সুরহ কমারঃ

(৪১) ফেরাউনের অনুসারীদের কাছেও সাবধান বাণীসমূহ এসেছিল। (৪২) কিন্তু তারা আমার সবগুলো নিদর্শনকে অস্বীকার করলো। অবশেষে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। যেভাবে কোন মহা-পরাক্রমশালী পাকড়াও করে। (৪৩) তোমাদের কাফেররা কি এ সব লোকদের চেয়ে কোন অংশে ভাল? নাকি আসমানী কিতাবসমূহে তোমাদের জন্য কোন ক্ষমা লিখিত আছে? (৪৪) না কি এসব লোক বলে, আমরা একটা সংঘবদ্ধ শক্তি। নিজেরাই নিজেদের রক্ষার ব্যবস্থা করবো। (৪৫) অচিরেই এ সংঘবদ্ধ শক্তি পরাজিত হবে এবং এদের সবাইকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালাতে দেখা যাবে। 

সুরহ সফঃ

৫) তোমরা মূসার সেই কথাটি স্মরণ করো যা তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন। “হে আমার কাওমের লোক, তোমরা কেন আমাকে কষ্ট দাও? অথচ তোমরা ভাল করেই জানো যে, আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর প্রেরিত রসূল। এরপর যেই তারা বাঁকা পথ ধরলো অমনি আল্লাহও তাদের দিল বাঁকা করে দিলেন। আল্লাহ‌ কাফেকদের হিদায়াত দান করেন না।

সুরহ তাহরিমঃ

১১) আর ঈমানদারদের ব্যাপারে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করছেন। যখন সে দোয়া করলো, হে আমার রব, আমার জন্য তোমার কাছে জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও। আমাকে ফেরাউন ও তার কাজকর্ম থেকে রক্ষা করো এবং জালেম কওমের হাত থেকে বাঁচাও।

সুরহ মুযযাম্মিলঃ

১৫) আমি তোমাদের নিকট একজন রসূল পাঠিয়েছি তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ যেমন ফেরাউনের নিকট একজন রসূল পাঠিয়ে ছিলাম। ১৬) দেখো, ফেরাউন যখন সে রসূলের কথা মানলো না তখন আমি তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলাম।

সুরহ নাযিআতঃ

(১৫) তোমার কাছে কি মূসার ঘটনার খবর পৌঁছেছে? (১৬) যখন তার রব তাকে পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় ডেকে বলেছিলেন, (১৭) “ফেরাউনের কাছে যাও, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে। (১৮) তাকে বলো, তোমার কি পবিত্রতা অবলম্বন করার আগ্রহ আছে (১৯) এবং তোমার রবের দিকে আমি তোমাকে পথ দেখাবো, তাহলে তোমার মধ্যে (তাঁর) ভয় জাগবে?” (২০) তারপর মূসা ফেরাউনের কাছে গিয়ে তাকে বড় নিদর্শন দেখালো। (২১) কিন্তু সে মিথ্যা মনে করে প্রত্যাখ্যান করলো ও অমান্য করলো, (২২) তারপর চালবাজী করার মতলবে পিছন ফিরলো। (২৩) এবং লোকদের জমায়েত করে তাদেরকে সম্বোধন করে বললোঃ (২৪) “আমি তোমাদের সবচেয়ে বড় রব” (২৫) অবশেষে আল্লাহ‌ তাকে আখেরাত ও দুনিয়ার আযাবে পাকড়াও করলেন। (২৬) আসলে এর মধ্যে রয়েছে মস্তবড় শিক্ষা, যে ভয় করে তার জন্যে।

সুরহ আলাঃ

(১৪) সে সফলকাম হয়েছে, যে পবিত্রতা অবলম্বন করেছে (১৫) এবং নিজের রবের নাম স্মরণ করেছে তারপর সলাহ পড়েছে। (১৬) কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো। (১৭) অথচ আখেরাত উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। (১৮) পূর্বে অবতীর্ণ সহীফাগুলোয় একথাই বলা হয়েছিল, (১৯) ইবরাহীম ও মূসার সহীফায়। 

  

Popular posts from this blog

কুরআন থেকে আমাদের স্রষ্টা এক আললাহ র আদেশ নিষেধের জ্ঞান অর্জন করে, বাস্তবায়ন করি

কুরআনই হাদিস

Salah